নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার বক্তব্য এক এগারো সরকারের ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল মহানগর উত্তরের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কিছু করতে পারেনি, একজন উপদেষ্টার এমন বক্তব্য বেমানান। তার বক্তব্য ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের মতো। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন কিংবা জুলাই বিপ্লব সুশীল সমাজ করেনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিপ্লবের মধ্যে গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি থাকলে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের চিন্তা অনুযায়ী কথা বলবে।
রিজভী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমাতে পারছে না সরকার। আমরা বলেছি, আপনারা মার্কেটে পাইকারি মূল্যে পণ্য বিক্রি করুন। সিন্ডিকেটবাজদের ধরুন। যারা আগে থেকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে দুষ্টু চক্র হাত মিলিয়ে এই কাজ করে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপকভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখবেন দাম কমে আসবে। মাঠে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারে আনার ব্যবস্থা করুন। এর মধ্যে যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাত দিতে না পারে, তাদের কালো হাত যেন প্রসারিত হতে না পারে। এদেরকে চিহ্নিত করুন। তাদের আইনের আওতায় আনুন। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারে না। তারা নিজের দল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজদের ধরুন। অনেক সময় পুলিশ খাদ্যপণ্যের গাড়ি থামি চাঁদা আদায় করছে। এগুলো বন্ধ করলেই দাম কমে আসবে। আমরা এটা বলি না যে, সরকারের কোনো লোক এটা করছে। কিন্তু শক্তিশালী প্রশাসনিক নির্দেশনা থাকলে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি হতো না। মানুষকে এই পরিস্থিতি যদি আগের আমলের চেয়ে স্বস্তি দিতে না পারে তাহলে মানুষ হতাশ হবে। খাদ্যপণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেনি।
রিজভী বলেন, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল শাক সবজি নিজেরা কিনে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে। এটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। দুর্গম চরে কৃষককে শস্য উৎপাদনেও সহযোগিতা করছে কৃষক দল।
রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে সম্প্রতি এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এটা একধরনের অহংবোধে অভিব্যক্তি। একাত্তর কার সৃষ্টি, যুদ্ধ সৃষ্টি, যুদ্ধে বিজয় কাদের, এরশাদকে নামিয়ে যে গণতন্ত্রের আরেকবার বিজয় করেছিলাম এটা কি সুশীল সমাজের অবদান, তখন সুশীল সমাজ সমর্থন দিয়েছে? মাননীয় উপদেষ্টার উদ্দেশে আমি বলব, আপনার কথাবার্তা মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দিনদের পুনরুজ্জীবন দেখছি। এটা হতে পারে না। বরং মইনুদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের সেই তথাকথিত সংস্কারের ফলে হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিস্ট, যিনি গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে একটা সম্রাজ্ঞী শাসন করেছিল। তার বিরুদ্ধে কথা বললে হয় জেল, না হলে রাস্তাঘাটে নদী নালায় লাশ পড়ে থাকত। এইটাই দেখেছি আমরা সেই সংস্কারের ফল। আপনারা যদি প্রকৃত সংস্কার করেন, তাহলে নির্বাচন, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশগুলো, আইনের শাসন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এত বিলম্ব হওয়ার কথা না।
রিজভী বলেন, এতদিনের আপনাদের ক্ষমতায় শাসন বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে পারতেন। অগ্রগতি একেবারে হয়নি তা না। আপনারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ৫০ বছরেও কোনো সংস্কার করেনি, এমন অহংকার দেখান; কিন্তু মানুষ আপনাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। মনে করবে আপনারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরের গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আপনারা সেই সেই ভোটের অধিকারটি হয়ত ফিরিয়ে দিতে চান না, এই ধরনের ধারণা মানুষ করবে। মানুষের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হবে। আপনারা যেটা করবেন অতি তাড়াতাড়ি ভোট দিতে পারে, নির্বাচন হতে পারে সেই আশাবাদ মানুষের কাছে আপনারা তুলে ধরুন। সেই চেষ্টা সেই সংস্কার। অতি দ্রুত সেই কাজটি করুন।
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, দফতর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শামসুর রহমান শামসহ মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।