Dhaka সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণখেলাপির তালিকা থেকে মান্নার নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ, বাধা নেই নির্বাচনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে বগুড়া থেকে জাতীয় নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক তার নাম সম্বলিত ঋণ খেলাপিদের তালিকা (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি) স্থগিত করছেন।

এদিন আদালতে মান্নার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম লিটন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্নার আইনজীবী জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি তালিকা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে মাহমুদুর রহমান মান্নার নির্বাচনে অংশ নিতে আর কোনো বাধা নেই।

বিচারক ইসলামি ব্যাংকের আইনজীবীকে বলেন, লোন তো রিরশিডিউল হয়েছে। আমার-আপনার তো করার কিছু নেই। এখন যা করার নির্বাচন কমিশন করবে; স্টে।

ইসলামী ব্যাংকের আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আজকে অনারেবল জাজ ইন চেম্বারে উনার পক্ষ থেকে উনারা যে আবেদনটা করেছিল, সেখানে উনারা এক দরখাস্ত দিয়েছিল- যাতে উনার যে সিআইবিটা আছে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংকের, যেখানে খেলাপিদের তালিকা থাকে। সেই তালিকায় যারা থাকেন, আপনারা জানেন- তারা নির্বাচন করতে পারেন না। তো মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের অনারেবল জাজ ইন চেম্বার আজকে সেই সিআইবিটাকে উনার স্টে করেছেন। তার মাধ্যমে উনার আপাতত এই সিআইবিতে স্টে হয়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনে কোনো বাধা থাকার কথা না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা উনার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যেটা ছিল, সেটার আরকি লোনের কারণে এটা কল অফ করা হয়েছিল। লোনটা ক্লাসিফাইড হয়ে গিয়েছিলেন। তো পরবর্তীতে এটাকে পুনরায় তফসিল করা হয়েছে এবং পুনরায় এটা এখন এই মুহূর্তে এটা রেগুলারাইজড অবস্থা চলে আসছে—উনার আবেদনের প্রেক্ষিতে। যার ফলশ্রুতিতে এই মুহূর্তে ইসলামী ব্যাংকের সাথে উনাকে আর খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে আমরা নির্দিষ্ট করছি না।

এর আগে গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) মান্নার রিট খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল।

ওইদিন হাইকোর্টে মান্নার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

রিট খারিজের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সিআইবি থেকে উনাদের নামটা যেন প্রত্যাহার করে দেয়া হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ সন্তুষ্ট হননি। খারিজ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, দুই শতাংশ জমা দেয়ার কথা। তিনি দুই শতাংশের বেশি পরিশোধ করেছেন। কিন্তু আদালত বলছেন, তালিকা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম প্রত্যাহার করতে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে কোনো নির্দেশনা দেবেন না। ঋণ গ্রহণকারী ইসলামী ব্যাংক এটি বাংলাদেশ ব্যাংককে (ঋণের তথ্য জানাবে) দেবে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ ডিসেম্বর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের কাছে খেলাপি ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আদায়ে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ জারি করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়ার বড়গোলা শাখা। মান্না ও তার দুই অংশীদারের ঠিকানায় পাঠানো ওই নোটিশে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। শাখা প্রধান তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরিত নোটিশটি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরীর ঠিকানায় পাঠানো হয়।

তথ্য অনুযায়ী, আফাকু কোল্ড স্টোরেজের মালিকানায় মান্না ৫০ শতাংশ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী ২৫ শতাংশ এবং তার স্ত্রী ও পরিচালক ইসমত আরা লাইজু ২৫ শতাংশ অংশীদার। গত ৩ ডিসেম্বর পাঠানো নোটিশে বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক বাজারে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কাছে খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ মোট ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

ব্যাংকের নোটিশে বলা হয়, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ করেনি। ফলে বকেয়া বেড়ে বর্তমান পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও কোনোরকম অগ্রগতি না থাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা হিসেবে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলেও ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গোপালগঞ্জে বাস চাপায় পুলিশ সদস্য নিহত

ঋণখেলাপির তালিকা থেকে মান্নার নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ, বাধা নেই নির্বাচনে

প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে বগুড়া থেকে জাতীয় নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক তার নাম সম্বলিত ঋণ খেলাপিদের তালিকা (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি) স্থগিত করছেন।

এদিন আদালতে মান্নার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম লিটন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্নার আইনজীবী জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি তালিকা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে মাহমুদুর রহমান মান্নার নির্বাচনে অংশ নিতে আর কোনো বাধা নেই।

বিচারক ইসলামি ব্যাংকের আইনজীবীকে বলেন, লোন তো রিরশিডিউল হয়েছে। আমার-আপনার তো করার কিছু নেই। এখন যা করার নির্বাচন কমিশন করবে; স্টে।

ইসলামী ব্যাংকের আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আজকে অনারেবল জাজ ইন চেম্বারে উনার পক্ষ থেকে উনারা যে আবেদনটা করেছিল, সেখানে উনারা এক দরখাস্ত দিয়েছিল- যাতে উনার যে সিআইবিটা আছে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংকের, যেখানে খেলাপিদের তালিকা থাকে। সেই তালিকায় যারা থাকেন, আপনারা জানেন- তারা নির্বাচন করতে পারেন না। তো মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের অনারেবল জাজ ইন চেম্বার আজকে সেই সিআইবিটাকে উনার স্টে করেছেন। তার মাধ্যমে উনার আপাতত এই সিআইবিতে স্টে হয়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনে কোনো বাধা থাকার কথা না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা উনার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যেটা ছিল, সেটার আরকি লোনের কারণে এটা কল অফ করা হয়েছিল। লোনটা ক্লাসিফাইড হয়ে গিয়েছিলেন। তো পরবর্তীতে এটাকে পুনরায় তফসিল করা হয়েছে এবং পুনরায় এটা এখন এই মুহূর্তে এটা রেগুলারাইজড অবস্থা চলে আসছে—উনার আবেদনের প্রেক্ষিতে। যার ফলশ্রুতিতে এই মুহূর্তে ইসলামী ব্যাংকের সাথে উনাকে আর খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে আমরা নির্দিষ্ট করছি না।

এর আগে গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) মান্নার রিট খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল।

ওইদিন হাইকোর্টে মান্নার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

রিট খারিজের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সিআইবি থেকে উনাদের নামটা যেন প্রত্যাহার করে দেয়া হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ সন্তুষ্ট হননি। খারিজ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, দুই শতাংশ জমা দেয়ার কথা। তিনি দুই শতাংশের বেশি পরিশোধ করেছেন। কিন্তু আদালত বলছেন, তালিকা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম প্রত্যাহার করতে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে কোনো নির্দেশনা দেবেন না। ঋণ গ্রহণকারী ইসলামী ব্যাংক এটি বাংলাদেশ ব্যাংককে (ঋণের তথ্য জানাবে) দেবে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ ডিসেম্বর নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের কাছে খেলাপি ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আদায়ে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ জারি করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়ার বড়গোলা শাখা। মান্না ও তার দুই অংশীদারের ঠিকানায় পাঠানো ওই নোটিশে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। শাখা প্রধান তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরিত নোটিশটি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরীর ঠিকানায় পাঠানো হয়।

তথ্য অনুযায়ী, আফাকু কোল্ড স্টোরেজের মালিকানায় মান্না ৫০ শতাংশ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী ২৫ শতাংশ এবং তার স্ত্রী ও পরিচালক ইসমত আরা লাইজু ২৫ শতাংশ অংশীদার। গত ৩ ডিসেম্বর পাঠানো নোটিশে বগুড়ার শিবগঞ্জের কিচক বাজারে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কাছে খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ মোট ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

ব্যাংকের নোটিশে বলা হয়, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ করেনি। ফলে বকেয়া বেড়ে বর্তমান পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও কোনোরকম অগ্রগতি না থাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা হিসেবে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলেও ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।