Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিহাদ এয়ারের দুই কোটি টাকা পাচ্ছেন বাংলাদেশি দুই নারী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫৪:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮৭ জন দেখেছেন

ফাইল ছবি

নয় বছর আগে বিমানের দুই যাত্রীকে হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে দুই কোটি টাকা জরিমানা করেছে হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণের ওই টাকা পাবেন বাংলাদেশি দুই যাত্রী তানজিন বৃষ্টি ও তার মা নাহিদ সুলতানা যুথি। নাহিদ সুলতানা যুথি সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী।

নয় বছর আগে বাংলাদেশি ওই দুই যাত্রীকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি বিমানবন্দরে আটক হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে আবুধাবী থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজ।

ওই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি রিট আবেদনের দীর্ঘ শুনানির পর বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে এয়ারওয়েজ

কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল।

ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হেসেন কিউসি। তার সঙ্গে ছিলেন মো. আজিজ উল্লাহ ইমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েশ আল হারুনি।

রায়ে আদালত বলেছে, বাংলাদেশি যাত্রী দুই নারীকে আবুধাবি বিমানবন্দরে যে ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে তা অর্থদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। লিঙ্গ বা বর্ণ বিবেচনায় ভবিষ্যতে কোনো যাত্রীর সঙ্গে এ রকম আচরণ যাতে না করা হয়, সে বিষয়েও ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে সতর্ক করেছে আদালত।

নেগলিজেন্স ও ট্রট আইনের আলোকে ক্ষতিপুরণের এ রায় দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশি নাগরিক যখন দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন তখন তার সুযোগ-সুবিধা, অধিকার দেখভাল করার দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকতে বিমান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব দেশের বাইরে কোনো নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে সে বিষয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু আবুধাবি এয়ারপোর্টে হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্বে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আবুধাবি সরকারের কাছেও কোনো প্রকার অভিযোগ বা দাবি উপস্থাপন করেনি।

ফলে পররাষ্ট্র সচিব, সিভিল এভিয়েশন সচিব ও চেয়ারম্যান, এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইতিহাদের অপারেশন ম্যানেজার, কান্ট্রি ম্যানেজারসহ মোট সাতজনকে বিবাদী করে রিট আবেদনটি করা হয়।

এ আইনজীবী বলেন, আদালতের নির্দেশে ঘটনার ব্যাখ্যায় সত্যতা স্বীকার করেছিল ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। তবে তারা যাত্রীর আচরণকে দায়ী করেছিলেন। এ অভিযোগ প্রমাণের জন্য আদালতে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দাখিলের নির্দেশ দিলেও ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়নি জানিয়ে তা আর আদালতে দাখিল করেনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ওই বছরের ১৪ জুলাই রুলসহ আদেশ দেয়। আদেশে আদালত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। একই সাথে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কান্ট্রি ম্যানেজারকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

একইসঙ্গে আটক, হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ বিচারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এ দুই যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কান্ট্রি ম্যানেজার হাজির হয়ে ব্যাখ্য দেওয়ার পর মামলার রুল শুনানির শুরু হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের আদালত মামলাটি শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে প্রধান বিচারপতি রুল শুনানির জন্য মামলাটি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চে পাঠান।

শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এই বেঞ্চই রায় দিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

ইতিহাদ এয়ারের দুই কোটি টাকা পাচ্ছেন বাংলাদেশি দুই নারী

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৪:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০

নয় বছর আগে বিমানের দুই যাত্রীকে হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে দুই কোটি টাকা জরিমানা করেছে হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণের ওই টাকা পাবেন বাংলাদেশি দুই যাত্রী তানজিন বৃষ্টি ও তার মা নাহিদ সুলতানা যুথি। নাহিদ সুলতানা যুথি সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী।

নয় বছর আগে বাংলাদেশি ওই দুই যাত্রীকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি বিমানবন্দরে আটক হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে আবুধাবী থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজ।

ওই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি রিট আবেদনের দীর্ঘ শুনানির পর বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে এয়ারওয়েজ

কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল।

ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হেসেন কিউসি। তার সঙ্গে ছিলেন মো. আজিজ উল্লাহ ইমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েশ আল হারুনি।

রায়ে আদালত বলেছে, বাংলাদেশি যাত্রী দুই নারীকে আবুধাবি বিমানবন্দরে যে ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে তা অর্থদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। লিঙ্গ বা বর্ণ বিবেচনায় ভবিষ্যতে কোনো যাত্রীর সঙ্গে এ রকম আচরণ যাতে না করা হয়, সে বিষয়েও ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে সতর্ক করেছে আদালত।

নেগলিজেন্স ও ট্রট আইনের আলোকে ক্ষতিপুরণের এ রায় দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশি নাগরিক যখন দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন তখন তার সুযোগ-সুবিধা, অধিকার দেখভাল করার দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন : প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকতে বিমান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব দেশের বাইরে কোনো নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে সে বিষয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু আবুধাবি এয়ারপোর্টে হয়রানি, নির্যাতন ও গন্তব্যে যেতে না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্বে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আবুধাবি সরকারের কাছেও কোনো প্রকার অভিযোগ বা দাবি উপস্থাপন করেনি।

ফলে পররাষ্ট্র সচিব, সিভিল এভিয়েশন সচিব ও চেয়ারম্যান, এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইতিহাদের অপারেশন ম্যানেজার, কান্ট্রি ম্যানেজারসহ মোট সাতজনকে বিবাদী করে রিট আবেদনটি করা হয়।

এ আইনজীবী বলেন, আদালতের নির্দেশে ঘটনার ব্যাখ্যায় সত্যতা স্বীকার করেছিল ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। তবে তারা যাত্রীর আচরণকে দায়ী করেছিলেন। এ অভিযোগ প্রমাণের জন্য আদালতে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দাখিলের নির্দেশ দিলেও ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়নি জানিয়ে তা আর আদালতে দাখিল করেনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ওই বছরের ১৪ জুলাই রুলসহ আদেশ দেয়। আদেশে আদালত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। একই সাথে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কান্ট্রি ম্যানেজারকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

একইসঙ্গে আটক, হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ বিচারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এ দুই যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কান্ট্রি ম্যানেজার হাজির হয়ে ব্যাখ্য দেওয়ার পর মামলার রুল শুনানির শুরু হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের আদালত মামলাটি শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে প্রধান বিচারপতি রুল শুনানির জন্য মামলাটি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চে পাঠান।

শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এই বেঞ্চই রায় দিল।