Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একমাসে ৮ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার, আসামি ৯ হাজারের বেশি : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দুই শতাধিক মামলায় আট শতাধিক গ্রেফতার এবং ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশবাসী ভোট, পার্লামেন্ট হারিয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন হারিয়েছে, হারিয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। শেষমেষ হারাতে বসেছে জীবন ও স্বাধীনতা। যারা গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে তারা বর্তমান মারাত্মক দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক পরিস্থিতির টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করে সহিংসতা আর হত্যাকেই শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসেবে মনে করছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্যাডাররা’ এখন ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’, ‘টার্গেট কিলিং’য়ে মেতে আছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাসকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে মনে করছে। এরা হত্যা, জখম নিষ্পন্ন করে কদিন পর আবার আরেকটি খুন-জখমের জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠে। অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের প্রোডাক্ট হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাস তাদের মানসিক-ব্যাধি।

তিনি বলেন, অবিরামভাবে প্রধানমন্ত্রীর অগ্নিগরল বক্তৃতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কটুক্তি, পেশীশক্তি প্রদর্শন ও উগ্রচণ্ড প্রতাপে চারদিকে বিরাজ করছে নৈরাজ্যের অমানিশা। নির্দয় রুদ্র শাসনের অভিঘাতে দেশে নারীদের জীবন এখন সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মনে হয় দেশব্যাপী মধ্যযুগীয় ‘উইচ হান্টিং’-য়ের অমানবিকতার পুনরাবৃত্তির প্রতিযোগিতা করছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দুইদিন আগে জামালপুরের বকশিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। প্রথমে নাদিমসহ দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৭ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে বাবু চেয়ারম্যান। মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেলে মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথায় আঘাত করার পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একদিকে সরকারি ক্ষমতা, অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই হওয়ায় বাবু চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মৃত্যু যেন তার কাছে খেলা।’

নড়াইলের লোহাগড়ায় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রাহাদুল আমিন রবিনের ওপর হামলা, মিরপুর ১০ নম্বরে ফাস্টফুড বিক্রেতা হাফিজুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় যুবলীগের কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, এই বাংলাদেশের জন্য কী ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়েছিল? আওয়ামী সরকারের বিরোধীদের জীবন কাটে হামলা-মামলা-গুমের আতঙ্কে। নিষ্ঠুর রাজদণ্ড এখন প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে এসেছে জনগণের পিঠে।

রিজভী বলেন, আমরা আগেই জানিয়েছিলাম চট্টগ্রামের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে নির্যাতন ও গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনা। সেখানে নির্যাতনের খবর পেয়ে নুসরাতের মা কহিনুর বেগম ছুটে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন ও ডিউটি অফিসার সঞ্জয় কুমার সাহা তার অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নাদিয়া নুসরাতের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের একটি গায়েবি মামলায় তাকে জড়িত করে। বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে গ্রেফতার করা হয়। একটি মনুষ্যত্বহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নারীরা আজ আতঙ্কের এক ভয়াল বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

একমাসে ৮ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার, আসামি ৯ হাজারের বেশি : রিজভী

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দুই শতাধিক মামলায় আট শতাধিক গ্রেফতার এবং ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশবাসী ভোট, পার্লামেন্ট হারিয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন হারিয়েছে, হারিয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। শেষমেষ হারাতে বসেছে জীবন ও স্বাধীনতা। যারা গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে তারা বর্তমান মারাত্মক দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক পরিস্থিতির টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করে সহিংসতা আর হত্যাকেই শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসেবে মনে করছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্যাডাররা’ এখন ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’, ‘টার্গেট কিলিং’য়ে মেতে আছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাসকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে মনে করছে। এরা হত্যা, জখম নিষ্পন্ন করে কদিন পর আবার আরেকটি খুন-জখমের জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠে। অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের প্রোডাক্ট হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাস তাদের মানসিক-ব্যাধি।

তিনি বলেন, অবিরামভাবে প্রধানমন্ত্রীর অগ্নিগরল বক্তৃতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কটুক্তি, পেশীশক্তি প্রদর্শন ও উগ্রচণ্ড প্রতাপে চারদিকে বিরাজ করছে নৈরাজ্যের অমানিশা। নির্দয় রুদ্র শাসনের অভিঘাতে দেশে নারীদের জীবন এখন সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মনে হয় দেশব্যাপী মধ্যযুগীয় ‘উইচ হান্টিং’-য়ের অমানবিকতার পুনরাবৃত্তির প্রতিযোগিতা করছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দুইদিন আগে জামালপুরের বকশিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। প্রথমে নাদিমসহ দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৭ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে বাবু চেয়ারম্যান। মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেলে মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথায় আঘাত করার পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একদিকে সরকারি ক্ষমতা, অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই হওয়ায় বাবু চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মৃত্যু যেন তার কাছে খেলা।’

নড়াইলের লোহাগড়ায় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রাহাদুল আমিন রবিনের ওপর হামলা, মিরপুর ১০ নম্বরে ফাস্টফুড বিক্রেতা হাফিজুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় যুবলীগের কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, এই বাংলাদেশের জন্য কী ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়েছিল? আওয়ামী সরকারের বিরোধীদের জীবন কাটে হামলা-মামলা-গুমের আতঙ্কে। নিষ্ঠুর রাজদণ্ড এখন প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে এসেছে জনগণের পিঠে।

রিজভী বলেন, আমরা আগেই জানিয়েছিলাম চট্টগ্রামের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে নির্যাতন ও গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনা। সেখানে নির্যাতনের খবর পেয়ে নুসরাতের মা কহিনুর বেগম ছুটে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন ও ডিউটি অফিসার সঞ্জয় কুমার সাহা তার অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নাদিয়া নুসরাতের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের একটি গায়েবি মামলায় তাকে জড়িত করে। বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে গ্রেফতার করা হয়। একটি মনুষ্যত্বহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নারীরা আজ আতঙ্কের এক ভয়াল বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।