Dhaka সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদের পরে-পূজার পরের আন্দোলনে নয়, ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্টের পতন : সারজিস আলম

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ১৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর ঈদের পরে, পূজার পরের আন্দোলন নয়; ছাত্রজনতার বিপ্লবেই ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে এক মতবিনিয়ম সভায় তিনি এ কথা বলেন। সারাদিন সেখানে ছাত্রজনতার সঙ্গে মতবিনিয়ম করেন সারজিস আলমসহ অন্যরা।

সারজিস বলেন, ছাত্রদের ওপর মানুষের যে আস্থা, তা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নেই। তাই এখন সময় সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়ার। পরিচ্ছন্ন দেশের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আবারও ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় আসবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানে এমন কিছু ধারা আছে সেটি দেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তাদের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কাজ করে।

তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধানে দেশের সাথে, দেশের মানুষের সাথে, রাষ্ট্রের সাথে, রাষ্ট্রের মানুষের সাথে সাংঘর্ষিক যে ধারাগুলো রয়েছে সেগুলো পরিবর্তন করে নতুনভাবে সাজানো উচিত।

সারজিস আলম বলেন, বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। তারা ওই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নাকি পতন ঘটাবে। তারা কি পেরেছে? বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ঈদের পরে, পূজার পরে, বিভিন্ন সময়ের পরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য, তারা কি পেরেছিলো? আপনাদের একটি জিনিস খুব ভালো মনে রাখতে হবে। যেদিন ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে এবং ছাত্ররা সামনের সারিতে ছিল সেদিনই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে।

সারজিস বলেন, এই ছাত্র-জনতার ওপরে বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের যেই আস্থাটি রয়েছে বাংলাদেশের তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বাংলাদেশের মানুষের সেই আস্থাটি আর নেই। আপনাদের ওপরে বাংলাদেশের এত এত মানুষ যে আস্থাটি রেখেছে এখন সময় হচ্ছে তাদের আস্থার প্রতিদান দেওয়া।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের ডকুমেন্টসগুলো জীবন্ত রাখতে হবে। তারা চাইবে স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দিতে। যদি এগুলো ভুলে না যান তাহলে তারা আবার এসে ক্ষমতায় বসতে পারবে না। আগামীতে এই বাংলাদেশে যারা শাসন করবে কিংবা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিবে, যদি তাদের উদ্দেশ্য থাকে আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার কায়েম করার তারাও চাইবে আপনার স্মৃতি থেকে ফ্যাসিজমগুলো মুছে দেওয়ার জন্য। তাই ফেসবুক পোস্ট, ছবি, ভিডিও, ডায়েরি লেখা বা বইয়ের মাধ্যমে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোয়ালিটির জায়গা থেকে স্কিলফুল হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সবই করতে হবে। কিন্তু প্রথম ও প্রধান কাজটি হলো পড়াশোনা ঠিক রাখা।

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ঘরে ঘরে, সম্রাজ্যে সম্রাজ্যে, দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, যতো বিভাজন ঘটানো হয়েছে। যতো ধংস ঘটানো হয়েছে সবগুলোর পূর্বে একটি কাজ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে ঐক্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি সবাইকে দেশের স্বার্থে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

এর আগে সারজিস আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের সমন্বয়ক দল সকালে মুন্সিগঞ্জ এসে পৌঁছায়। পরে আন্দোলনে নিহত ৯ জনের পরিবারের সদস্য ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। মতবিনিময় করেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথেও।

গত ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার রিয়াজুল ফরাজি, মোহাম্মদ সজল ও নূর মোহাম্মদ ডিপজল।

এছাড়া সেদিন অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা। এছাড়া আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে মুন্সিগঞ্জের আরও ৬ জন ঢাকায় নিহত হয়।

Tag :
জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ত্রিশাল জিরো পয়েন্ট-হরিরামপুর সড়কটি যেন মরণফাঁদ

ঈদের পরে-পূজার পরের আন্দোলনে নয়, ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্টের পতন : সারজিস আলম

প্রকাশের সময় : ০৯:৫০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ১৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর ঈদের পরে, পূজার পরের আন্দোলন নয়; ছাত্রজনতার বিপ্লবেই ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে এক মতবিনিয়ম সভায় তিনি এ কথা বলেন। সারাদিন সেখানে ছাত্রজনতার সঙ্গে মতবিনিয়ম করেন সারজিস আলমসহ অন্যরা।

সারজিস বলেন, ছাত্রদের ওপর মানুষের যে আস্থা, তা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নেই। তাই এখন সময় সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়ার। পরিচ্ছন্ন দেশের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আবারও ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় আসবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানে এমন কিছু ধারা আছে সেটি দেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন তাদের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কাজ করে।

তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধানে দেশের সাথে, দেশের মানুষের সাথে, রাষ্ট্রের সাথে, রাষ্ট্রের মানুষের সাথে সাংঘর্ষিক যে ধারাগুলো রয়েছে সেগুলো পরিবর্তন করে নতুনভাবে সাজানো উচিত।

সারজিস আলম বলেন, বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। তারা ওই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নাকি পতন ঘটাবে। তারা কি পেরেছে? বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ঈদের পরে, পূজার পরে, বিভিন্ন সময়ের পরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য, তারা কি পেরেছিলো? আপনাদের একটি জিনিস খুব ভালো মনে রাখতে হবে। যেদিন ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে এবং ছাত্ররা সামনের সারিতে ছিল সেদিনই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে।

সারজিস বলেন, এই ছাত্র-জনতার ওপরে বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের যেই আস্থাটি রয়েছে বাংলাদেশের তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বাংলাদেশের মানুষের সেই আস্থাটি আর নেই। আপনাদের ওপরে বাংলাদেশের এত এত মানুষ যে আস্থাটি রেখেছে এখন সময় হচ্ছে তাদের আস্থার প্রতিদান দেওয়া।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের ডকুমেন্টসগুলো জীবন্ত রাখতে হবে। তারা চাইবে স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দিতে। যদি এগুলো ভুলে না যান তাহলে তারা আবার এসে ক্ষমতায় বসতে পারবে না। আগামীতে এই বাংলাদেশে যারা শাসন করবে কিংবা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিবে, যদি তাদের উদ্দেশ্য থাকে আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার কায়েম করার তারাও চাইবে আপনার স্মৃতি থেকে ফ্যাসিজমগুলো মুছে দেওয়ার জন্য। তাই ফেসবুক পোস্ট, ছবি, ভিডিও, ডায়েরি লেখা বা বইয়ের মাধ্যমে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোয়ালিটির জায়গা থেকে স্কিলফুল হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সবই করতে হবে। কিন্তু প্রথম ও প্রধান কাজটি হলো পড়াশোনা ঠিক রাখা।

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ঘরে ঘরে, সম্রাজ্যে সম্রাজ্যে, দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, যতো বিভাজন ঘটানো হয়েছে। যতো ধংস ঘটানো হয়েছে সবগুলোর পূর্বে একটি কাজ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে ঐক্য ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি সবাইকে দেশের স্বার্থে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

এর আগে সারজিস আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের সমন্বয়ক দল সকালে মুন্সিগঞ্জ এসে পৌঁছায়। পরে আন্দোলনে নিহত ৯ জনের পরিবারের সদস্য ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। মতবিনিময় করেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথেও।

গত ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার রিয়াজুল ফরাজি, মোহাম্মদ সজল ও নূর মোহাম্মদ ডিপজল।

এছাড়া সেদিন অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা। এছাড়া আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে মুন্সিগঞ্জের আরও ৬ জন ঢাকায় নিহত হয়।