Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে ৩৯০ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এবারের ঈদুল আজহার আগে-পরে যাতায়াতের ১৫ দিনে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে।

গত বছরের ঈদুল আজহার সময় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এবছর তা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল হক।

এবারের সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত ছিল মোটরসাইকেল। মোট ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৭ জন, আহত হয়েছেন ১৪৮ জন। এককভাবে মোট দুর্ঘটনার ৩৫.৩৫ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট।

নিহতদের মধ্যে ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষক ও রাজনীতিক ছিলেন।

দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত যেসব যান

মোটরসাইকেল: ২৬.৫৪ শতাংশ, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান: ১৯.১১ শতাংশ, বাস: ১৮.৫৮ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা: ১৩.৬২ শতাংশ, কার ও মাইক্রোবাস: ৭.৪৩ শতাংশ, নছিমন-করিমন: ৭.৬১ শতাংশ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা: ৭.০৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে— ৪০.৬৩ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে পথচারীকে চাপা দিয়ে, ২৮.২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.০৫ শতাংশ যানবাহন খাদে পড়ে, ১০.২৯ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ অনির্ধারিত ও ০.৭৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ট্রেন ও গাড়ির সংঘর্ষে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক: ৩৭.২০ শতাংশ, আঞ্চলিক মহাসড়ক: ২৮.২৩ শতাংশ, ফিডার রোড: ২৮.৪৯ শতাংশ, ঢাকা মহানগরী: ৪.৪৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম মহানগরী ও রেলক্রসিং এলাকা: ০.৭৯ শতাংশ করে।

এবার সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ২২.৬৫ শতাংশ

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হক, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ এবং নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মনজুর হোসেন ইশা ও জিএম মোস্তাফিজুর রহমান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে ৩৯০ জন নিহত

প্রকাশের সময় : ১১:৫৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এবারের ঈদুল আজহার আগে-পরে যাতায়াতের ১৫ দিনে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে।

গত বছরের ঈদুল আজহার সময় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এবছর তা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোজাম্মেল হক।

এবারের সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত ছিল মোটরসাইকেল। মোট ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৭ জন, আহত হয়েছেন ১৪৮ জন। এককভাবে মোট দুর্ঘটনার ৩৫.৩৫ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট।

নিহতদের মধ্যে ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষক ও রাজনীতিক ছিলেন।

দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত যেসব যান

মোটরসাইকেল: ২৬.৫৪ শতাংশ, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান: ১৯.১১ শতাংশ, বাস: ১৮.৫৮ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা: ১৩.৬২ শতাংশ, কার ও মাইক্রোবাস: ৭.৪৩ শতাংশ, নছিমন-করিমন: ৭.৬১ শতাংশ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা: ৭.০৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে— ৪০.৬৩ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে পথচারীকে চাপা দিয়ে, ২৮.২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.০৫ শতাংশ যানবাহন খাদে পড়ে, ১০.২৯ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ অনির্ধারিত ও ০.৭৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ট্রেন ও গাড়ির সংঘর্ষে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক: ৩৭.২০ শতাংশ, আঞ্চলিক মহাসড়ক: ২৮.২৩ শতাংশ, ফিডার রোড: ২৮.৪৯ শতাংশ, ঢাকা মহানগরী: ৪.৪৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম মহানগরী ও রেলক্রসিং এলাকা: ০.৭৯ শতাংশ করে।

এবার সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ২২.৬৫ শতাংশ

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হক, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ এবং নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মনজুর হোসেন ইশা ও জিএম মোস্তাফিজুর রহমান।