নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি দেলোয়ার। তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কোনো রাজনৈতিক পদ না থাকলেও অনৈতিকভাবে দলের প্রভাব খাটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ দেলোয়ারের বিরুদ্ধে।
র্যাবের দাবি, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর করা মামলার এজাহারে দেলোয়ারের নাম না থাকলেও আসামিরা সবাই তারই লোক। তারা একত্রে চলাফেলা করেন এবং নানা অপকর্ম করেন।
জানা গেছে, বছরখানেক আগের পেশায় সিএনজিচালক দেলোয়ার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাতারাতি বনে যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ডন। গড়ে তোলে দেলোয়ার বাহিনী। তারপর থেকেই বেপরোয়া সে। এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ। তাদের আটকের খবরে স্বস্তি ফিরে আসে এলাকায়। দাবি জানান দ্রুত সাজা নিশ্চিতের।
এছাড়াও আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে থেকেই একাধিক খুন ও মাদক মামলার আসামি দেলোয়ার। এলাকাবাসীদের একজন বলেন, উচিত বিচার দিয়েন। আজকে আমার বোনেরে ধর্ষণ করছে কাল মারে করবে পরশুদিন আরেকজনকে করবে।
আরেকজন বলেন, আজকে তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও কোনো পদে না থেকেও তার দাপটে কোণঠাসা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করি কিন্তু এদেরকে কখনও দেখিনি আওয়ামী লীগ করতে। যারা সন্ত্রাসী কাজ করছে তারা নিজের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন : গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন : আসামি রহিম-রহমত রিমান্ডে
নোয়াখালী বেগমগঞ্জ এখলাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য বলেন, আলমগীর কবির আলো এই দেলোয়ারকে যোগ দান করিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। এরপর থেকে এলাকায় অপকর্ম বেড়ে গেছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানায়, এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে দেলোয়ার ও বাদলকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, এই দেলোয়ার স্থানীয় মানুষের কাছে একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার অন্য সহযোগীরা এলাকায় বিভিন্ন সময়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করতো।
এই দেলোয়ার বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা চাঁদাবাজি, অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি, মাদক ব্যবসা, হুমকি ধমকি দিয়ে টাকা আদায় করতো। ওই রাতে যে নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে তাকে নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও করে পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আাদায় করার পরিকল্পনা ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে যতটুকু জেনেছি তারা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। আমরা বাকিদের ধরতেও অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘরে ঢুকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর রোববার (৪ অক্টোবর) ফেসবুকে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়। ওই ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।