নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনগণকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে আর কোনো নির্বাচনী খেলা খেলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ মাঠে নেমে এসেছে। আমাদের এবারের লড়াই জীবন-মরণের লড়াই। এজন্য সরকারকে মানে মানে সরে যেতে আহ্বান জানাই।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এই গণমিছিল কেন? একটাই দাবি- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদের আর কোনো দাবি নেই। এক দফা এক দাবি। তারা মনে করেছে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মত এবারও একটা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে যাবে। এটা কি বাংলার মানুষ হতে দেবে? আমরা কেউই হতে দেবো না।
ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে এবার কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। এবার লড়াই জীবনপণ লড়াই। এবারের আন্দোলনে সরকারের পতন করা হবে। মানে মানে সরে না গেলে রাজপথেই সরকার পতন ঘটানো হবে।
নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে? হবে না। একটা নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, তাই না? সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। কী লজ্জাহীন এরা (নির্বাচন কমিশন)! এই নির্বাচন কমিশন দুইটা দলকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, নিবন্ধন দিয়েছে, তাদের কেউ চেনে না। কেউ চেনে? ভুয়া, ভুয়া। তাহলে কেন দিয়েছে? দিয়েছে এই জন্য যে, এদের দিয়ে তারা (সরকার) একটা নির্বাচন খেলা খেলবে, তাই না? এই খেলা এবার খেলতে দেওয়া হবে না। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবার ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, তাদের (জনগণ) অধিকার রক্ষার জন্য, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা, সেই বাস্তবায়ন করার জন্য, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছি, যে বহুদলীয় গণতন্ত্র পেয়েছি, তাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য এবার আমাদের লড়াই জীবনপণ লড়াই।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো ভয়-ভীতি, জুলুম কারাগার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সকক্ষম হব। আমরা এক দফা দিয়েছি। রাষ্ট্রসংস্কারর জন্য ৩০ দফা দিয়েছি। আমরা একটা নতুন রাষ্ট্র তৈরি করব। এখানে মানুষ যেন সম্মানের সঙ্গে, ইজ্জতের সঙ্গে থাকতে পারে— তার ব্যবস্থা করব। আমার যুবকরা যেন চাকরি পায় তার ব্যবস্থা করব। সবাই যেন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ এখন একতাবদ্ধ হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের একটাই দাবি এই অবৈধ সরকার-হাসিনা সরকার নিপাত যাক।
তিনি বলেন, এই সরকার অবৈধ সরকার। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, আমাদের পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। তারা আমাদের বিচার বিভাগকেও ধ্বংস করেছে। এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে কি আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে? যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের যতই কারাগারে ঢোকাও, যতই ওপর নির্যাতন, লাঠি চার্জ করো, টিয়ার গ্যাস মারো; জনগণ রাজপথে নেমে এসেছে, শেখ হাসিনার পতন না ঘটিয়ে জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না।
এ সময় তিনি বিএনপির দাবিগুলো পুনরায় তুলে ধরে বলেন, নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছি, যে নতুন লড়াই শুরু করেছি, সেই লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য আসুন সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এই গণমিছিলের মাধ্যমে তাদের (ক্ষমতাসীন দল) জানিয়ে দেই— তোমাদের দিন শেষ, পদত্যাগ কর। যদি কথা শোনে ভালো, না শুনলে ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা আর থামব না, আমাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থামব না, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত থামব না। আমরা এগিয়ে যাব।
পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতই টিয়ার গ্যাস মার, যতই লাঠিচার্জ কর এই বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বক্তব্যের সময় এটা নয়, এখন হচ্ছে কাজের সময়। বেগম খালেদা জিয়া এখনও কারাগারে। তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশের বাইরে। তাকে আনতে হবে। আমার হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ছাত্রনেতা, যুবনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা— তাদের মুক্ত করতে হবে? আর সেজন্য শেখ হাসিনাকে সবার আগে পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে।
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি দুই দিন পর আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
গণমিছিলের সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
গণমিছিলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী, সমর্থক অংশ নিয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, মুক্তিযোদ্ধাদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, তাঁতীদল, ওলামাদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে গণমিছিলে যোগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা মিছিল দিচ্ছেন।