নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ইসলামের কথা বলে যারা দেশে অশান্তি চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বলেছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না। অথচ, আমাদের সময় ইসলামের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে আঞ্জুমানে রহমানীয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আয়োজনে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে’ এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে জাহাজে হজযাত্রী পাঠাতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমাদের সরকার ইসলামের কল্যাণে এ কাজগুলো করেছে। আরও অনেক কাজ হাতে নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং দেশের জনগণ এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ দেশে নির্বাচন ভন্ডুল করে ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা সরকার গঠনের অপচেষ্টা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বলা হয়েছিল সরকার টিকবে না। আমাদের সরকার পূর্ণ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এবারও আমরা দু’মাসের মাথায় পাঁচ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যতই দেশটাকে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করুক, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপি আসুক বা না আসুক, আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিম পার্টিসহ বহু রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অনেকে ভোট বানচালের চক্রান্ত করছে। বাংলাদেশে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের মতো সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হবে না। বিএনপি-জামায়াত যতই চেষ্টা করুক নির্বাচন থামাতে পারবে না।
দেশ রক্ষার জন্য ও ফেতনা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের কল্যাণে যখন অভাবনীয় কাজ করা হয়েছে এবং হচ্ছে তখন দেশে ইসলামের নামে হানাহানির অপচেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এ দেশে ইসলাম কোনো যুদ্ধ বিগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ওলী-আউলিয়ারা মানুষের মন জয় করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এনেছেন। কিন্তু আজ জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কিছু গোষ্ঠী ওলি-আউলিয়াদের অসম্মান করে। তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, বক্তৃতা করে। এরা ইসলামের কল্যাণ করছে না, বরং ফেতনা সৃষ্টি করছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। এবং এই ফেতনা সৃষ্টিকারীদের যারা প্রশ্রয় দেয়, জামায়াত যাদের জোটভুক্ত সেই বিএনপির বিরুদ্ধেও সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এ দেশে ইসলামের কথা বলে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির সময় একযোগে পাঁচশ’ জায়গায় বোমা ফোটানো হয়েছে। বিএনপি জঙ্গি ভাড়া করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। যারা এভাবে ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে শিশুদের ঢিল ছোঁড়ার জবাবে যখন ইসরায়েলি বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হয় না। মিয়ানমারে যখন মুসলমানদের জবাই করে হত্যা করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি হয় না। নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আমাদের আশ্রয়ে ভালো রাখার উপায় দেওয়া হয় কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ায় জোর দেওয়া হয় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জাতিসংঘে সব দেশের নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া হয়।
ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ যুগান্তকারী ও অদ্বিতীয় উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তৎকালীন এই রেসকোর্স উদ্যানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করেছিলেন। কারণ ইসলাম বাজি সমর্থন করে না। উদ্যানের পাশে তাবলিগ জামাতের মসজিদ এবং টঙ্গীতে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার জন্য জমিও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। তিনি মদ, জুয়া, হাউজি নিষিদ্ধ করেছিলেন, যেগুলো পরে জিয়াউর রহমান আবার চালু করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের খেদমতে বহু কাজ বঙ্গবন্ধু করেছেন।
তিনি বলেন, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সারাদেশে একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ, ১ লাখ ২০ হাজার মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা ও প্রতি মক্তব শিক্ষকের ৫২০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। খালেদা জিয়া, এরশাদ সরকার মূলা ঝুলিয়ে রেখেছিল আর শেখ হাসিনাই দেশে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিও পেয়েছেন, ইসলামী আররি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় প্রতিটি আলিয়া মাদরাসার নতুন ভবন এবং ৬১০০ মসজিদে পাঠাগার হয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হয়েছে। ২০২৪ সালে জাহাজে করে হজযাত্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ জাহাজে খরচ বিমানের প্রায় অর্ধেক। মক্কা-মদিনার ইমামবৃন্দ শেখ হাসিনার আমলেই এ দেশে আমন্ত্রণে এসেছেন। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক উচ্চতায় আসীন হয়েছে।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।