যশোর জেলা প্রতিনিধি :
বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ইসলামের আলোকে দেশ সাজাবো। কোনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এদেশে সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। ১৫ বছরে দেশে প্রচুর লুটপাট হয়েছে। অন্য দেশ যখন উন্নয়ন করতে ব্যস্ত, তখন আমার দেশের সরকার লুটপাটে ব্যস্ত। একদল যায়, আরেক দল এসে লুটে খায়। আমরা এরকম চাই না। আমরা চাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। আমাদের কোরআনের আলোকে দেশ গড়তে হবে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে যশোর শহরের পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ মাঠে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্নীতির আখড়াখানা। গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। লুটপাট করতে করতে এ দেশের মানুষকে ফুটপাতে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানদের কোরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাহলে ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হবে না। প্রতিটি শিশুর হৃদয়ে আল্লাহর কোরআনের আলো জ্বালাতে হবে। তাহলে দেশে আর দুর্নীতি, সন্ত্রাসী তৈরি হবে না। সব আলোকিত মানুষ হবে ইনশাআল্লাহ।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম দিয়ে আমাদের জীবন ও পরিবারকে সাজাতে হবে। কোরআন থেকে প্রেসক্রিপশন না নিলে জীবন সুন্দর হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে না। কোরআনের প্রেসক্রিপশন অ্যাপ্লাই না করলে শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এজন্য কোরআনের আইন চাই। সরকার যেন মানবসম্পদ উন্নয়নে যত্নশীল হয়। আল্লাহ যাকে যে যোগ্যতা দিয়েছেন সে যেন তা দিয়ে ইসলামের জন্য দেশের জন্য কাজ করি সেই প্রচেষ্টা চালানোর জন্য দোয়া করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আসল পরিচয় ইসলাম। এদেশের সংসদ, বঙ্গভবন, সরকারি অফিসে কলেমার পতাকা উঠুক আমরা চাই।’
আজহারী বলেন, ‘মানুষ চাইলে বিশ্বজয় করতে পারে। মানুষকে কেউ হারাতে পারে না। আল্লাহ আমাদেরকে জনসংখ্যা দিয়েছেন। এ জনসংখ্যা অনেক বড় সম্পদ। এটা আমাদের জন্য অভিশাপ না, আশীর্বাদ। আমাদের জনসংখ্যাকে যদি আমরা জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে তার চেয়ে ২০ গুণ উন্নতির শিখরে চলে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানব সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। একটি দেশের মানুষের জ্ঞান, তাদের দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, বাড়িয়ে দেশের উন্নয়ন করা যায় এটাই হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মূল কথা। মানবসম্পদ হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজি। প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের চেয়েও দামি সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। আল্লাহপাক দয়া করে আমাদের এই মানবসম্পদ দিয়েছেন। এই মানুষগুলোকে সোনার মানুষ বানাতে হবে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। তাই মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। যথাযথভাবে তাদের গড়তে হবে।’
রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনী থেকে মানবসম্পদ ব্যবহারের উদাহরণ টেনে আজহারী বলেন, ‘আমরা যদি মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে দিতে পারবো। প্রতিটি মানুষ অনন্য। যত্ন নিলে, যথাযথ পরিচর্যা করলে মানুষ বিশ্বজয় করতে পারে। আমাদের হাফেজ, ক্রিকেটার, তৈরি পোশাক শিল্প অনেক কিছু সেরা। আমাদের আরও অনেক কিছু সেরা আছে, কিন্তু আমরা তাদের পরিচর্যা করতে পারি নাই। মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ইউনূস সরকারকে বলবো অল্প সময়ের জন্য আপনারা এসেছেন। সংস্কারও করতে হবে আবার নির্বাচন করতে হবে। সব সংস্কার হয়ত করতে পারবেন না। যতটুকু পারবেন এর মধ্যে আমাদের যে হিউজ ম্যান পাওয়ার, মানবসম্পদ এটাকে ডেভেলপমেন্ট করে যেতে হবে। আপনারা যেটা পারবেন না সেটাকে পরবর্তী নির্বাচিত গভর্মেন্টের কাছে রেখে যেতে হবে।’
প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে। তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের শ্রমের দাম সবচেয়ে কম। তারা অ্যাম্বাসিতে গুরুত্ব পায় না, এয়ারপোর্টে গুরুত্ব পায় না। এই সরকার অবশ্য তাদেরকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের অদক্ষ শ্রমিককে যখন দুবাই পাঠায় অল্প বেতন পায়। ইন্ডিয়ানরা দক্ষ শ্রমিক পাঠায় বলে তারা তিন গুণ বেতন পায়। আমরা আমাদের শ্রমিককে আর অদক্ষভাবে পাঠাতে চাই না। দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিটেন্সের বন্যা বইয়ে দিতে চাই।’
পরিশেষে বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় সচল থাকে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা। তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা পেয়েছিলাম ফ্রিডম ফাইটার মুক্তিযোদ্ধা আর আমার প্রবাসী ভাইয়েরা হচ্ছে রেমিটেন্স ফাইটার। আমাদের এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকার ও অভিভাবককে সন্তানদেরকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের এই জনসংখ্যা জনসম্পদের রূপান্তরিত হবে। আমাদের সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৮ কোটি জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক এটাই আমরা চাই।’
মাহফিলে খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মাগুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যোগ দেন।