চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি :
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির বড় উদহারণ বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলে দাবি করে তার পদত্যাগ চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
বুধবার (২৩ জুলাই) চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা উপলক্ষ্যে সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের একজন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আছে, আপনারা তাকে চেনেন? উনি ড. ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় এসেছেন। তার স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই। আপনারা উনার কোনো একটিভিটি দেখেছেন? তিনি যে বেতন নেন তা হারাম হবে। তিনি সরকারি চাকায় যে গাড়িতে চড়েন তা জনগণের সঙ্গে বেইমানি। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কোনো কাজের না। তিনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বুঝে না, চিকিৎসা বুঝেন না। উনার একমাত্র যোগ্যতা তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলেন এবং ড. ইউনূসের খুব কাছের মানুষ। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লইয়া আমরা কি করিবো? এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে যে বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে তার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও আগের মতো, আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও আগের মতো।
এ সময় হাসনাত বলেন, দল-মত নির্বিশেষে আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। আপনারা দেখেছেন, লাশের ওপর দিয়ে এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারও রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। আমরা শোকাহত। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি এই লাশের ওপর দিয়ে আবার ফেরার চেষ্টা করে আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে প্রতিহত করবো।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে বাংলাদেশে আকাশ থেকে বিমান ভেঙে পড়ে, ভবন ভেঙে পড়ে, আমরা সেই রকম বাংলাদেশ চাই না। হাসিনার আমলে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে, পূর্বের সেই দুর্নীতিগুলোর তদন্ত করা উচিত। এই বিমানগুলো হাসিনার আমলে কেনা। সেই সময় হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আমরা বিমান বাহিনীর ভাইদের নিরাপত্তা চাই। আপনাদের নিরাপত্তার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে এসব সঠিক কি না, ঝুঁকিমুক্ত কি না আপনাদের বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার তো আমরা ক্লোজ করেছি, ভবিষ্যতে উত্থানের যে কোনো সম্ভাবনাকে আমরা একদম নাই করে দেবো। এ জন্য আপনাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা একসঙ্গে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। যে বাংলাদেশের রাস্তায় বের হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে না। যে বাংলাদেশে সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা থাকবে। যে বাংলাদেশে আপনার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠালে ভবন ভেঙে পড়বে, আকাশ থেকে বিমান ভেঙে পড়বে, এই ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা আমরা চাই না।
এর আগে বাংলাদেশের সিস্টেম সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এই সরকার যেন অন্য কিছু চিন্তা না করে সে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। বুধবার সকালে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘শহীদদের মায়েরা কান্না করতে করতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছে। নতুন আরেক জুলাই এসেছে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান বিচার লক্ষ্য করা যায়নি। জুলাই ঘটনার জন্য দায়ী খুনি হাসিনাসহ জড়িত সকলের বিচার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো ধরনের বিচার না করে অন্য কোনো কিছু চিন্তা না করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এদিন কর্মসূচির শুরুতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সার্কিট হাউজে কুশল বিনিময় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ সময় জুলাই আন্দোলনের নেতাদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। স্বজন হারিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দের কাছে।
পরে ঢাকার বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে চাঁদপুর সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত শোক র্যালি করেন নেতাকর্মীরা। সেখানে পথসভা শেষে হাজীগঞ্জে শহীদ আজাদ চত্বরের উদ্বোধন এবং সবশেষ শাহরাস্তির দোয়াভাঙ্গায় পদযাত্রা শেষে তারা চাঁদপুর থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হন।