স্পোর্টস ডেস্ক :
আকিল হোসেনের স্পিন ঘূর্ণিতে পড়ে দলীয় অর্ধশতকও করতে পারলো না বিশ্বকাপের নবাগত দল উগান্ডা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড গড়েছে তারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে দলটি আফগানদের বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল ৫৮ রানে, যেটি ছিল টুর্নামেন্টের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। এবার তার চেয়েও কম রানে অলআউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়েছে উগান্ডা।
রোববার (৯ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৬টায় গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয়। আগে ব্যাটিং করে জনসন চার্লসের ৪৪ ও আন্দ্রে রাসেলের ১৭ বলে ৩০ রানের টর্নেডো ইনিংসে উগান্ডার সামনে ১৭৩ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে আকিল হোসেনের ফাইফারে ৩৯ রানে অলআউট হয়ে যায় উগান্ডা। এতে করে ১৩৪ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
১৭৪ রানের লক্ষ্য উগান্ডার জন্য পাহাড়সম। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে মাসাবার দল। বল হাতে ঘূর্ণি জাদুতে উগান্ডিয়ানদের দিশেহারা করে ফেলেন আকিল। তাতে একমাত্র জুমা মিয়াগি (১৩) দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন। বাকিদের রান সংখ্যা দিয়ে মোবাইল নম্বর সাজালে দাঁড়ায় – ০৪৬৫১৩০১১০!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন একাই ধসিয়ে দিয়েছেন উগান্ডার ব্যাটিং লাইনআপকে। ১১ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এছাড়া আলজারি জোসেফ ২ টি এবং রোমারিও শেফার্ড, আন্দ্রে রাসেল, গুদাকেশ মোতি একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার। ৪ ওভারে ৪০ রান উঠিয়ে ঝড়ো সূচনা করেন কিং-চার্লস জুটি। ৫ম ওভারে গিয়ে রাজমানির বলে ১৩ রান করা কিং ফিরলে ভাঙে জুটি। এরপর নিকোলাস পুরানকে সাথে নিয়ে আরেকটি বড় জুটির আভাস দিয়েছিলেন চার্লস। তবে সেটা খুব বেশিদূর এগোয়নি, পুরান ফেরেন ৭৬ রানের মাথায়, করেছেন ২২ রান।
এরপর দ্রুত তিনটি উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪২ বলে ৪৪ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন চার্লস। তার ফেরার পর রানের গতিও কমে যায়। একটা সময় মনে হচ্ছিল ১৫০ পেরোবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
তখন দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন আন্দ্রে রাসেল। শেষ দুই ওভারে তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৭০ পেরোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। ৬টি চারে মাত্র ১৭ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন রাসেল। তার ক্যামিওতেই শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৭৩ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
উগান্ডার পক্ষে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবা। ১টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন আলপেশ রামজানি, কসমস কেউয়াটা ও দীনেশ নাকরানি।
এই হারে উগান্ডার সুপার এইটের স্বপ্ন অনেকটাই শেষ। এদিকে টানা দুই ম্যাচ জয়ে গ্রুপ ‘সি’-এর দুইয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সমান চার পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে আফগানিস্তান। দুটি ম্যাচে জিতলেও সুপার এইটের রাস্তা সহজ হয়নি ক্যারিবীয়দের। তাদের বাকি দুই ম্যাচ আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সুপার এইটের জায়গা নিশ্চিত করতে হলে বাকি দুই ম্যাচের অন্তত একটিতে জিততেই হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
উগান্ডাকে ৩৯ রানে অলআউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজও রেকর্ড গড়েছে। রানের হিসাবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় জয় পেয়েছে তারা। ২০০৭ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার পাওয়া ১৭২ রানের জয়ের পরেই জায়গা পেয়েছে ক্যারিবিয়ানদের ১৩৪ রানের জয়টি। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আগের সর্বোচ্চ ৮৪ রানের জয়টি তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছিল ২০১৪ বিশ্বকাপে।
দুর্দান্ত বোলিংয়ে অবধারিতভাবেই ম্যাচ-সেরা হয়েছেন আকিল। পুরস্কার নিতে এসে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘এটি (ভালো) অনেক পরিশ্রমের ফল। বিশেষ করে যখন আপনি শুরুতেই সাফল্য পাবেন। আমি খুবই খুশি যে দলের যেখানে প্রয়োজন সেখানে বোলিং করতে পেরে।’