নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদের আগে প্রতি বছরই প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার সঙ্গে দান-সদকা, জাকাত বিতরণসহ পরিবার-পরিজনের বাড়তি ব্যয় থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা ৯৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এ মাসের ১৪ দিনে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসেবে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রায় ১০ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন আসছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ও দ্বিতীয় মাস আগস্টে টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর টানা ছয় মাস কেটে গেলে দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেনি রেমিট্যান্স। অবশেষে অর্থবছরের নবম মাস মার্চে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় রেমিট্যান্স। অতিক্রম করে দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক।
রোববার (১৬ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ছয় মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায় রেমিট্যান্স। গত বছরের আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ডলারের বেশি। এরপর চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি মার্চের প্রথম ১৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫৮ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে চলতি এপ্রিলের প্রথম ৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৭৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল মার্চ মাসে বৈধ পথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার।
এছাড়া মার্চের এ রেমিট্যান্স আগের বছরের (২০২২ সালের) মার্চ মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চে প্রবাসী আয় ছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) ৯ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।
বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।