Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইন্দোনেশিয়া উপকূলে শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে নৌকাডুবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী পরিবহনকারী একটি কাঠের নৌকা ডুবে গেছে। যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, বাকিরা সাগরের স্রোতে ভেসে গেছেন। নৌকাটিতে প্রায় ১৫০ জন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ মার্চ) সকালে এই ঘটনা ঘটে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি ফয়সাল রহমান জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতরা বলেছেন অনেকেই ডুবে গেছেন। আমরা হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেকেই মারা গেছেন। প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

শরণার্থীরা পূর্ব দিকে যাত্রাকালে নৌকাটি ফুটো হতে শুরু করে এবং জোয়ারের ঢেউ তাদের আচেহ প্রদেশের কুয়ালা বুবোন সমুদ্র সৈকতের দিকে ঠেলে দেয়।

পশ্চিম আচেহ’র মৎসজীবী সমাজের অন্যতম নেতা নন্দ ফেরদিয়ানসিয়াহ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টার দিকে পশ্চিম আচেহ’র উপকূলে একটি রোহিঙ্গা যাত্রীবাহী নৌকা ডুবতে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়ে যাত্রীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে স্থানীয় একটি মাছধরা নৌকা।

মাছধরা নৌকাটি সেখানে পৌঁছানোর পর ডুবতে থাকা নৌকাটির যাত্রীদের সবাই সেই নৌকায় উঠে পড়েন; কিন্তু এত যাত্রী নেওয়ার মতো ক্ষমতা মাছ ধরা নৌকাটির ছিল না। ফলে সেটিও ডুবে যায়।

নৌকাটিতে কতজন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিল, তা এখনও জানা যায়নি। পশ্চিম আচেহ’র মৎসজীবী সমাজের সেক্রেটারি জেনারেল পাওয়াং আমিরুদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, সাগরের যে এলাকায় নৌকা দু’টি ডুবেছে, সেটি পশ্চিম আচেহর কুয়ালা বুবন শহরের সাগর তীর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে।

‘মাছ ধরা নৌকাটি ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্র ওই ডুবতে থাকা নৌকা থেকে যাত্রীদের সবাই হুড়মুড় করে (মাছ ধরা নৌকায়) উঠতে থাকেন। সবাই ওঠার পর যাত্রীদের ভারে মাছ ধরা নৌকাটিও ডুবে যায়। সাগরে এ সময় ব্যাপক স্রোত ছিল। মাত্র ৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন মৎসজীবীরা। বাকিরা স্রোতে ভেসে গেছে,’— বিবৃতিতে বলেন পাওয়ান আমিরুদ্দি।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, নৌকাটিতে একশ’র কাছাকাছি বা তারও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা ছিল। আমরা আশা করছি (ডুবে বা ভেসে যাওয়া) রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়ার সরকার শিগগির তৎপরতা শুরু করবে। এটা জরুরি অবস্থা,’ বিবৃতিতে বলেছে ইউএনএইচসিআর।

এ ইস্যুতে বিস্তারিত তথ্য জানতে ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার, আচেহ প্রদেশের স্থানীয় সরকার ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এএফপি, তবে কোনো পক্ষই মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত নৃগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে পছন্দের দুই গন্তব্য মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এই দুই গন্তব্যের দিকে ‘জোয়ারের মতো’ ছুটছেন রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর রেফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) জানুয়ারী মাসে জানায়, ২০২৩ সালে মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে পালানোর সময় যে ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা মারা গিয়েছিলেন। এই সংখ্যা ২০১৪ সালের পর সর্বচ্চ। কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়া আসছেন। ইউএনএইচসিআর বলছে, নভেম্বরের মাঝা-মাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ১,৭৫২ জন উদ্বাস্তু, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু, ইন্দোনেশিয়ার আচেহ এবং উত্তর সুমাত্রা প্রদেশে এসেছেন। ২০১৫ সালের পর এটাই এই মুসলিম-প্রধান দেশে সবচেয়ে বেশি আগমন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

ইন্দোনেশিয়া উপকূলে শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে নৌকাডুবি

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী পরিবহনকারী একটি কাঠের নৌকা ডুবে গেছে। যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, বাকিরা সাগরের স্রোতে ভেসে গেছেন। নৌকাটিতে প্রায় ১৫০ জন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ মার্চ) সকালে এই ঘটনা ঘটে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি ফয়সাল রহমান জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতরা বলেছেন অনেকেই ডুবে গেছেন। আমরা হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেকেই মারা গেছেন। প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

শরণার্থীরা পূর্ব দিকে যাত্রাকালে নৌকাটি ফুটো হতে শুরু করে এবং জোয়ারের ঢেউ তাদের আচেহ প্রদেশের কুয়ালা বুবোন সমুদ্র সৈকতের দিকে ঠেলে দেয়।

পশ্চিম আচেহ’র মৎসজীবী সমাজের অন্যতম নেতা নন্দ ফেরদিয়ানসিয়াহ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টার দিকে পশ্চিম আচেহ’র উপকূলে একটি রোহিঙ্গা যাত্রীবাহী নৌকা ডুবতে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়ে যাত্রীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে স্থানীয় একটি মাছধরা নৌকা।

মাছধরা নৌকাটি সেখানে পৌঁছানোর পর ডুবতে থাকা নৌকাটির যাত্রীদের সবাই সেই নৌকায় উঠে পড়েন; কিন্তু এত যাত্রী নেওয়ার মতো ক্ষমতা মাছ ধরা নৌকাটির ছিল না। ফলে সেটিও ডুবে যায়।

নৌকাটিতে কতজন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিল, তা এখনও জানা যায়নি। পশ্চিম আচেহ’র মৎসজীবী সমাজের সেক্রেটারি জেনারেল পাওয়াং আমিরুদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, সাগরের যে এলাকায় নৌকা দু’টি ডুবেছে, সেটি পশ্চিম আচেহর কুয়ালা বুবন শহরের সাগর তীর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে।

‘মাছ ধরা নৌকাটি ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্র ওই ডুবতে থাকা নৌকা থেকে যাত্রীদের সবাই হুড়মুড় করে (মাছ ধরা নৌকায়) উঠতে থাকেন। সবাই ওঠার পর যাত্রীদের ভারে মাছ ধরা নৌকাটিও ডুবে যায়। সাগরে এ সময় ব্যাপক স্রোত ছিল। মাত্র ৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন মৎসজীবীরা। বাকিরা স্রোতে ভেসে গেছে,’— বিবৃতিতে বলেন পাওয়ান আমিরুদ্দি।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, নৌকাটিতে একশ’র কাছাকাছি বা তারও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা ছিল। আমরা আশা করছি (ডুবে বা ভেসে যাওয়া) রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়ার সরকার শিগগির তৎপরতা শুরু করবে। এটা জরুরি অবস্থা,’ বিবৃতিতে বলেছে ইউএনএইচসিআর।

এ ইস্যুতে বিস্তারিত তথ্য জানতে ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার, আচেহ প্রদেশের স্থানীয় সরকার ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এএফপি, তবে কোনো পক্ষই মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত নৃগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে পছন্দের দুই গন্তব্য মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এই দুই গন্তব্যের দিকে ‘জোয়ারের মতো’ ছুটছেন রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর রেফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) জানুয়ারী মাসে জানায়, ২০২৩ সালে মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে পালানোর সময় যে ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা মারা গিয়েছিলেন। এই সংখ্যা ২০১৪ সালের পর সর্বচ্চ। কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়া আসছেন। ইউএনএইচসিআর বলছে, নভেম্বরের মাঝা-মাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ১,৭৫২ জন উদ্বাস্তু, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু, ইন্দোনেশিয়ার আচেহ এবং উত্তর সুমাত্রা প্রদেশে এসেছেন। ২০১৫ সালের পর এটাই এই মুসলিম-প্রধান দেশে সবচেয়ে বেশি আগমন।