ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী যথাক্রমে মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তানভীর শাকিল জয়। বৃহস্পতিবার এ দুটি আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে কেন্দ্রগুলাতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বাইরে ও কেন্দ্রের ভিতরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু বাকিগুলোর দৃশ্য সেই পুরনো। এসব কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রগুলোর সামনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে দেয়া হচ্ছিল শোডাউন। সকাল পৌনে ১০টায় উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল এন্ড কলেজে ভোট দিতে এসে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করেন।
এ সময় নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে দল বেঁধে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা ওই প্রার্থীর সঙ্গে এসেছেন বলে জানান। আওয়ামী লীগের ওই প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিব হাসান বিষয়টি স্বীকার করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমিতো নেতাকর্মীদের না করেছি। কিন্তু চলে আসলে কি করবো। নির্বাচন তো এক ধরনের উৎসব।
এদিকে সরজমিন কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ওই প্রার্থী নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকায় দেখা যায়। কেন্দ্রটির একজন প্রিজাইডিং অফিসার রফিকুল বলেন, আমার কেন্দ্রের আশেপাশে কেউ আসেনি। কিন্তু মাঠে আমি নেতাকর্মী দেখেছি। তবে সেটা তো আমার এখতিয়ারের মধ্যে নেই।
এদিকে, কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, আমি কাউকে দেখিনি। এখা?নে বেশির ভাগই গণমাধ্যমকর্মী। উত্তরা ১১ নাম্বার সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে। ক্ষণে ক্ষণে মিছিল ও স্লোগান দিয়ে রাস্তায় যানজট তৈরি করেছে। ওই কেন্দ্রে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
কিন্তু ভোটারের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না। এদিকে তুরাগের কিশলয় একাডেমি স্কুলে নারী ভোটকেন্দ্র। এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। সেখানেও ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না গণমাধ্যমের কোনো কর্মীকে।
অন্যদিকে, উত্তরার টাচ্স্টোর কলেজের কেন্দ্রটিতে দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ বন্ধ ক?রে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। দুপুর দেড়টার দিকে উত্তরায় ৯ নাম্বার সেক্ট?রের এই কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ক?লে?জের দুই?টি কেন্দ্রেই নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা কেউ খাচ্ছেন, আবার কেউ খাবারের প্রস্তুতি নি?চ্ছেন। ভবনটির দোতলায় গি?য়েও একই দৃশ্য দেখা মিলে। ফলে একজন ভোটারকে অ?পেক্ষা করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন : আমেরিকারও শেখার আছে বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে: সিইসি
ওই নারী ভোটার জানান, খাবার শেষে তার ভোটটি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রিজাইডিং অ?ফিসারের রুমের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দরজা বন্ধ করে তিনিও দুপু?রের খাবার খা?চ্ছেন। যদিও গণমাধ্যমের কথা শুনে তিনি খাবার রেখে কথা বলতে আসেন। কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অ?ফিসার সাইফুর রহমার বলেন, আমরা শিফট করে খাচ্ছি। এতে ভোট দিতে আসা ভোটারদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
একই কলেজের চতুর্থ তলায় পুরুষ ভোটার কেন্দ্রটিতে একই অবস্থা। সেখা?নে গিয়েও দেখা যায়, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোট গ্রহণ বন্ধ করে খাওয়া দাওয়া করছেন। কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদ হোসাইন বলেন, সবাই দুপ?রের খাবার খাচ্ছে, কারণ ভোটারের চাপ নেই। যার কারণে দুপুরের খাবারটা খেয়ে ফেলছি। জানা গেছে পুরুষ ভোটারের এই কেন্দ্রটিতে ২১৪৪ ভোটার। দুপুর ১টার মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ ভোট পড়েছে।
এদিকে ভোট চলাকালীন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে সাড়ে এগারোটার দিকে আব্দুল্লাহপুরের মালেক বানু আদর্শ বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রের সামনে ১৮টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ভোটার ও আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় ভোটগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত হয়নি। তবে ভোটাররা ককটেলের শব্দে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন আবদুল্লাহপুর আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে কেন্দ্রে পরিদর্শন ও ভোট প্রদান শেষে অভিযোগ করে বলেন, ভোটের পরিবেশ নেই। তারা তাদের দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে, জনগণের গণতন্ত্র হরণ করেছে, ভোটাধিকার হরণ করেছে। সকাল থেকে কোনো কেন্দ্রেই আমাদের এজেন্টকে ঢুকতে দিচ্ছে না। দুই একটা কেন্দ্রের এজেন্ট গেছে তাদের বের করে দেয়া হচ্ছে, পুলিশ গিয়ে ধমকাচ্ছে আর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গিয়ে বের করে দিচ্ছে।
তবে এসব অ?ভি?যোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিব হাসান। তিনি ওই কেন্দ্রটিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এরপর তিনি বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এটা তাদের অতীতের কথা, তারা নির্বাচন আসলেই এ ধরনের কথা বলেন। বিএনপি’র বহিরাগতের আগমনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে বহিরাগত আমাদের প্রয়োজন নেই। তারা এনেছে বহিরাগত। আমরা কোনো এজেন্ট বের করে দেইনি। মানুষ উচ্ছ্বাস নিয়ে তাদের ভোট প্রয়োগ করছে।