Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রে মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের রাজধানী টোকিওতে ‘নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’-এ মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম এবং ফলস্বরূপ আমার সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। আমরা আমাদের জনগণের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রে মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এটি ভুল সংশোধন করার, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করার এবং একটি ন্যায্য সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি সুযোগ। একাধিক অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদান রাখছে এবং মানবিক কারণে মিয়ানমারে তাদের জন্মভূমিতে নির্যাতনের শিকার দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু নতুন নৈতিক দ্বিধা তৈরি করছে। বাণিজ্য বিধিনিষেধের উত্থান মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিগুলোর মধ্যে, সমাজের মধ্যে, এমনকি নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা বাংলাদেশে, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে এমন বিভাজন, অসন্তোষ এবং অস্থিতিশীলতা দেখেছি যার ফলে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘মানবতার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এশিয়া, অনিশ্চয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। একই সঙ্গে এটি সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে। আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি তা ভয়াবহ। এই বাস্তবতায়, আমি বিশ্বাস করি এশিয়ার একটি সুযোগ রয়েছে-সম্ভবত একটি দায়িত্বও-একটি ভিন্ন পথ দেখানোর। শান্তির, সংলাপের, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ।’

নতুন এক বাংলাদেশ গঠনে জাপানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বপ্নের বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা সম্ভব।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই না। নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে সরকার জাপানসহ বন্ধু ও সহযোগী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার আমাদের একটি এজেন্ডা। এরপর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার এবং তৃতীয় এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই বলছেন কেন জুনের মধ্যে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যে কেন হবে না? এটা নির্ভর করছে আমরা কতটুকু সংস্কার করতে পারছি তার ওপর। আমরা এভাবে দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে একটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর রূপান্তর ঘটাবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ এবং সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংঘর্ষ চলছে। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প সেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করে তুলেছে। সম্প্রতি, আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি হলেও ব্যয়বহুল যুদ্ধ হয়েছে।

এই দুই দেশের নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য ড. ইউনূস ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কমিশন ব্যর্থ হলে সবাই ব্যর্থ হবে : আলী রীয়াজ

একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রে মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের রাজধানী টোকিওতে ‘নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’-এ মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম এবং ফলস্বরূপ আমার সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। আমরা আমাদের জনগণের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রে মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এটি ভুল সংশোধন করার, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করার এবং একটি ন্যায্য সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি সুযোগ। একাধিক অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদান রাখছে এবং মানবিক কারণে মিয়ানমারে তাদের জন্মভূমিতে নির্যাতনের শিকার দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু নতুন নৈতিক দ্বিধা তৈরি করছে। বাণিজ্য বিধিনিষেধের উত্থান মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিগুলোর মধ্যে, সমাজের মধ্যে, এমনকি নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা বাংলাদেশে, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে এমন বিভাজন, অসন্তোষ এবং অস্থিতিশীলতা দেখেছি যার ফলে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘মানবতার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এশিয়া, অনিশ্চয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। একই সঙ্গে এটি সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে। আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি তা ভয়াবহ। এই বাস্তবতায়, আমি বিশ্বাস করি এশিয়ার একটি সুযোগ রয়েছে-সম্ভবত একটি দায়িত্বও-একটি ভিন্ন পথ দেখানোর। শান্তির, সংলাপের, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথ।’

নতুন এক বাংলাদেশ গঠনে জাপানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বপ্নের বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা সম্ভব।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই না। নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে সরকার জাপানসহ বন্ধু ও সহযোগী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার আমাদের একটি এজেন্ডা। এরপর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার এবং তৃতীয় এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই বলছেন কেন জুনের মধ্যে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যে কেন হবে না? এটা নির্ভর করছে আমরা কতটুকু সংস্কার করতে পারছি তার ওপর। আমরা এভাবে দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে একটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর রূপান্তর ঘটাবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ এবং সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংঘর্ষ চলছে। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প সেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করে তুলেছে। সম্প্রতি, আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি হলেও ব্যয়বহুল যুদ্ধ হয়েছে।

এই দুই দেশের নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য ড. ইউনূস ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।