নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ইতিহাস জানে না, তাই রাজাকার স্লোগান দিতে তাদের লজ্জা হয় না।
সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে মন্ত্রণালয়-বিভাগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা হয়েছে। তাদের অবদান ভুললে চলবে না। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানি হানাদার আর রাজাকাররা যেভাবে অত্যাচার করেছে…দুঃখ লাগে যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দেয়। তারা কি জানে ২৫ মার্চ কি ঘটেছিলো সেখানে? ৩০০ মেয়েকে হত্যা করেছিলো, ৪০ জন মেয়েকে রেইপ করেছিলো এবং এদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলো।
তিনি বলেন, অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিতো বলে তাদের কাপড় পরতে দেওয়া হতো না। পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন পাশবিক অত্যাচার হতো। মিত্র বাহিনীর একজন শিখ সৈন্য মাথার পাগড়ি পেচিয়ে একজন মেয়েলে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এমন একটা ঘটনা না, এমন বহু ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না। দুর্ভাগ্য এখন মেয়েরা স্লোগান দেয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। কোন দেশে আছি, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে, কি শিক্ষা তারা নিলো?
সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে সেটা কখনও হতে পারে না। বিজয়ের মর্যাদা ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারের মাধ্যমে নির্যাতিতরা ন্যায়বিচার পেয়েছে। দুর্ভাগ্য যে, এখন যখন শুনি মেয়েরাও স্লোগান দেয়! কোন দেশে আছি? ওরা কী চেতনায় বিশ্বাস করে? কী শিক্ষা তারা নিল, কী তারা শিখল—সেটাই আমার প্রশ্ন। যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, জাতির পিতার এক ডাকে মানুষ সব ছেড়ে রণক্ষেত্রে চলে গিয়েছিল। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে, যারা বাহিনীতে ছিল। দেশের মানুষের প্রতি অত্যাচার হয়েছে এটা ভুললে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে চললে দেশ এগিয়ে যাবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইশতেহার অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কাজ করে। সরকারি সব কাজে যেন গতিশীলতা ও জবাবদিহিতামূলক হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে দেশ।
সরকারের বদনাম হলেও দুর্নীতিবাজদের ছাড় নেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেনে, সরকারের বদনাম নিয়ে ভাবি না। যেই দুর্নীতি করুক তার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি কাজে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ের নিচ দিকেও অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। এজন্য নজরদারি রাখতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি রোধে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত জবাবদিহিতা না থাকলে কাজ সঠিকভাবে হয় না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আরেকটা অনুরোধ, পত্র-পত্রিকায় কী লিখল, সেটা দেখে নার্ভাস হওয়ারও কিছু নেই, ঘাবড়ানোও কিছু নেই। বরং দেখবেন এর কোনো সত্যতা আছে কি না? যদি না থাকে ওইটাকে (পত্রিকা) সোজা ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। ওইটা পড়ারও দরকার নেই। এটা হলো আপনাদের কাছে আমার পরামর্শ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেও অনেক পত্রিকা পড়ি না। কেন? দেশটা আমার। আমি দেশকে ভালোভাবে চিনি, জানি। সেই ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জন্ম নিয়েছি জাতির পিতার ঘরে, এই দেশের কীভাবে ভালো হয়, মন্দ হয়, আমাদের জানার কথা বেশি, আমাদের থেকে আর কেউ বেশি জানতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও দেশের পরিচালক। আমরা পাঁচবছরের জন্য আসি। আপনারা স্থায়ী সময় নিয়ে আসেন। আমরা দেশের মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করে এতদূর এসেছি। হঠাৎ করে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখল করে, টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসি নাই। তাই দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি-মানুষ আমার চেনা। দেশের উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য। সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কে কী লিখলো, সেটাতে ঘাবড়ে যাওয়া, সেটা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা উচিত না। নিজের আত্মবিশ্বাস, বিবেক-বিবেচনা নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করবেন। এ আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা নিয়ে কাজ করলে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
টানা চারবারের সরকারপ্রধান বলেন, আপনারাও দেশের পরিচালক। আমরা পাঁচ বছরের জন্য আসি। আপনারা স্থায়ী সময় নিয়ে আসেন। আমরা দেশের মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করে এতদূর এসেছি।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখল করে, টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসিনি। তাই দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি-মানুষ আমার চেনা। দেশের উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য। সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কে কি লিখল, সেটাতে ঘাবড়ে যাওয়া, সেটা নিয়ে বেশি দুশ্চিতা করা উচিত নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজের আত্মবিশ্বাস, নিজের বিবেক-বিবেচনা নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করবেন। এ আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে কাজ করলে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। ’
এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবারে বন্যা আসার আশঙ্কা আরও বেশি। একটা সময় প্রচণ্ড খরা ছিল। হিমালয়ের বরফ অনেক গলেছে। যে পানিটা চলে গেছে নদী ও সাগরে। যদি সাগরে পানি আরও উচ্চস্তরে পৌঁছে যায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সামনে শ্রাবণ-ভাদ্র। এ মাসে বন্যাটা বেশি দেখা দেয়। প্রথমে উত্তর দিকে, ভাদ্র মাসে যায় দক্ষিণ দিকে। সেইদিকে মাথায় রেখে এখন থেকে প্রস্তুত নিতে হবে।