ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার দল এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবেই এদেশে দলীয় যে সংকট রয়েছে তা নিরসন হবে।
রোববার (৭ মে) দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে সদর থানা উপজেলা শাখা বিএনপির সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। এ কারণেই আমরা বার বার বলছি সব রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গায়ের জোরে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচন করা যাবে না।
ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে অনেক কথা বলে। ২৪ ঘণ্টা আমাদেরকে গালিগালাজ করতে থাকে। আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে বলতে মিথ্যাবাদী বানায় দিয়েছে। আমাকে কি আপনাদের মিথ্যাবাদী মনে হয়। আমি যেসব কথা বলি সেগুলো কি মিথ্যা বলি। আমার কথাগুলো তাদের গায়ে সহ্য হয় না। এ জন্য তারা আজকে মিথ্যাচার করতে থাকে।
তিনি বলেন, এই জাতি একটা ক্রান্তি লগ্নে উপস্থিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনেই পরিষ্কার হবে, সিদ্ধান্ত হবে এই দেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না। এই দেশের মানুষের অধিকার থাকবে কি থাকবে না। মানুষ ভোট দিতে পারবে কি পারবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে না। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা তারা পূরণ করতে শুধু ব্যর্থ হয়নি, তারা জনগণের সেই আশা আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেওয়া যায় না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের কথা খুব স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর এখানে ঠুনো জগন্নাথ একটা সংসদ বানায় রেখেছেন এখানে কোনো কাজ হয় না। এই সংসদে জনগণের সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। সেই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। ওই সময় কেয়ারটেকার সরকারের জন্য ১৭৬টি হরতাল দিয়েছিলো। তখন অনেক লোক আহত ও হত্যার শিকার হয়। দেশটা অচল করে দিয়েছিলো তারা। আমাদের নেত্রী তাদের সে দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিয়েছিলো বলেই তারা ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলো। অথচ পরবর্তীতে তারাই তাদের নীতিগত দিক ভুলে নির্দলীয় সরকারের প্রথাটাই বন্ধ করে রেখেছে। তারা জানে যে দেশের জনগণ তাদের সাথে নেই। তাই তাদের এত ভয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকার গৃহপালিত করে রেখেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে যত সুন্দর পরিচ্ছন্নভাবেই সাজানোর চেষ্টা করুক না কেনো, কোন লাভ নেই। বিগত সময়েও এ সরকারের অধীনের নির্বাচন কমিশনকে দেশের জনগণ দেখেছে। নির্বাচন কমিশনকে তারা গৃহপালিত করে রেখেছে। তাই এ নির্বাচন কমিশনের কোন ক্ষমতাই নেই সুষ্ঠ নির্বাচন করার। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তন করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রের সকল যন্ত্র ব্যবহার করে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সরকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী এবং তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে।
এ জন্য বিএনপি ১০ ও ২৭ দফা দাবি দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই ২৭ দফার মধ্যদিয়ে আমরা এই দেশের আমূল পরিবর্তনের কথা বলেছি। সেখানে গণতন্ত্র, আইন-আদালত, মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা ২৭ দফা দিয়েছি। তাই সমস্ত অন্যায় ও অবৈধকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটি শান্তি ও সুন্দর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলের সকলকে শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, যুবদলের সভাপতি আবুনুর চৌধুরী ছাড়াও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।