Dhaka শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইমরানের গ্রেফতার অবৈধ, তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের গ্রেফতারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোকে নির্দেশও দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এর আগে, শীর্ষ বিচারপতিদের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে ইমরান খানকে আবারও সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়। এদিন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক ঘণ্টার মধ্যে’ পিটিআই চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির করার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।

তিন বিচারপতির বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিলাল, বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ। বেঞ্চের পক্ষ থেকে তাকে অবিলম্বের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে শুক্রবার (১২ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে রুজু করতে বলা হয়েছে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটি মেনে নেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বেঞ্চের পক্ষ থেকে স্থানীয় সময় সাড়ে চারটার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশিত সময়ের এক ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর শুনানি শুরু হয়।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেফতারের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিলো সর্বোচ্চ আদালত।

১৫টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তাকে কোর্ট রুম-১ পৌঁছানো হয়। বিচারপতিরা আসন গ্রহণ করার পর শুনানি শুরু হয়।

ইমরানকে হাজির করা ঘিরে সর্বোচ্চ আদালতের আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। র‌্যাঞ্জার ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। পিটিআই নিজের কর্মী-সমর্থকদের সুপ্রিম কোর্ট থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে পিটিআই নেতার গ্রেফতারকে দেশটির বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্রচণ্ড অসম্মান বলে অভিহিত করার পরে এমন নির্দেশ আসে।

দিনের শুরুতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) প্রাঙ্গণ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার দেশটির বিচার ব্যবস্থার জন্য ‘বড় অসম্মান’ বলে অভিহিত করেন।

ইমরান খানের গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিআইয়ের আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি ছাড়াও তিন সদস্যের ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার।

শুনানির শুরুতে ইমরানের আইনজীবী হামিদ খান সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার অন্তর্র্বতীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তার ভেরিফিকেশন চলাকালে হঠাৎ রেঞ্জার্স সদস্যরা রুমে ঢুকে পড়েন। রেঞ্জার্স ইমরান খানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং তাকে গ্রেফতার করে।

এ পর্যায়ে সিজেপি বান্দিয়াল যে মামলায় ইমরান খান জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের আগে আবেদন করা যাবে কি না তা জানতে চান বিচারপতি মিনাল্লাহ।

এসময় আইনজীবী বলেন, ইমরান খান বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের জন্য গিয়েছিলেন, কারণ এর আগে আবেদন করা যায় না।

বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, এনএবি কেন আইন হাতে তুলে নিল? আইএইচসি রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে অনুমতি নিলে এনএবির জন্য তা ভালো হতো।

তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতকে তার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এসময় দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন এ বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল প্রশ্ন করেন, আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতারে আদালতের পবিত্রতা কোথায় গেলো? এসময় ইমরান খানকে কতজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন, তা জানতে চান সিজেপি।

তখন ইমরানের আইনি দলের আরেক সদস্য সালমান সফদার আদালতকে জানান, ৮০ থেকে ১০০ জন গিয়েছিল পিটিআই প্রধানকে গ্রেফতার করতে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন ৯০ জন লোক আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে, তখন আদালতের সম্মানের আর কী অবশিষ্ট থাকে? এনএবি আদালতকে অসম্মান করেছে। আদালতের ভেতরে আর কেউ নিরাপদ বোধ করবে না।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট বা জবাবদিহি আদালত থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ইমরান খানের গ্রেফতার বিচারিক পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গলবার (৯ মে) দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয় ইমরান খানকে। একটি মামলায় তিনি সেখানে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আট দিনের রিমান্ডে নেয় দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

ইমরানের গ্রেফতার অবৈধ, তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের গ্রেফতারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোকে নির্দেশও দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এর আগে, শীর্ষ বিচারপতিদের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে ইমরান খানকে আবারও সুপ্রিম কোর্টে হাজির করা হয়। এদিন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘এক ঘণ্টার মধ্যে’ পিটিআই চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির করার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।

তিন বিচারপতির বেঞ্চে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিলাল, বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ। বেঞ্চের পক্ষ থেকে তাকে অবিলম্বের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে শুক্রবার (১২ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে রুজু করতে বলা হয়েছে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটি মেনে নেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বেঞ্চের পক্ষ থেকে স্থানীয় সময় সাড়ে চারটার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশিত সময়ের এক ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর শুনানি শুরু হয়।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেফতারের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিলো সর্বোচ্চ আদালত।

১৫টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তাকে কোর্ট রুম-১ পৌঁছানো হয়। বিচারপতিরা আসন গ্রহণ করার পর শুনানি শুরু হয়।

ইমরানকে হাজির করা ঘিরে সর্বোচ্চ আদালতের আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। র‌্যাঞ্জার ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। পিটিআই নিজের কর্মী-সমর্থকদের সুপ্রিম কোর্ট থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে পিটিআই নেতার গ্রেফতারকে দেশটির বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্রচণ্ড অসম্মান বলে অভিহিত করার পরে এমন নির্দেশ আসে।

দিনের শুরুতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) প্রাঙ্গণ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার দেশটির বিচার ব্যবস্থার জন্য ‘বড় অসম্মান’ বলে অভিহিত করেন।

ইমরান খানের গ্রেফতারকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিআইয়ের আবেদনের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি ছাড়াও তিন সদস্যের ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার।

শুনানির শুরুতে ইমরানের আইনজীবী হামিদ খান সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার অন্তর্র্বতীকালীন জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তার ভেরিফিকেশন চলাকালে হঠাৎ রেঞ্জার্স সদস্যরা রুমে ঢুকে পড়েন। রেঞ্জার্স ইমরান খানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং তাকে গ্রেফতার করে।

এ পর্যায়ে সিজেপি বান্দিয়াল যে মামলায় ইমরান খান জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের আগে আবেদন করা যাবে কি না তা জানতে চান বিচারপতি মিনাল্লাহ।

এসময় আইনজীবী বলেন, ইমরান খান বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের জন্য গিয়েছিলেন, কারণ এর আগে আবেদন করা যায় না।

বিচারপতি মিনাল্লাহ বলেন, এনএবি কেন আইন হাতে তুলে নিল? আইএইচসি রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে অনুমতি নিলে এনএবির জন্য তা ভালো হতো।

তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতকে তার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এসময় দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন এ বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল প্রশ্ন করেন, আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতারে আদালতের পবিত্রতা কোথায় গেলো? এসময় ইমরান খানকে কতজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন, তা জানতে চান সিজেপি।

তখন ইমরানের আইনি দলের আরেক সদস্য সালমান সফদার আদালতকে জানান, ৮০ থেকে ১০০ জন গিয়েছিল পিটিআই প্রধানকে গ্রেফতার করতে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন ৯০ জন লোক আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে, তখন আদালতের সম্মানের আর কী অবশিষ্ট থাকে? এনএবি আদালতকে অসম্মান করেছে। আদালতের ভেতরে আর কেউ নিরাপদ বোধ করবে না।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট বা জবাবদিহি আদালত থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ইমরান খানের গ্রেফতার বিচারিক পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।

ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গলবার (৯ মে) দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয় ইমরান খানকে। একটি মামলায় তিনি সেখানে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আট দিনের রিমান্ডে নেয় দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।