এবার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর এমপি একরাম চৌধুরীকে মাতাল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল বলেছিলাম আজকে প্রমাণ হয়েছে একরাম চৌধুরী একজন মাতাল। যে নেতা (ওবায়দুল কাদের) সারাজীবন দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আজ সে নেতাকে রাজাকার পরিবারের সদস্য বলে কটূক্তি করে ‘কুলাঙ্গার-মাতাল’ একরাম চৌধুরী।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বসুরহাট রূপালী চত্বরে ওবায়দুল কাদেরকে কটূক্তির প্রতিবাদে একরামবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকালে কোম্পানিগঞ্জের কাদের মির্জার নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। মিছিল করে একরামুল করিম চৌধুরীর কুশপুতুল পোড়ান কাদের মির্জার অনুসারীরা।
কাদের মির্জা বলেন, একরাম চৌধুরী মদ্যপান করে আমাদের পরিবার সম্পর্কে মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের পরিবার সম্পর্কে তার এমন বক্তব্যের জন্য তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এই একরাম চৌধুরীর বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চত্বরে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। এসময় নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা ও জেলার টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, চাকরি বাণিজ্যসহ অপরাজনীতি-দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান।
একরামুলের তোলা অভিযোগের বিষয়ে কাদের মির্জা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে গিয়ে বহুবার গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন। এরপর কারাগারে বসেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আমাদের পরিবারের কেউ রাজাকার ছিলেন না। আমার বাবা শিক্ষকতা করতেন।
চাচা এরফান মিয়ার স্বাধীনতার বিরোধিতার বিষয়ে কাদের মির্জা বলেন, আমার চাচা রাজাকার ছিল, তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের বিরোধ ছিল। যুদ্ধের সময় আমার চাচা আমার ভাইকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমার ভাই চাচা এরফানের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন। তাহলে আমাদের পরিবার কীভাবে রাজাকারের পরিবার হয়?
কাদের মির্জা বলেন, একরাম গরীব স্কুল, নোবিপ্রবির পিয়ন থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছে। এগুলো যদি মিথ্যা হয়, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে অনুরোধ করবো আপনারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি গোলাম ছরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান মিন্টু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চরপার্বতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম তানভীর, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্নাসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ। পরে দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের নিয়ে বসুরহাট বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে অবস্থান করেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিবারকে রাজাকারের পরিবার বলে আখ্যায়িত করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটের সময় তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এ ব্যাপারে আরও কথা বলার হুমকি দেন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে তিনি বলেন, ‘আমি তো মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলবো না, আমি কথা বলবো ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। একটা রাজাকার ফ্যামিলির লোক এই পর্যায়ে আসেন। তার ভাইকে শাসন করতে পারেন না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কথা বলবো। যদি আমার জেলা কমিটি না আসে, তবে এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করবো।’
তার ফেসবুক ঘুরে দেখা যায়, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে নেন। লাইভ দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার আইডি থেকে ভিডিওটি ডিলিট করা হলেও মুহূর্তের মধ্যে এটির ডাউনলোড কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। ইতোমধ্যে একরামুল করিম চৌধুরীর এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে দেওয়া হচ্ছে নানা পোস্ট।
আরও পড়ুন : আমাদের দলে মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার আছে: তথ্যমন্ত্রী
একরামুল করিম চৌধুরী এমপির মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ভিডিও সরিয়ে নিলেও তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পরিবারের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য এবং তিনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা খবর নিলে জানতে পারবেন তার পরিবারে কারা রাজাকার ছিলেন। তবে ওবায়দুল কাদের একজন মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘদিন থেকে তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি তার ভাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, এ জন্য কাদের মির্জা এসব কথা বলতে পরছেন।
শুক্রবার দুপুর ২টায় পুনরায় একরামুল করিম ফেসবুক লাইভে আসেন এবং একটি লেখা পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘মিডিয়ায় কেউ বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব নন, শুধু মির্জাকে বুঝিয়ে আমি গত রাতে ফেসবুকে পোস্ট করছি। তিনি আমার গালে জুতা মারার মিছিল করলেন।
অথচ আমি ১৮ বছর ধরে নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে যাচ্ছি দলীয় প্রধান ও ওবায়দুল কাদেরের দিকনির্দেশনায়। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমি। মির্জা আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করায় আমি জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছি, মির্জার বিরুদ্ধে রাজপথে আর কোনও বিক্ষোভ প্রতিবাদ করার দরকার নেই।
সে এমন কোনও ফ্যাক্ট না যে তার বিরুদ্ধে ফাইটে নামতে হবে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জনের সুনাম ধরে রাখতে হবে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের, তার প্রতি আমি এবং আমাদের শ্রদ্ধা আজীবন হৃদয় থেকে থাকবে। নোয়াখালী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে ভালোবাসেন। সুতরাং কোনও ঠেলাঠেলি নয়, সংগঠনকে গতিশীল করতে কাজ করুন সবাই।’