নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একাত্তরে যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই চব্বিশের অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে।
রোববার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টি উদ্যোগে ‘ভোটারধিকার প্রতিষ্ঠায় জুলাই অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি। কিন্তু গণতন্ত্রকে এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কাজেই এই মুহূর্তে প্রধান দাবি হলো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। জনগণ যে অধিকার চর্চা করতে পারেনি, তা ফিরিয়ে দেওয়া। সংস্কারের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। সেজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছিলাম, যা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ছিল। আমাদের চাইতে সুস্পষ্ট সংস্কারের প্রস্তাব আর কেউ দেয়নি। কিন্তু আমাদের সংস্কারের প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার যে চেষ্টা, তার কারণ আছে। কেউ কেউ সংগঠিত হওয়ার জন্য বেশি সময় চাইছেন। আবার কেউ কেউ জোট বাঁধার চেষ্টা করছেন। কিছুদিনে আগেও যারা একে অপরকে বেইমান, বিধর্মী বলে আখ্যায়িত করেছেন, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এইসব কারণে কি দেশের জনগণ নির্বাচনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার জন্য বিলম্ব করবে? আমরা বিশ্বাস করি যে দেশে ইতোমধ্যে নির্বাচন দেওয়ার মতো অবাধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা দেশে লুটপাট গুম-খুন চালিয়েছে, তাদের বিচার দ্রুত সময়ে করা হোক। সে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে আমরা অনেক আগেই আরেকটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা চাই সুবিচার হোক, কিন্তু বিলম্বিত বিচার নয়। সংস্কারও যেমন চলমান প্রক্রিয়া, বিচারও তেমন চলমা প্রক্রিয়া। অনেকে বলেছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ বা বিলম্বিত হতে পারে। তাদের বলতে চাই, আপনাদের কতজন নেতাকর্মী নির্যাতিত-শহীদ হয়েছে? আমরা নিপীড়িত দল, সুতরাং ক্ষমতায় এলে বিচার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই না।
তিনি আরো বলেন, আমরা যারা এতো বেশি নিপীড়িত, এতো বেশি নির্যাতিত, এতো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত; আমরা দায়িত্ব পেলে এই অপরাধীদের বিচার বিলম্বিত হবে কিংবা কোনোভাবে বিঘ্নিত হবে- এটা যারা বলে, তারা মূর্খ ছাড়া কিছু না। তারা মতলববাজ। কারণ তাদের এই বক্তব্যের পেছনে কোনো সৎ যুক্তি থাকতে পারে না। এই আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীদের বিচার আমাদের চেয়ে বেশি কেউ করে নাই। আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হব তাদের সুবিচার করলে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চাই- গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের সুবিচার হোক, কিন্তু বিলম্বিত বিচার না। এতো স্পষ্ট এদের অপরাধ, এতো স্পষ্ট প্রমাণ; এদের বিরুদ্ধে যেটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে- তাদের সাজা হবে, হওয়া উচিতও। এটা আমাদের বড় দাবিও।
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, দেশের জনগণের একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা পূরণের জন্য নির্বাচন বিলম্ব করবেন কেন? আমরা মনে করি যে, দেশে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ অলরেডি শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, তারা ভোটার তালিকা করে ফেলেছেন; এমনকি আমাদের প্রবাসী যারা আছেন, তাদেরকে ভোটার করার চেষ্টা করছে। ভোট দেওয়ার জন্য এলাকা নির্ধারণের বিধান আছে, সেটাও তারা করেছে এবং আগামী ১০ তারিখের মধ্যে কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেছেন। এই মাসের মধ্যে এই সীমানা নির্ধারণের কাজটা শেষ হবে বলে আমরা আশা করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সংস্কার কমিশনের কাজ- জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন যেটা হলো, সেটারও কাজ প্রায় শেষ। এমনকি জুলাই সনদে যে ড্রাফট আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, আমরা তাতে বলেছি- কিছু ভাষা প্রয়োগে ত্রুটি, বাক্য গঠনে যে ত্রুটি কিংবা শব্দ আরও সঠিক শব্দ হতে পারে। এছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব আমরা করি নাই; আমরা একমত হয়েছি। এমনকি সেই সনদে এমন প্রতিশ্রুতির কথাও লেখা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে স্বাক্ষর করে বলব যে, এই সনদে যা লেখা থাকবে- এটা যেই আমরা নির্বাচিত হই, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব। আমরা রাজি হয়েছি। তাহলে নির্বাচনের বিলম্ব কেন- নির্বাচন কমিশন যদি প্রস্তুত থাকে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম সারোয়ার, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, লেবার পার্টির জহুরা খাতুন জুই, মাহবুবে রহসান খালেদ, আলাউদ্দিন আলী, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুর রহমান খোকন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, তরিকুল ইসলাম সাদী।