নিজস্ব প্রতিবেদক :
এয়ারবাসের যাত্রী ও পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনা থেকে সরকার পিছিয়ে আসায় ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের উষ্মার মধ্যে ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এই যুদ্ধবিমান কিনতে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ইতালীয় কোম্পানি লিওনার্দো এসপিএ ইতালির সঙ্গে আগ্রহপত্র সই করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
লিওনার্দো এসপিএ ইতালি, বিএই সিস্টেমস এবং এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস কোম্পানির কনসোর্টিয়াম ইউরোফাইটার জিএমবিএইচের অধীনে তৈরি ও বাজারজাত হয় ইউরোফাইটার।
বিমানবাহিনীর ফেইসবুক পাতায় এক বিজ্ঞপ্তিতে লিওনার্দোর সঙ্গে আগ্রহপত্র সই হওয়ার তথ্য দিয়ে বলা হয়, মঙ্গলবার বিমান বাহিনী সদরদপ্তরে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং ঢাকায় ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর উপস্থিতিতে এই আগ্রহপত্র সই হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মুখ সারির যুদ্ধের অত্যাধুনিক মাল্টি-রোল কম্ব্যাট এয়ারক্রাফট হিসাবে কেনা হচ্ছে এই যুদ্ধবিমান। আগ্রহপত্রের আওতায় লিওনার্দো এসপিএ ইতালি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে ‘ইউরোফাইটার’ টাইফুন যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে।
দুই ইঞ্জিনের ইউরোফাইটার টাইফুন সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। বর্তমানে ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, অস্ট্রিয়া, সৌদি আরব ও ওমানের বিমান বাহিনীর বহরে এই সুপারসনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে।
তবে এ ধরনের কতটি যুদ্ধবিমান বাংলদেশ কিনবে, সেজন্য কত খরচ হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা সেখানে দেওয়া হয়নি।
লিওনার্দো কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোফাইটার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের সম্পৃক্ততা আছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ ‘কেনার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী ও দুটি পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনার বিষয় ‘পর্যালোচনার’ মধ্যে আমেরিকান কোম্পানি বোয়িংও তৎপর হয়ে ওঠে। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে দুপক্ষের দেনদরবারের মধ্যে ২০২৪ সালের অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছর চেয়ারে বসেই যে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেন, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। ডনাল্ড ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়গ থেকে বাঁচতে গত জুলাই মাসে অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
তাতে ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে বিমানের জন্য ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এরপর ইউরোপও নড়েচড়ে বসে। এয়ারবাস বিক্রির জন্য তারাও চাপ দিতে থাকে সরকারের ওপর।
গত জুন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাউটার ভ্যান ভার্স। এর পর থেকে কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
তবে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় উড়োজাহাজের প্রয়োজন হলে সেই চাহিদা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তরফ থেকে আসার নিয়ম রয়েছে। এখানে যার জন্য উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে, সেই বিমানকেই রাখা হচ্ছে অন্ধকারে।
চলতি মাসের শুরুতে ফ্রান্স দূতাবাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা একযোগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, উড়োজাহাজ কেনার আলোচনায় যেন এয়ারবাসকে ‘যৌক্তিকভাবে’ বিবেচনা করা হয়।
তারা ইউরোপে কয়েক বিলিয়ন ইউরোর বাংলাদেশি পণ্যের বাজার, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ, যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং দীর্ঘ অংশীদারত্বের কথা মনে করিয়ে দেন বারবার।
এরপর ২৬ নভেম্বর ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে এক প্রশ্নে জার্মান দূত র্যুডিগার লোটৎস বলেন, এয়ারবাস কেনার বিষয়ে ঢাকার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেখান থেকে সরে এলে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।
ইউরোপের বাজারে ‘শুল্কছাড়ের আলোচনার আবহও’ এয়ারবাস নিয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কারণে বদলে যেতে পারে বলে ইংগিত দেন তিনি।
তার ওই বক্তব্যের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘কমার্শিয়াল একটা ডিলের উপরে’ ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘সার্বিক সম্পর্ক নির্ভরশীল হবে’ বলে তিনি মনে করেন না।
এর মধ্যে মঙ্গলবার লিওনার্দো কোম্পানি থেকে ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কেনা হবে বলে তথ্য দিল বিমানবাহিনী।
নিজস্ব প্রতিবেদক 
























