আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইসরায়েলি অভিযানে কমপক্ষে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চার ফিলিস্তিনি। উত্তরাঞ্চলীয় নাবলুস শহরে ওই অভিযান চালানো হয়। সে সময় ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলেছে, গুলির তীব্র আঘাতের কারণে শহীদদের মধ্যে দুজনের মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে, তাদের সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা পরিষেবা এক বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের মধ্যে দু’জন ৭ এপ্রিল জেরিকোর উত্তরে একটি বন্দুক হামলার জন্য দায়ী ছিলেন। ওই হামলায় বসতি স্থাপনকারী দুই বোন মারা যায়। পরে তাদের আহত মা মারা যান।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে নাবলুসে অভিযানে যায় তারা। সেখানে এ তিনজনের সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। তারা জানিয়েছে নিহতরা হলেন হাসান কাতনানি, মোয়াজ মারসি এবং ইব্রাহিম হুরা।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় নাবলুসের রাজনৈতিক দলগুলো বৃহস্পতিবার (৪ মে) শহরে সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেছে।
দখলকৃত পশ্চিমতীরের নাবলুসে প্রায় প্রতি রাতে অভিযানে আসে ইসরায়েলি সেনারা। এ কারণে প্রতিদিনই কেউ না কেউ গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন।
নাবলুসের ওল্ড সিটিতে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানের সময় চারজনকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১৫০ জন টিয়ার গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় নাবলুসের রাজনৈতিক দলগুলো বৃহস্পতিবার শহরে সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করেছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কমপক্ষে ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনই শিশু।
এর মধ্যে ৪৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি বন্দী শেখ খাদের আদনানও রয়েছেন। নির্বিচারে আটকের বিরুদ্ধে অনশন করছিলেন তিনি। প্রায় ৮৭ দিন অনশনে থাকার কারণে মৃত্যু হয় তার।
গত ৫ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সামরিক বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এই ঘটনায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে ব্যাপক বিক্ষোভের ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসরায়েলের উপর রকেট হামলা চালায়। এছাড়া গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার রাতে হাশেল মুবারাক নামে ৫৮ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে বিচারব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিবাদে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কট্টোর ডানপন্থি সরকার ও দেশের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি নাগরিক বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, এ সংস্কার বাস্তবায়িত হলে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলো খুব সহজেই বাতিল করার ক্ষমতা পাবে নেসেট বা পার্লামেন্ট। অর্থাৎ, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ও যেকোনো আইনি সিদ্ধান্ত বাতিল করার ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।
চাপের মুখে মুখে গত মাসে বিচারব্যবস্থার সংস্কার থেকে সাময়িক পিছু হটার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে পিছু হটার ঘোষণা দিলেও, এখনো সংস্কার প্রস্তাব বাতিলের ঘোষণা দেননি তিনি। আর তাতেই সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। সূত্র : আল-জাজিরা।