নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সেন্টমার্টিন দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারলে আওয়ামী লীগ সরকার তা আগেই দিয়ে দিত। আমেরিকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে নয়, কথা বলেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে।
শুক্রবার (২৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘আগামীর বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে ‘বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব’ বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমেরিকা নিজের স্বার্থ বাগাতে দ্বিধা বোধ করে না। অগণতান্ত্রিক দেশের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য শেখ হাসিনা আমেরিকার কাছে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের চিত্র তুলে ধরেছে। অথচ তারা বুঝে গেছে এগুলো সব নাটক।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্টমার্টিন দিলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। কিন্তু আমি বলব, সেন্টমার্টিন দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারলে তা আগেই দিয়ে দিতেন। আমেরিকা তো সেন্টমার্টিন নিয়ে কথা বলেনি। তারা বলেছে, এই দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে।
‘যেখানে আওয়ামী লীগ থাকে, সেখানে গণতন্ত্র থাকে না’ বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ দেশের গণতন্ত্র রুক্ষ। প্রধানমন্ত্রী কোন চেয়ারে বসে আছেন তা তার হয়তো মনে নেই। এই দায়িত্বে থেকে কীভাবে কথা বলতে হয়, তাও তিনি হয়তো জানেন না। একজন কূটনৈতিকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। কূটনৈতিকরা সাধারণত সামনে কাউকে হ্যাঁ বলেন না; আবার না-ও বলেন না।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথা বলেছেন, যদি পশ্চিমারা গার্মেন্টস শিল্প বা পোশাক নেয়া বন্ধ করে দেয়, তখন কি হবে? এ দেশের অর্থনীতির কি হবে? জানি না প্রধানমন্ত্রী কেন এভাবে কথা বলছেন। তিনি জনগণের কথা ভাবেন না। তিনি জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন।
গয়েশ্বর বলেন, জানি না, প্রধানমন্ত্রী কেন এভাবে কথা বলছেন। তিনি নিজেরটা বোঝেন। জনগণের কথা ভাবেন না। তিনি তার পরিবারের প্রতিশোধ নিচ্ছেন জনগণের ওপর। তিনি অনেক মায়ের বুক খালি করেছেন।
তিনি বলেন, এই সরকারের থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। তারা কখন যাবে, তা আমি জানি না। তবে যেতে হবে তাদের। কারণ তাদের স্টেক হোল্ডাররা নড়বড়ে হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় মেজর জিয়া যুদ্ধের ডাক না দিলে আওয়ামী লীগ ভারত অবধি গিয়েও কিছু করতে পারত না। গণতন্ত্রের প্রতিফলনের জন্যই স্বাধীনতা যুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আজ গণতন্ত্রের দুর্দশা চলছে। যেখানে শেখ হাসিনা রয়েছে, সেখানে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র এখন করোনায় আক্রান্ত।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে এখন অপটিমাম রিজার্ভ নেই। ইউরোপে আমরা যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করি, শেখ হাসিনার কারণে যদি তা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশ কীভাবে বাঁচবে? তিনি নিজের কথা ভাবেন, দেশের কথা ভাবেন না। ক্ষমতায় এসে বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছেন। অথচ আপনি যে পরিমাণ বাবাদের হত্যা করেছেন, তারা যদি প্রতিশোধ নিতে আসে, তাহলে কী করবেন?
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে আমাদের (বিএনপির) শক্তি আছে কি-না। আমি বলব যে হ্যাঁ, যথেষ্ট শক্তি আছে। জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এটাই আমাদের শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির জন্য সরকার জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। মূলত যারা দেশের টাকা পাচার করে, দুর্নীতি করে, তারাই শেখ হাসিনার সরকার চায়। কিন্তু জনগণ তা চায় না।
গয়েশ্বর বলেন, ৭১ সালের যুদ্ধ কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য হয়েছিল। তখন স্বাধীনতার কথা উঠে আসেনি। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ডাক না দিতেন তাহলে কিন্তু এই দেশ স্বাধীন হতো না। কারণ সেই সময়ের আওয়ামী নেতারা সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের ডাক শুনে ফিরে এসেছেন।
ধর্মীয় বিশ্বাস মানেই কি জঙ্গিবাদ?- প্রশ্ন রেখে গয়েশ্বর বলেন, ভারত তো হিন্দুত্ববাদ কায়েম করছে, অথচ মুসলিম দেশ হয়ে বাংলাদেশের মানুষ নামাজ, আযান দিতে পারবে না, এটা তো হয় না।
‘আগামীর বাংলাদেশের’ চেয়ারম্যান মো: শাহ আলমের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুব জাগপার সভাপতি আমীর হোসেন আমু প্রমুখ।