Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমেরিকায় না গেলে আমাদের কিছু যায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই, আটলান্টিক পাড়ের আমেরিকায় না গেলে কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো।

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে গড়ে উঠা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। এটা আজ প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। মানুষের কল্যাণে কাজ করে। জাতির পিতা আমাদের সেটা শিখিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর বারবার আঘাত, হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ-খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়? আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কল্যাণ হয়। মানুষের কল্যাণে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা যেসব কাজ করি, আওয়ামী লীগ যেসব পরিকল্পনা নেয়, প্রকল্প নেয়, তা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়। আমাদের মাটি, মানুষ, পরিবেশ, আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তার ফলে আমাদের প্রতিটি প্রকল্পই সাফল্য অর্জন করে। মানুষ তার সুফল পায়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে জানান, সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে যোগাযোগব্যবস্থায়। ২০০৮ সালের বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২৩ সালের তুলনা করলেই সেটা দেখা যাবে। এক দিনে একশ সেতু উদ্বোধন পৃথিবীতে কোনো সরকার করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে। দেশে স্থিতিশীলতা না থাকলে এই উন্নতি হতো না। গত ১৪ বছর ধরে সবক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সবক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেয়া টেলিভিশনে বসে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। করুন, কে কী বলল আমরা দেখব না। আমরা আমাদের কাজ করে যাবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে গড়ে উঠা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। এটা আজ প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। মানুষের কল্যাণে কাজ করে। জাতির পিতা আমাদের সেটা শিখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সংগ্রামী অতীত তুলে ধরে দলটির সবচেয়ে বেশি সময়ের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।

কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজের পায়ে চলবো। নিজের দেশকে গড়ে তুলবো। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে— ও নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নাই। ৩০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করবো। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো। আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরও চাঙা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলবো— ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয় নাই। তারা (বিএনপি) আবার তাদের (আমেরিকা) কাছে ধরণা দেয়। এতকিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলবো— যারা অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী আছেনৃ আমরা তো লেখাপড়া এত বেশি জানি না। শুধু দেশের মাটি মানুষকে চিনি। বাংলাদেশ, নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।

জনগণের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর বাংলাদেশ কী ছিল, এখন বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে, কেউ তুলনাটা বিবেচনা করলেই পরিবর্তনটা দেখতে পারবেন। একই দিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা, এটা কী কোনো সরকার আগে করেছে, পারেনি। কে পেরেছে? আওয়ামী লীগ। আজকে আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, এখন আমাদের বেকারত্ব মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও থাকবে না। যদি কেউ উদ্যোগ নেয় সেও কাজ করতে পারবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। আমাদের গ্রামের অর্থনীতি অনেক মজবুত। গ্রামের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষকদের আমরা সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি, দুই কোটি ১০ লাখ কৃষককে কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকির টাকাটা তার ব্যাংকে চলে যায়। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এক কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন কৃষক পুরো বাংলাদেশে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এখন তারা সেখানে বসে টাকা পেয়ে যায়। ধান কাটার মৌসুমে মানুষ পাওয়া যায় না, মজুরের দাম বেড়ে গেছে। আমি আহ্বান করেছি আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাঠে চলে গেছে, কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, জনগণের সঙ্গে, জনগণের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করলে— জনগণ কিন্তু সেটার মর্যাদা দেয়। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে, ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথাটা মাথায় রেখে জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। অশুভ শক্তি বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদের করাল গ্রাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে অধিকার সবারই থাকবে।’ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও এখানে হবে বলে জানান তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ শতভাগ দিতে পেরেছি, এখন যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লাও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এক সময় যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করেছিল, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। তার কারণে কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আমি জানি মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমরা তো লোডশেডিং একেবারে দূর করে দিয়েছিলাম, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো আর করোনাভাইরাস যদি না দেখা দিতো, আজকে যদি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা না দেখা দিতো, মুদ্রাস্ফীতি না দেখা দিতো, তাহলে মানুষের কষ্ট হতো না। আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিসটা বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে, সেটা কষ্ট করে আমাদেরকে জোগাড় করতে হচ্ছে।

জ্বালানির সুখবর জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আমরা আরো কয়েকটা দেশের সঙ্গে করছি যাতে গ্যাস কিনতে পারি। এই কষ্ট দূর করতে পারি। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট বাড়ে, বিএনপি-জামায়াতের আমলে তো বিদ্যুৎ ছিলই না। তখন মানুষ হাহাকার করত। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসার্টে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে ১৮জন কৃষক হত্যা করছিল। শ্রমিকের মজুরি দাবি করেছিল বলে ২৭ জন শ্রমিককে রোজার সময় তাদের হত্যা করেছিল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লা পাওয়াই যাচ্ছে না। আমাদেরও পেতে সমস্যা হচ্ছে। জানি গরমে সমস্যা হচ্ছে। আমরা তো লোডশেডিং দূরই করে দিয়েছিলাম। করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে এই সমস্যা হতো না।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

 

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির

আমেরিকায় না গেলে আমাদের কিছু যায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই, আটলান্টিক পাড়ের আমেরিকায় না গেলে কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো।

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে গড়ে উঠা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। এটা আজ প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। মানুষের কল্যাণে কাজ করে। জাতির পিতা আমাদের সেটা শিখিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর বারবার আঘাত, হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ-খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়? আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কল্যাণ হয়। মানুষের কল্যাণে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা যেসব কাজ করি, আওয়ামী লীগ যেসব পরিকল্পনা নেয়, প্রকল্প নেয়, তা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হয়। আমাদের মাটি, মানুষ, পরিবেশ, আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি। তার ফলে আমাদের প্রতিটি প্রকল্পই সাফল্য অর্জন করে। মানুষ তার সুফল পায়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে জানান, সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে যোগাযোগব্যবস্থায়। ২০০৮ সালের বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২৩ সালের তুলনা করলেই সেটা দেখা যাবে। এক দিনে একশ সেতু উদ্বোধন পৃথিবীতে কোনো সরকার করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে। দেশে স্থিতিশীলতা না থাকলে এই উন্নতি হতো না। গত ১৪ বছর ধরে সবক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সবক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেয়া টেলিভিশনে বসে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। করুন, কে কী বলল আমরা দেখব না। আমরা আমাদের কাজ করে যাবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে গড়ে উঠা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। এটা আজ প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। মানুষের কল্যাণে কাজ করে। জাতির পিতা আমাদের সেটা শিখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সংগ্রামী অতীত তুলে ধরে দলটির সবচেয়ে বেশি সময়ের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ ইনস্টিটিউটের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশের উন্নতি হয়, এটাই বাস্তব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগ নামক সংগঠন এদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে।

কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজের পায়ে চলবো। নিজের দেশকে গড়ে তুলবো। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে— ও নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নাই। ৩০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করবো। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো। আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরও চাঙা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলবো— ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয় নাই। তারা (বিএনপি) আবার তাদের (আমেরিকা) কাছে ধরণা দেয়। এতকিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলবো— যারা অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী আছেনৃ আমরা তো লেখাপড়া এত বেশি জানি না। শুধু দেশের মাটি মানুষকে চিনি। বাংলাদেশ, নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।

জনগণের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর বাংলাদেশ কী ছিল, এখন বাংলাদেশ কী অবস্থায় আছে, কেউ তুলনাটা বিবেচনা করলেই পরিবর্তনটা দেখতে পারবেন। একই দিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা, এটা কী কোনো সরকার আগে করেছে, পারেনি। কে পেরেছে? আওয়ামী লীগ। আজকে আমরা বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, এখন আমাদের বেকারত্ব মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও থাকবে না। যদি কেউ উদ্যোগ নেয় সেও কাজ করতে পারবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। আমাদের গ্রামের অর্থনীতি অনেক মজবুত। গ্রামের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষকদের আমরা সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি, দুই কোটি ১০ লাখ কৃষককে কার্ড দিয়েছি। ভর্তুকির টাকাটা তার ব্যাংকে চলে যায়। ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এক কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ জন কৃষক পুরো বাংলাদেশে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এখন তারা সেখানে বসে টাকা পেয়ে যায়। ধান কাটার মৌসুমে মানুষ পাওয়া যায় না, মজুরের দাম বেড়ে গেছে। আমি আহ্বান করেছি আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাঠে চলে গেছে, কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি বলেন, জনগণের সঙ্গে, জনগণের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করলে— জনগণ কিন্তু সেটার মর্যাদা দেয়। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে, ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথাটা মাথায় রেখে জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। অশুভ শক্তি বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদের করাল গ্রাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে অধিকার সবারই থাকবে।’ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও এখানে হবে বলে জানান তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বিদ্যুৎ শতভাগ দিতে পেরেছি, এখন যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লাও পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এক সময় যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করেছিল, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। তার কারণে কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আমি জানি মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমরা তো লোডশেডিং একেবারে দূর করে দিয়েছিলাম, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো আর করোনাভাইরাস যদি না দেখা দিতো, আজকে যদি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা না দেখা দিতো, মুদ্রাস্ফীতি না দেখা দিতো, তাহলে মানুষের কষ্ট হতো না। আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিসটা বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে, সেটা কষ্ট করে আমাদেরকে জোগাড় করতে হচ্ছে।

জ্বালানির সুখবর জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আমরা আরো কয়েকটা দেশের সঙ্গে করছি যাতে গ্যাস কিনতে পারি। এই কষ্ট দূর করতে পারি। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট বাড়ে, বিএনপি-জামায়াতের আমলে তো বিদ্যুৎ ছিলই না। তখন মানুষ হাহাকার করত। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসার্টে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে ১৮জন কৃষক হত্যা করছিল। শ্রমিকের মজুরি দাবি করেছিল বলে ২৭ জন শ্রমিককে রোজার সময় তাদের হত্যা করেছিল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বেড়ে গেছে, কয়লা পাওয়াই যাচ্ছে না। আমাদেরও পেতে সমস্যা হচ্ছে। জানি গরমে সমস্যা হচ্ছে। আমরা তো লোডশেডিং দূরই করে দিয়েছিলাম। করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে এই সমস্যা হতো না।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।