সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি :
এই সরকার না থাকলে ডিসি-এসপিদের চাকরি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক ও নাসিক ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন। যিনি মহানগর কৃষকলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কও।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোকন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও মহানগর কৃষকলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের অনুসারী বলে পরিচিত।
তবে কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন তার ঐ বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, আমার দেওয়া ঐ বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়নি। আমি ঠিক ওইভাবে বলিনি। আমি বলেছি- যারা শিক্ষিত-মেধাবী, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানে তারা স্বাভাবিকভাবে এই সরকারের পক্ষ নেয়, তারা সত্যের পক্ষে কথা বলেন। যারা সঠিক ইতিহাসের পক্ষে থাকে অন্য সরকার এলে তাদের চাকরি নাও থাকতে পারে। যারা সত্য বলেননি তাদের চাকরি যাবে না।
গত ১২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের একটি গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দেন কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন। ভিডিওতে কাউন্সিলর খোকনকে বলতে শোনা যায়, সারা নারায়ণগঞ্জে বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগরে বকতেছে, শেখ হাসিনারে উচ্চবাচ্য করতেছে, আর বড় বড় নেতারা (আওয়ামীলীগের) পোস্ট লইয়া বইসা রইছে। তিনি বলেন, মেয়র কয়, এসপি-ডিসি তার কথা শোনে না। শুনব কেন? আপনারে পাশ করাইলে কী লাভ হয় দেশের? আজকে এসপি জানে- এই সরকার না থাকলে আমার চাকরি থাকব না, ডিসি মনে মনে জানে- এই সরকার না থাকলে আমারে ট্রান্সফার কইরা দিব, কোন জায়গায় কোন শাস্তি দিব। আপনার তো ভয় নেই এই সরকার না থাকলে আপনার কিছু হবে না।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে শামীম ওসমান এত বড় জনসভার ডাক দিয়েছে। আমার এলাকা থেকে নেতাকর্মী নিয়ে যাবো এবং বিএনপিকে হুমকিধমকি দিতেছি, কেউ কোনও উল্টাপাল্টা কথা উচ্চারণ করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তো আমাকে দৌড়ান দিতে পারে। ওনারে (মেয়র আইভী) কেউ তো আর দেবে না। ওনারে আরামে বহাইয়া রাখবো। ওনাকে এই আমলেও দেবে না ওই আমলেও দেবে না। কারণ ওনার তো সব আমল। উনি শুধু বলেন, পুলিশ আমারে সহযোগিতা করে না। আপনারে কেন সহযোগিতা করবে? আপনে এই শহরে শেখ হাসিনার জন্য করছেন এমন কিছু দেখাতে পারবেন?’
মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কিছু হলেই বলে থাকেন শামীম ওসমান চাঁদাবাজি করেন। তাহলে আমার প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এতো উন্নয়নের টাকা কই যায়। আর উন্নয়ন করলে লাভ হবে না, এই লাভ কই যায়? আজ আমরা টাকা পাই না, খাইতে পারি না সরকারি দলে থেকেও। আর এখানে ঠিকাদাররা যারা একসময় ভাত খাইতে ভাত পায় নাই তারা এখন হ্যারিয়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। উনি যে মানুষের চাঁদাবাজি নিয়ে কথা বলে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের এতো অর্থ কই যায়।
কাউন্সিলর খোকন সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ৩৬টা কাউন্সিলরের সঙ্গে আপনার ভালো সম্পর্ক থাকলে আমরা শামীম ওসমানের রাজনীতি করতাম না, আপনার নেতৃত্বে রাজনীতি করতাম। শামীম ওসমান এ কথা শুনলে আমারে বাইর কইরা দিব। অন্যান্য আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলাদেশে থাকতে পারলে শামীম ওসমানও থাকতে পারবে। আমি তো আগে নিজে বাঁচব। দেশ ছেড়ে পালায় বা আত্মগোপন করে কারা, যাদের কারও সঙ্গে কোনো লিয়াজোঁ নেই।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন বলেন, তার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। নাসিকের ৩৬ কাউন্সিলর করোনার সময় অনেক কাজ করেছিল। বর্তমানে ডেঙ্গু মহামারীতেও কাউন্সিলররা এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছেন। এটার বাহবা মেয়র পাবেন। আমরা এতো পরিশ্রম করার কারণেই তিনি এতো সম্মানিত। উনি টাকা আনেন সরকারের কাছ থেকে, নিজের পকেট থেকে তো খরচ করেন না। জনগণ ট্যাক্স দেয়। উনি শুধু পরিচালনা করে। উনি বাজেট অধিবেশনের দিন তারিখটাও আমাদের জানায় নাই।
তাই আমি কিছুদিন আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোরালো অনুরোধ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে কাউন্সিলরবিহীন করতে। মানে কোনো কাউন্সিলরের দরকার নাই। কারণ আমি জানি উনি দক্ষ প্রশাসক। আমাদের কাউন্সিলর পদ বিলুপ্ত করে দেওয়া হোক। আমার আর কোনো ভয় নাই কথা বলতে। আমি যতদিন বেঁচে আছি সত্য কথা বলে যাবো। উনি আমাদের সঙ্গে যা আচরণ করে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি তো একজন কাউন্সিলর, উনার কর্মী নই। একটা কথা বললেই উনি ধমক দিয়ে বসেন। তাই আমি এ কারণে নগর ভবনে যাই না। আর তাতে সেও অনেক খুশি। ৩৬ জন কাউন্সিলর না গেলে সে একা মনের মতো সিটি কর্পোরেশন চালাবে। উনি শুধু আমার সঙ্গেই নয়, আরও অনেক কাউন্সিলর রয়েছেন তাদের সঙ্গেও ধমক দিয়ে কথা বলেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী জেনে বুঝে মেয়রকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। সুতরাং তার কথা কেন এসপি-ডিসি শুনবে না। তবে যে বলেছে এসপি-ডিসি ট্রান্সফার হয়ে যাবে সেটা তার জ্ঞানের অভাব। তিনি এখনও পরিপক্ব রাজনীতিবিদ হতে পারেননি।