Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা বন্ধের রায় স্থগিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

উত্তর প্রদেশে মাদরাসা বন্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মাদরাসা রয়েছে। যেগুলোতে পড়াশোনা করেন ১৭ লাখ শিক্ষার্থী।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বলেন, মাদরাসা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লঙ্ঘন করছে বলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা সঠিক নয়।

গত মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, ২০০৪ সালের যে আইনে মাদরাসা চলছে সেটি ‘অসাংবিধানিক’। কারণ এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে ভঙ্গ করছে। এ কারণে এই আইন বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এছাড়া মাদরাসায় অধ্যয়নত শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

এলাহাবাদের হাইকোর্টের এই রায় শুক্রবার স্থগিত ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, মাদরাসা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূলত হলো নিয়ন্ত্রক। আর এই বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো ক্ষতি হবে না।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় তার রায়ে বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট, ওই আইন স্থগিত করে, শিক্ষার্থীদের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিতের নির্দেশ দেয়। তবে এই রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো এত শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে স্থানান্তর ন্যায্য নয়।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেছেন, যদি পিআইএলের উদ্দেশ্য থাকে মাদ্রাসায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা যেমন গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ভাষা শেখানো হবে। তাহলে মাদরাসা আইন ২০০৪ বাতিল করে এই উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টে মাদরাসার পক্ষে লড়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভী। তিনি আদালতকে বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের কারণে মাদরাসার ১০ হাজার শিক্ষক এবং ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।

তিনি আদালতকে আরও বলেন, মাদরাসায় মানসম্পূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয় না এমনটি বলা ভুল। এছাড়া মাদরাসা সর্বজনীন ও বিস্তৃত নয় এমনটিও বলা যাবে না। এছাড়া মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে এটি একটি বৈষম্যমূলক রায়।

এদিকে, মাদরাসা বন্ধে কেন এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে জবাব দিতে নোটিশ পাঠিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে শুনানির জন্য জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই পর্যন্ত এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে ও মাদরাসাগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে।

চলতি বছরের ২২ মার্চ এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তর প্রদেশে ২০০৪ সালে চালু হওয়া মাদরাসা বোর্ড শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী’ নির্দেশ দেন ও রাজ্য সরকারকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দেন।

এলাহাবাদ হাইকোর্টে সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ’ অংশুমান সিংহ রাঠৌর। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, ওই আইন অবৈধ। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধরি এবং বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর বেঞ্চ সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার ফলে উত্তর প্রদেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদরাসাগুলোর সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা বন্ধের রায় স্থগিত

প্রকাশের সময় : ০৯:০২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

উত্তর প্রদেশে মাদরাসা বন্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মাদরাসা রয়েছে। যেগুলোতে পড়াশোনা করেন ১৭ লাখ শিক্ষার্থী।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বলেন, মাদরাসা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লঙ্ঘন করছে বলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা সঠিক নয়।

গত মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, ২০০৪ সালের যে আইনে মাদরাসা চলছে সেটি ‘অসাংবিধানিক’। কারণ এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে ভঙ্গ করছে। এ কারণে এই আইন বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এছাড়া মাদরাসায় অধ্যয়নত শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

এলাহাবাদের হাইকোর্টের এই রায় শুক্রবার স্থগিত ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, মাদরাসা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূলত হলো নিয়ন্ত্রক। আর এই বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো ক্ষতি হবে না।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় তার রায়ে বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্ট, ওই আইন স্থগিত করে, শিক্ষার্থীদের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিতের নির্দেশ দেয়। তবে এই রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো এত শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে স্থানান্তর ন্যায্য নয়।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেছেন, যদি পিআইএলের উদ্দেশ্য থাকে মাদ্রাসায় ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা যেমন গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ভাষা শেখানো হবে। তাহলে মাদরাসা আইন ২০০৪ বাতিল করে এই উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে না।

সুপ্রিম কোর্টে মাদরাসার পক্ষে লড়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভী। তিনি আদালতকে বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের কারণে মাদরাসার ১০ হাজার শিক্ষক এবং ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।

তিনি আদালতকে আরও বলেন, মাদরাসায় মানসম্পূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয় না এমনটি বলা ভুল। এছাড়া মাদরাসা সর্বজনীন ও বিস্তৃত নয় এমনটিও বলা যাবে না। এছাড়া মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে এটি একটি বৈষম্যমূলক রায়।

এদিকে, মাদরাসা বন্ধে কেন এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে জবাব দিতে নোটিশ পাঠিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে শুনানির জন্য জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই পর্যন্ত এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে ও মাদরাসাগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে।

চলতি বছরের ২২ মার্চ এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তর প্রদেশে ২০০৪ সালে চালু হওয়া মাদরাসা বোর্ড শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী’ নির্দেশ দেন ও রাজ্য সরকারকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দেন।

এলাহাবাদ হাইকোর্টে সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ’ অংশুমান সিংহ রাঠৌর। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, ওই আইন অবৈধ। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধরি এবং বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর বেঞ্চ সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার ফলে উত্তর প্রদেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদরাসাগুলোর সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।