Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউরোপীয়রা জানত আমিই নির্বাচনে জিতে আসব : প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৯১ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আমাদের আছে। ফ্রান্স জলবায়ু পরিবর্তনের (প্রভাব মোকাবিলার) জন্য ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আছে, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায়ও সুবিধা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি (জার্মানি সফরে)। তারা নিজেরাই জানত নির্বাচনে আমি জিতে আসব। যারা আমাকে চায়নি, তাদের মাধ্যমেই কথা ওঠে, প্রশ্ন উঠে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জার্মানি সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পাকিস্তানের নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করতে ১২/১৪ দিন সময় লাগলেও তাদের ইলেকশন ফ্রি-ফেয়ার। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সাথে সাথে মাত্র ২৪/৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটি ফ্রি-ফেয়ার না? সুতরাং এই রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। শক্তি আমাদের জনগণ, আমি সেটাই বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, দেশটিতে (পাকিস্তান) এখনতো বোধ হয় একটা সমঝোতায় এসেছে কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে কী হবে। এরকম যদি আমাদের দেশে হতো, তাহলে বোধহয় সমালোচনাকারীরা খুশি হতো। সেটা হয়নি দেখেই অনেকের মন খারাপ।

সংবাদ সম্মেলনে জার্মানি সফরে পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উঠেছে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগও নেই, মন্তব্যও নেই, প্রশ্ন নাই। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয় নাই, বেশির ভাগ কথা হয়েছে দ্বিপক্ষীয়।

বিদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় বলেছি, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি, আপনারা সেখানে আসেন, বিনিয়োগ করেন। সেই সঙ্গে নতুন যেসব প্রযুক্তি এসেছে, যে যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়েও আলোচনা করেছি।

আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (নিত্যপণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন সমস্যা হবে না। ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে। তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, রমজান তো কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য। রমজানে মানুষ কম খায়। কিন্তু আমাদের সাইকোলজি হচ্ছে রমজান আসলে যেন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদাটা বেড়ে যায়। রমজানে যে জিনিসগুলি বেশি দরকার যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি- এগুলি পর্য়াপ্ত পরিমাণেনে আনার ব্যবস্থা আছে। কাজেই এটা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। এ ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি অনেক আগে থেকেই।

সামনে রোজা আসছে, দুই কোটি মানুষের নগরীতে যানজট একটা বড় সমস্যা। এর প্রধান সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচল। ট্রাফিক আইন মানা হলে তা সম্ভব। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেবেন কিনা তা জানতে চান সাংবাদিক।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় আছে। এক্সপ্রেসওয়েটা এখন মাঝামাঝি জায়গায় ফার্মগেট পর্যন্ত করা হয়েছে। পুরোটা হয়ে গেলে সুযোগটা সবাই পাবে। তাছাড়া আরও পাঁচটা (রুট) মেট্রোরেল সারা ঢাকা জুড়ে হবে। সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আগামী পাঁচ বছরের সরকারের কাজের প্রাধান্য তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর অনেক কাজ করতে হবে। যেহেতু ২০২৬ সাল থেকে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা শুরু হবে তাই যে সময়টুকু পাব সেটাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথভাবে এগিয়ে যাওয়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

উন্নয়ন টেকসই করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সরকারের প্রধান গুরুত্বই থাকবে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির যেটা হয়েছে সেটা যেন টেকসই হয়। কারণ, যে পর্যায়ে থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা টেকসই করে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটা হচ্ছে জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে, সেটা আমরা সময় পেয়েছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত। এরমধ্যে যেগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য, অবৈধ মজুত ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর ধরে যে পরিবর্তন এসেছে তা তো স্বীকার করবেন। ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। একটু ফ্যান চাইত। এখন তা চায় না। ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো, আপনার কী মনে হয় না দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের কিছু কারসাজি আছে?

শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেলে বস্তার পর বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোর কী করা উচিত, আপনারাই বলুন কী করা উচিত? তাদের গণধোলাই দেওয়া দরকার। কারণ আমরা সরকার কিছু করলে বলবে, সরকার করেছে। পাবলিক যদি প্রতিকার করে, তাহলে সব থেকে ভালো, কেউ কিছু বলবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর দাম বাড়াবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যা হচ্ছে, তা অমানবিক কাজ। মানবতাবিরোধী কাজ। হাসপাতালগুলোর ওপর আক্রমণ। বাচ্চাদের কী দুরবস্থা। আমরা তো দেখছি, বিশ্বমোড়লেরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। প্যালেস্টাইনের সমস্ত জমি দখল করে ফেলছে, সেটা আগ্রাসন নয়, ইউক্রেনেরটা আগ্রাসন।

শেখ হাসিনা বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আমি উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যে সব প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সব প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত। অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সবার সামনে তুলে ধরি। আর তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।

চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাবো। ইতোমধ্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে— এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে একমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে একটা দেশ উন্নত হয়। গত ১৫ বছরে আমরা দেশটাকে যে উন্নত করতে পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের মন-মানোসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য— সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আগামী ৫ বছরে আমাদের কাজ হবে এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যেহেতু যাত্রা শুরু ২০২৬ সালে, যে সময়টুকু পাবো উন্নয়নশীল দেশ এটাকে যথাযথভাবে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেই কাজটা করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কমিটি করেছি, সবই করছি। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি— একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামি, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। ভোটের অধিকার, এমনকি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গেছে তাদেরও ভোটের অধিকার দিয়েছে এবং দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও পার্লামেন্টে এনে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া বসিয়েছিল।

তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকে না। তাদের শেকড়ের সন্ধানটা কোথায়? তাদের চিন্তা-চেতনা এমন একটা পরিবেশ হোক তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ এর নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণা সব দিক থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান এই রকম একটা ভাব ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর আছে এটা কিন্তু অপপ্রচারের কারণে অনেকটা ঢেকে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা গেলো, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারেনি। নির্বাচনের রেজাল্টটা কী? আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেলো ৩০০ সিটের মধ্যে। বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোট নিয়ে পেলো ৩০টা আসন। এরপর থেকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা।

বারবার সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার সামনে এটাই থাকবে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাকে যে আমরা স্থায়ী করেছি যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাব।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের কী দেখি? জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন, রেলে আগুন, বাসে আগুন! এটাই করে যাচ্ছে। এটা তো মানুষকে সেটা দেখতে হবে কারা মানুষের পাশে আছে। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আর রাজনীতি যদি ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা হলে তো মানুষ কিছু পাবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্ব মোড়লরাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের অবস্থান প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার কথা যাদেরই বলি- সবাই সমর্থন করে। কিন্তু উদ্যোগটা নেবে কে? এটিও একটি প্রশ্ন। যারা বিশ্ব মোড়ল, তারাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে আর বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ভুক্তভোগী আমরা। মানুষ যে গণহত্যার শিকার হয়েছে সেটা আমরা জানি।

পরাশক্তিগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাস করে। ফিলিস্তিনের সব জমি দখল করে রেখেছে, সেটি ইনভেশন নয়, ইউক্রেনেরটি ইনভেশন। এ দ্বিমুখী নীতি কেন হবে, সেটি আমার প্রশ্ন ছিল। আমি বলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকই সাহস করে বলবে না। নানাজনের নানা দুর্বলতা আছে, আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার কাছে ক্ষমতা হলো, ‘থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই’, একটি কথা আছে না, আমার কাছে সেটিই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারব। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নেই।

তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তা বন্ধ করতে দাবি জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারা ফেরত নিক। এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধরতে।

তিনি বলেন, কোনো কিছুতে আমাদের কোনো রকম উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সবচেয়ে সুস্থ অবস্থায় আছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। এটি অনেক দিন হয়ে গেছে। সেই সমস্যার সমাধান কোথায়? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি বারবার। আসলে মিয়ানমারের অবস্থা এত খারাপ! আর বিশ্বনেতাদের সঙ্গে যখন কথা বলি, সবাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান। কিন্তু আসলে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এই হলো বাস্তবতা।

নতুন কোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা কী করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটি ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি তা নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে আমি আমার কণ্ঠ সোচ্চার করি, প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই- এই কথাটি বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম করার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না। সেটি হলো বাস্তব। না হলে আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও এ অবস্থা আমরা দেখেছি। আমার যেটুকু ক্ষমতা, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সচেতন। এর চেয়ে বড় কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। সেই দক্ষতাও আমার নেই।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাবনায় সেপটিক ট্যাংকে আটকা পড়ে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

ইউরোপীয়রা জানত আমিই নির্বাচনে জিতে আসব : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আমাদের আছে। ফ্রান্স জলবায়ু পরিবর্তনের (প্রভাব মোকাবিলার) জন্য ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আছে, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায়ও সুবিধা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি (জার্মানি সফরে)। তারা নিজেরাই জানত নির্বাচনে আমি জিতে আসব। যারা আমাকে চায়নি, তাদের মাধ্যমেই কথা ওঠে, প্রশ্ন উঠে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জার্মানি সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পাকিস্তানের নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করতে ১২/১৪ দিন সময় লাগলেও তাদের ইলেকশন ফ্রি-ফেয়ার। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সাথে সাথে মাত্র ২৪/৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটি ফ্রি-ফেয়ার না? সুতরাং এই রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। শক্তি আমাদের জনগণ, আমি সেটাই বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, দেশটিতে (পাকিস্তান) এখনতো বোধ হয় একটা সমঝোতায় এসেছে কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে কী হবে। এরকম যদি আমাদের দেশে হতো, তাহলে বোধহয় সমালোচনাকারীরা খুশি হতো। সেটা হয়নি দেখেই অনেকের মন খারাপ।

সংবাদ সম্মেলনে জার্মানি সফরে পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উঠেছে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগও নেই, মন্তব্যও নেই, প্রশ্ন নাই। নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয় নাই, বেশির ভাগ কথা হয়েছে দ্বিপক্ষীয়।

বিদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় বলেছি, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি, আপনারা সেখানে আসেন, বিনিয়োগ করেন। সেই সঙ্গে নতুন যেসব প্রযুক্তি এসেছে, যে যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়েও আলোচনা করেছি।

আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (নিত্যপণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন সমস্যা হবে না। ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে। তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, রমজান তো কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য। রমজানে মানুষ কম খায়। কিন্তু আমাদের সাইকোলজি হচ্ছে রমজান আসলে যেন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদাটা বেড়ে যায়। রমজানে যে জিনিসগুলি বেশি দরকার যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি- এগুলি পর্য়াপ্ত পরিমাণেনে আনার ব্যবস্থা আছে। কাজেই এটা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। এ ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি অনেক আগে থেকেই।

সামনে রোজা আসছে, দুই কোটি মানুষের নগরীতে যানজট একটা বড় সমস্যা। এর প্রধান সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচল। ট্রাফিক আইন মানা হলে তা সম্ভব। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেবেন কিনা তা জানতে চান সাংবাদিক।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় আছে। এক্সপ্রেসওয়েটা এখন মাঝামাঝি জায়গায় ফার্মগেট পর্যন্ত করা হয়েছে। পুরোটা হয়ে গেলে সুযোগটা সবাই পাবে। তাছাড়া আরও পাঁচটা (রুট) মেট্রোরেল সারা ঢাকা জুড়ে হবে। সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আগামী পাঁচ বছরের সরকারের কাজের প্রাধান্য তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর অনেক কাজ করতে হবে। যেহেতু ২০২৬ সাল থেকে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা শুরু হবে তাই যে সময়টুকু পাব সেটাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথভাবে এগিয়ে যাওয়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

উন্নয়ন টেকসই করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সরকারের প্রধান গুরুত্বই থাকবে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির যেটা হয়েছে সেটা যেন টেকসই হয়। কারণ, যে পর্যায়ে থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা টেকসই করে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটা হচ্ছে জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে, সেটা আমরা সময় পেয়েছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত। এরমধ্যে যেগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য, অবৈধ মজুত ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর ধরে যে পরিবর্তন এসেছে তা তো স্বীকার করবেন। ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। একটু ফ্যান চাইত। এখন তা চায় না। ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো, আপনার কী মনে হয় না দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের কিছু কারসাজি আছে?

শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেলে বস্তার পর বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোর কী করা উচিত, আপনারাই বলুন কী করা উচিত? তাদের গণধোলাই দেওয়া দরকার। কারণ আমরা সরকার কিছু করলে বলবে, সরকার করেছে। পাবলিক যদি প্রতিকার করে, তাহলে সব থেকে ভালো, কেউ কিছু বলবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর দাম বাড়াবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যা হচ্ছে, তা অমানবিক কাজ। মানবতাবিরোধী কাজ। হাসপাতালগুলোর ওপর আক্রমণ। বাচ্চাদের কী দুরবস্থা। আমরা তো দেখছি, বিশ্বমোড়লেরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। প্যালেস্টাইনের সমস্ত জমি দখল করে ফেলছে, সেটা আগ্রাসন নয়, ইউক্রেনেরটা আগ্রাসন।

শেখ হাসিনা বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আমি উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যে সব প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সব প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত। অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সবার সামনে তুলে ধরি। আর তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।

চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাবো। ইতোমধ্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে— এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে একমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে একটা দেশ উন্নত হয়। গত ১৫ বছরে আমরা দেশটাকে যে উন্নত করতে পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের মন-মানোসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য— সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আগামী ৫ বছরে আমাদের কাজ হবে এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যেহেতু যাত্রা শুরু ২০২৬ সালে, যে সময়টুকু পাবো উন্নয়নশীল দেশ এটাকে যথাযথভাবে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেই কাজটা করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কমিটি করেছি, সবই করছি। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি— একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামি, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। ভোটের অধিকার, এমনকি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গেছে তাদেরও ভোটের অধিকার দিয়েছে এবং দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও পার্লামেন্টে এনে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া বসিয়েছিল।

তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকে না। তাদের শেকড়ের সন্ধানটা কোথায়? তাদের চিন্তা-চেতনা এমন একটা পরিবেশ হোক তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ এর নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণা সব দিক থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান এই রকম একটা ভাব ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর আছে এটা কিন্তু অপপ্রচারের কারণে অনেকটা ঢেকে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা গেলো, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারেনি। নির্বাচনের রেজাল্টটা কী? আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেলো ৩০০ সিটের মধ্যে। বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোট নিয়ে পেলো ৩০টা আসন। এরপর থেকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা।

বারবার সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার সামনে এটাই থাকবে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাকে যে আমরা স্থায়ী করেছি যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাব।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের কী দেখি? জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন, রেলে আগুন, বাসে আগুন! এটাই করে যাচ্ছে। এটা তো মানুষকে সেটা দেখতে হবে কারা মানুষের পাশে আছে। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আর রাজনীতি যদি ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা হলে তো মানুষ কিছু পাবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্ব মোড়লরাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের অবস্থান প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার কথা যাদেরই বলি- সবাই সমর্থন করে। কিন্তু উদ্যোগটা নেবে কে? এটিও একটি প্রশ্ন। যারা বিশ্ব মোড়ল, তারাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে আর বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধের ভুক্তভোগী আমরা। মানুষ যে গণহত্যার শিকার হয়েছে সেটা আমরা জানি।

পরাশক্তিগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দ্বিমুখী নীতিতে বিশ্বাস করে। ফিলিস্তিনের সব জমি দখল করে রেখেছে, সেটি ইনভেশন নয়, ইউক্রেনেরটি ইনভেশন। এ দ্বিমুখী নীতি কেন হবে, সেটি আমার প্রশ্ন ছিল। আমি বলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকই সাহস করে বলবে না। নানাজনের নানা দুর্বলতা আছে, আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার কাছে ক্ষমতা হলো, ‘থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই’, একটি কথা আছে না, আমার কাছে সেটিই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারব। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নেই।

তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তা বন্ধ করতে দাবি জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারা ফেরত নিক। এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধরতে।

তিনি বলেন, কোনো কিছুতে আমাদের কোনো রকম উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সবচেয়ে সুস্থ অবস্থায় আছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। এটি অনেক দিন হয়ে গেছে। সেই সমস্যার সমাধান কোথায়? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি বারবার। আসলে মিয়ানমারের অবস্থা এত খারাপ! আর বিশ্বনেতাদের সঙ্গে যখন কথা বলি, সবাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান। কিন্তু আসলে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এই হলো বাস্তবতা।

নতুন কোনো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা কী করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটি ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি তা নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে আমি আমার কণ্ঠ সোচ্চার করি, প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই- এই কথাটি বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম করার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না। সেটি হলো বাস্তব। না হলে আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও এ অবস্থা আমরা দেখেছি। আমার যেটুকু ক্ষমতা, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সচেতন। এর চেয়ে বড় কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। সেই দক্ষতাও আমার নেই।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।