আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক উপলক্ষে তেহরান সফরকালে গুপ্ত হামলায় নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। হামাস এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) এক বিবৃতিতে হামাস এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, তেহরানের বাসভবনে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদী হামলা হয়েছিল। হামলাটি কিভাবে হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
চলমান গাজা যুদ্ধে ইতোপূর্বে হানিয়া বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ স্বজনকে হারিয়েছেন। এপ্রিলে ইসরাইলি বিমান হামলায় তার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি নিহত হয়। গত মাসে তার এক বোনকে হত্যা করা হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ইসমাইল হানিয়া রাজধানী তেহরানে হামলায় নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে তার দেহরক্ষীদের একজনও নিহত হন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীও হামাসের এ শীর্ষ নেতার নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। তবে তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার তেহরানে গিয়েছিলেন হানিয়া। যে ভবনে তারা অবস্থান করছিলেন, সেখানে হামলা চালানো হলে হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন।
ইসমাইল হানিনার নিহত হওয়ার বিষয়টি হামাসের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত হয়েছেন বলে বুধবার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিবৃতিতে হানিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে হামাস জানিয়েছে, তেহরানে নিজের আবাসস্থলে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদী অভিযানে’ ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন।
১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি মিশর অধিকৃত গাজা উপত্যকার আল-শাতি উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাইল হানিয়া।
১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় তার বাবা মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের নিকটস্থ বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হন। তিনি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন।
১৯৮৫ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ইসলামিক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িক কালে তিনি স্নাতক হন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিনি ইসরায়েলে স্বল্পকালীন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় ইসরায়েল কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবদুল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরও ৪০০ কর্মীর সঙ্গে ইসরায়েল তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেয়। তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে। এক বছর পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের নির্বাচনে হামাস জয়লাভের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১৪ জুন রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস তাকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু ইসমাইল হানিয়া আদেশ মেনে নেননি এবং গাজায় প্রধানমন্ত্রিত্ব করতে থাকেন।