সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে বোকা বানিয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আগামীতেও তাদের অধীনে নির্বাচন হলে দেশে পরিবর্তন আসবে না, শান্তি আসবে না।
রোববার (০৯ জুলাই) বিকেলে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা ময়দানে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে, যার মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এজন্য তরুণ সমাজকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজপথে নামতে হবে। আসুন সবাই উঠে দাঁড়াই।
তিনি বলেন, সরকারকে উৎখাত করার জন্য, দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করার জন্য, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই জীবন বাজি রেখে আমরা এই সংগ্রাম লড়াইয়ে আসুন আমরা সবাই রুখে দাঁড়াই। এই সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। তারা জমিদারি মনে করে, ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, জনগণকে প্রজার ন্যায় নির্যাতন করে, হত্যা করে।
তিনি বলেন, আজকে সমগ্র জাতি সংকটের মুখে আছে। এই জাতির অস্তিত্ব থাকবে কিনা, স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব কিনা, সেটা এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনে আরেকটি নির্বাচন এসে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আবারো ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে। বলছে, সংবিধান দিয়ে নির্বাচন হবে, যে সংবিধান তারা অসাবিধানিকভাবে বেআইনিভাবে কেটে ছিঁড়ে তৈরি করে রেখেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের এই সমাবেশ সাধারণ সমাবেশ নয়, ব্যতিক্রমী সমাবেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চারটি সমাবেশ অত্যন্ত সুন্দরভাবে সফল করেছে তরুণরা। সিলেটে রাত দেড়টার সময় মাঠ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে এক লাখ ৪৮ কোটি টাকা এক বছরে লোকসান দিয়েছে। পদ্মা সেতু ১০ হাজার কোটি টাকায় করা যেত, সেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বছরের পর বছর সারের দাম বাড়তে থাকে। করোনার সময় লুটপাট হয়েছে, শিক্ষাখাতে লুটপাট হয়েছে। আমরা দুটো নির্বাচন দেখেছি। প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগ মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এই নির্বাচন ব্যবস্থাতে কখনোই বাংলাদেশের শান্তি আসবে না, স্থিতিশীলতা আসবে না। তাই নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারেক রহমান আওয়াজ তুলেছেন, বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান তুলেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই তারুণ্যের সমাবেশের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, একাত্তরের যুদ্ধ করেছি দেশকে স্বাধীন করবার জন্য, এখানে অনেকে বসে আছেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতা, আজকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই বৃদ্ধ বয়সে খালেদা জিয়া কারাগারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন; কারণ একটাই দেশের জনগণকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তার ওপর মামলা প্রত্যাহার করে শান্তির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা চেয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কেন বলেছি, মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তাই। নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। না হলে আওয়ামী লীগ যদি থাকে, কেউ ভোট দিতে পারবে না। আগে অনেকে কেন্দ্রেও যেতে পারেনি। আমাদের এক কর্মীর দুই পা কেটে ফেলা হয়েছিল। সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। তার স্ত্রী লুনা বলেছেন, তার মেয়ে যখন সামনে আসে, তখন তিনি কথা বলতে পারেন না। যখন ইলিয়াস আলীকে হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হয়, এখনো তার মা-সন্তানরা বাসার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, ৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। এখানে অনেকে আছে যারা যুদ্ধ করেছেন। কেন যুদ্ধ করেছিলেন, একটিমাত্র কারণে আমরা সকলের মতপ্রকাশ করব, নিজেদের অধিকারকে নিশ্চিত করব, সকলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে, চিকিৎসার উন্নতি হবে। শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করেছিলেন, এই দেশ এই রকম থাকবে না, তাই তিনি বাক্শাল তৈরি করেছিলেন। আজকে আবার শেখ হাসিনা ভিন্নভাবে একদলীয় সরকারের মাধ্যমে বাকশাল চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। দুইটা নির্বাচন করেছেন আগে, বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএমএ জিলানীর সভাপতিত্বে এবং যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।