সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
দীর্ঘদিনের স্থবিরতার পর আবারও গতি ফিরেছে বহুল প্রত্যাশিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পে। সরকার ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন আশা জেগেছে। এ রেলপথ চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ সহজতর হবে, দূরত্ব কমবে প্রায় ১১২ থেকে ১৩০ কিলোমিটার এবং সময় সাশ্রয় হবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। একই সঙ্গে কৃষি ও শিল্পপণ্য পরিবহনেও গতি আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। শুরুতে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরামর্শক নিয়োগ ও নকশা চূড়ান্তে বিলম্ব হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
এরপর দীর্ঘ ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৬ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শফিউর রহমানের স্বাক্ষর করা চিঠিতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘বগুড়া হতে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে মূলধন ব্যয় খাতের ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ বাবদ অর্থ অবমুক্তকরণ হলো।
এতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ অংশের ৪২০ একর জমির জন্য ৯৬০ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নোটিশ দেওয়া শুরু করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অংশে ৪২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য উদ্যোগ নিই। আমরা প্রাক্কলিত মূল্য ১১২৭ কোটি টাকা ধার্য করি। ইতোমধ্যে আমরা ৯৬০ কোটি টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে পেয়েছি।
মোট নয়টি নতুন স্টেশন তৈরি হবে। এর মধ্যে বগুড়ায় চারটি এবং সিরাজগঞ্জে পাঁচটি। নতুন স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া।
তবে ২০১৮ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে ভারত সরকারের দেওয়া কথা ছিল। সেটি বাতিল হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, অর্থায়ন সংক্রান্ত একটি জটিলতা ছিল। যেহেতু এটি ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট এর আওতাভুক্ত প্রকল্প, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের কারণে প্রকল্পটি এখন ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে ডিলিস্ট করা হচ্ছে। এ কারণে ডিলিস্টিং প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থরক্ষা কমিটির সংগঠক নব কুমার পাল বলেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়। এই দুর্নীতি যেন না হয় এবং সঠিকভাবে সঠিক জমির মালিক যেন টাকাটি পায়, এটি আমাদের দাবি। সিরাজগঞ্জের রায়পুর স্টেশনকে কেন্দ্র করে জংশনটি হতে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, যদি এই রেলপথটা হয়, তাহলে সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সবদিক থেকেই লাভবান হবেন। কারণ অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের পণ্য সামগ্রী রেলপথে নেওয়া যাবে। খরচও কম হবে।
সিরাজগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন ধরে এ রেলপথ চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০১৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তবে নানা কারণে অগ্রগতি মন্থর হয়। এবার নতুন বরাদ্দের ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি ফিরবে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।
সব মিলিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু সিরাজগঞ্জ বা বগুড়া নয় বরং পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষই লাভবান হবে। যাতায়াতের খরচ ও সময় বাঁচবে, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে।
উল্লেখ্য, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায় এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। বাড়তি পথ ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।