Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপদেষ্টা আসিফকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

উচ্চ আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকেরা। শনিবার (১৭ মে) তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি থেকে মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এই কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ডিএসসিসির নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাকের অনুসারীরা। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবিও করেন তারা।

ডিএসসিসির নগর ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী দপ্তর। এখানেই দাপ্তরিক কাজ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে ইশরাক অনুসারীদের টানা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনে যাননি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা।

‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই, দিতে হবে’, এমন নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

শনিবার (১৭ মে) নগর ভবনে অবস্থানের আগে সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইশরাকের অনুসারীরা। তারা ‘ঢাকাবাসী’ প্লাটফর্ম নামে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এই প্লাটফর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান।

সাংবাদিকদের মশিউর রহমান বলেন, দাবি আদায়ে আগামীকাল রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ঢাকাবাসী। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইশরাকের সমর্থকরা বলছেন, আদালত রায় দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো হয়নি, তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এর পেছনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ষড়যন্ত্র রয়েছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আমির হোসেন নামের একজন বলেন, আমরা অবিলম্বে আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাই। এই সিটি করপোরেশন ছেড়ে তিনি যেন সচিবালয়ে গিয়ে অফিস করেন। নগর ভবনকে তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছেন। আমরা তাকে আর এখানে দেখতে চাই না। নগর ভবনে বসবেন নগরপিতা।

লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সচিবালয়ে গিয়েছিলাম জনগণের দাবি জানাতে। কিন্তু ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের পথ আটকে রাখা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছি, কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি।

৬১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন তিনি (ইশরাক) মেয়র। তাহলে কেন এত টালবাহানা করা হচ্ছে? আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি কেন দেখানো হচ্ছে?’

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা শ্রমিক দলের নেতা হোসেন বলেন, ‘আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। শিগগিরই ইশরাক ভাইকে মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়া হোক, এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।’

প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ তাপস, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

উপদেষ্টা আসিফকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

প্রকাশের সময় : ০৩:২৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

উচ্চ আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকেরা। শনিবার (১৭ মে) তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি থেকে মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এই কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ডিএসসিসির নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাকের অনুসারীরা। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবিও করেন তারা।

ডিএসসিসির নগর ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী দপ্তর। এখানেই দাপ্তরিক কাজ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে ইশরাক অনুসারীদের টানা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনে যাননি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা।

‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই, দিতে হবে’, এমন নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

শনিবার (১৭ মে) নগর ভবনে অবস্থানের আগে সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইশরাকের অনুসারীরা। তারা ‘ঢাকাবাসী’ প্লাটফর্ম নামে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এই প্লাটফর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান।

সাংবাদিকদের মশিউর রহমান বলেন, দাবি আদায়ে আগামীকাল রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ঢাকাবাসী। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইশরাকের সমর্থকরা বলছেন, আদালত রায় দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো হয়নি, তাকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এর পেছনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ষড়যন্ত্র রয়েছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আমির হোসেন নামের একজন বলেন, আমরা অবিলম্বে আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাই। এই সিটি করপোরেশন ছেড়ে তিনি যেন সচিবালয়ে গিয়ে অফিস করেন। নগর ভবনকে তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছেন। আমরা তাকে আর এখানে দেখতে চাই না। নগর ভবনে বসবেন নগরপিতা।

লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সচিবালয়ে গিয়েছিলাম জনগণের দাবি জানাতে। কিন্তু ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের পথ আটকে রাখা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছি, কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি।

৬১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন তিনি (ইশরাক) মেয়র। তাহলে কেন এত টালবাহানা করা হচ্ছে? আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি কেন দেখানো হচ্ছে?’

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা শ্রমিক দলের নেতা হোসেন বলেন, ‘আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। শিগগিরই ইশরাক ভাইকে মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়া হোক, এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।’

প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ তাপস, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।