নিজস্ব প্রতিবেদক :
একটি রাজনৈতিক দল এখন জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বুধবার (২২ অক্টোবর) একটি দল বলেছে আমরা নাকি চাপে জুলাই সনদে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আমরা বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হতে পারে। এখন একটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে। তবে তাদের কিছু দাবি দাওয়া আছে। আমরা আশা করছি সুন্দর সমাধান হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আদেশ জারি ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামো দিতে পারেন। সবই হতে হবে বাস্তবতার নিরিখে এবং আইন দিয়ে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ বাতিলের দাবি তুলতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, সেই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে জনগণের সার্বভৌম সম্মতি নিতে গণভোট আয়োজন করা হবে। কারণ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই জনগণের অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি সংবিধান। তাই গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি ‘হ্যাঁ’ বলে, সেটিই হবে আইনি ভিত্তি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা ও ভাবনা কী? নতুন প্রজন্মের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেজন্য আমার এরই মধ্যে তারুণ্যের ভাবনা জানতে সভা-সেমিনার করেছি। চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষা হলো পরিবর্তন।
তিনি বলেন, সবক্ষেত্রে মেধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হবে। সমাজের যে স্তরেই আমরা কাজ করি না কেন, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা ব্যাপক। কারণ তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডিয়া হলো গবেষণাধর্মী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার প্রতিষ্ঠান। খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যাতে আমরা রিসার্চের মাধ্যমে গ্লোবাল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। কর্মমুখী ও সময়োপযেগী কারিকুলাম নির্ধারণ করতে হবে। শুধু নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সমাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় নয়, সেজন্য শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহার পরিবর্তন করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যার কর্মসংস্থান অবশ্যই করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না; বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তন আশা করছি তা সর্বত্রই হতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুধু বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থানের জন্য নয়। সেটি ছিল দীর্ঘ ১৫/১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। যে কারণে দ্রুত গতিতে এক দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয় এবং বহু লড়াই সংগ্রাম ও রক্তের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।
তিনি বলেন, যত সংস্কারই অমরা করি না কেন মানসিক সংস্কার আগে করতে হবে। না হলে আমরা যত সংস্কারের কথা বলি না কেন আমরা কিন্তু আইনে রূপান্তর করতে পারব না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী আইনি রূপান্তর ঘটাতে পারলে জাতির মুক্তি হবে। আসুন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে আমরা সবাই একসঙ্গে হই।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ।