আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিমান হামলায় চারজন এবং অন্য একটি ঘটনায় রামাল্লাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরেকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিমান হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা এবং কর্মকর্তারা। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কারজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে রামাল্লায় পৃথক হামলায় আরেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন ক্যাম্পে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবারের এই হামলার সময় বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং এতে অন্তত চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে জেনিনে ইসরায়েলি বিমান থেকে ছোড়া অন্তত ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা সেখানকার ভবনগুলোতে আঘাত হানে। পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া উঠতে এবং ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানের বহর বিশাল ওই শরণার্থী শিবিরের দিকে অগ্রসর হতেও দেখেছেন তারা।
জেনিনে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ আল-সাদি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ এবং একইসঙ্গে স্থল পথেও আক্রমণ হচ্ছে। বেশ কিছু বাড়ি এবং স্থাপনায় বোমা হামলা করা হয়েছে… চারদিক থেকে ধোঁয়া উঠছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযানে অন্তত চারজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক খালেদ আলাহমাদ রয়টার্সকে বলেছেন, শরণার্থী শিবিরে যা হচ্ছে তা প্রকৃত যুদ্ধ। আকাশ থেকে শরণার্থী শিবিরকে লক্ষ্য করে হামলা করা হচ্ছে। প্রতিবার আমরা প্রায় পাঁচ থেকে সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেখানে যাচ্ছি এবং আহত লোক ভর্তি করে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসছি।
এদিকে পৃথক ঘটনায় পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ২১ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা ‘জেনিন এলাকায় সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে’ হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনি ওই ক্যাম্পটিকে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ দাবি করে তারা বলেছে, সন্ত্রাসীরা আস্তানা হিসাবে জেনিন ক্যাম্প ব্যবহার করে বেসামরিক লোকদের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমরা নিষ্ক্রিয় থাকব না।
জেনিন ব্যাটালিয়ন নামে একটি সামরিক গ্রুপের মধ্যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র লোক রয়েছে। তারা বলেছে: আমরা শেষ নিঃশ্বাস ও বুলেট পর্যন্ত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং আমরা সমস্ত দল ও সামরিক গ্রুপগুলো একত্রিত হয়ে কাজ করব।
পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার ভোরে পশ্চিম তীরের জেনিনে জঙ্গি যোদ্ধাদের একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা একটি ‘যৌথ অপারেশন সেন্টার’ আক্রমণ করেছে যা জেনিন ব্রিগেডের যোদ্ধাদের কমান্ড সেন্টার হিসাবে কাজ করত।
গত মাসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জেনিন ক্যাম্পে অভিযান চালানোর সময় কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সেবারই প্রথম ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরে চালানো ওই অভিযানে আক্রমণকারী হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
এছাড়া ওই হামলায় সাতজন ইসরায়েলি সেনা ও সীমান্ত পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছিলেন। সূত্র : আল জাজিরা।