Dhaka বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশ বিক্রি করে রাজনীতি করি না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কারণ নিজের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইনি। গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। বাংলাদেশ বিক্রি করে যে রাজনীতি করতে হয়, সে রাজনীতি আমি করি না। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব জেলার জনসভায় অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, আবারও তাই শুরু করেছে। রেলে আগুন দিচ্ছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে।

বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। এই যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। দেশে তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মন মত প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল আবার তারা তাদের সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে (মাঠে) নেমেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিসপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারল। আবার তারা অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যায় তাদের।

শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক দিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিশপ্লেট খুলে ফেললো, রেলের বগি পড়ে সেখানে একজন মারা গেলো। বাসে আগুন দিচ্ছে, ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মারা গেলো। ঠিক এভাবে আবার তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। রেলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা…একটা মা তার শিশুকে বুকে নিয়ে বসে আছে, সে মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো। কোনও মানুষের ভেতরে মানুষত্ব্য থাকলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে না।

ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন, এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তি মত ভোট দিক।

তিনি বলেন, সকলে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকলে দেশে উন্নতি হয়।

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, তিনি (শেখ হাসিনা) সেটা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি।

বিএনপির নেতা কে, বরাবরের মতো সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুজনই সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপর তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বোন, ভাই এসে যখন অনুরোধ করেছিল, তখন সাজা স্থগিত রেখে বাসায় থাকতে দিয়েছি। যেই তারেক জিয়া আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, বোমা মেরে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, তারপরও তার জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না। তারা সন্ত্রাসী দল। আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের। এদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারেক রহমান বিদেশ থেকে হুকুম দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, যারা আগুন দিচ্ছেন, মানুষ হত্যা করছেন, পাপের ভাগিদার তারাই হবেন। ও (তারেক) তো ওখানে জুয়া খেলে ভালোই আছে। ও হুকুম দেয়, আর এখানে বিএনপি কর্মীরা নাচেন। সাহস থাকলে দেশে আসার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশের মানুষ এসব হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারেক জিয়া…যারা আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, ট্রেনে হামলা করেছে। তারপরও তার (খালেদা জিয়া) জন্য মানবতা দেখিয়েছি। তার ছেলে (তারেক রহমান) ক্ষমতায় থাকাকালে হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় আর কোনোদিন রাজনীতি না করার মুচলেকা ও নাকে খত দিয়ে বিদেশে গিয়েছে। এখন বিদেশ থেকে হুকুম চালু করেছে পুড়িয়ে মানুষ মারার।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যারা পুড়িয়ে মানুষ মারছেন, পাপের ভাগীদার আপনারাই হবেন। তারেক জিয়ার কিছুই হবে না। ও তো ওখানে বসে বসে জুয়া খেলে ভালোই আছে। এখানে আপনাদের হুকুম দিচ্ছে, আপনারা নাচেন। কার জন্য নাচেন? ও তো এখানে আসবে না। ও তো দেশেই আসে না। মা মরে মরে, তাকেও দেখতে দেশে আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক না। এ দেশের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।

নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক। পছন্দমতো ভোট দিক। আমরা কয়েকজনকে প্রার্থী করেছি, তারপরও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সবাই জনগণের কাছে যাবেন, ভোট চাইবেন; যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার, তার সবটুকু প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রটাকে সুরক্ষিত করতে চাই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বিধিব্যবস্থা থাকলে দেশের উন্নতি হয়।

এ সময় বিভিন্ন খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি জায়গা আমরা উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এদেশ কোনদিনেই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন; এই ইলেকশনটা আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক। শান্তিমতো ভোট দিক। আমরা কয়েকজনকে প্রার্থী করেছি তারপরও আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সকলে জনগণের কাছে যাবেন। ভোট চাইবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক এবং জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটি তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক।

গণতন্ত্রটাকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, বিধি ব্যবস্থা থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। তার প্রমাণ বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। যখন আমি ২০০১ সালে আমাদের ৫ বছর শেষ করে জুলাই মাসে শেষ করি। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এরপর বাংলাদেশে কোনোদিন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি।’

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এরপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাই এটা ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

এরইমধ্যে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব সেই ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই আমাদের এই বাংলাদেশে প্রতিটি জনগণকে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করব। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজব্যবস্থা স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো; এটিই আমাদের লক্ষ্য বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগ, উপজেলা/থানা/পৌর আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নির্বাচনি এলাকাসমূহের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কুড়িগ্রামে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ

আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশ বিক্রি করে রাজনীতি করি না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:৫১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কারণ নিজের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইনি। গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। বাংলাদেশ বিক্রি করে যে রাজনীতি করতে হয়, সে রাজনীতি আমি করি না। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব জেলার জনসভায় অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, আবারও তাই শুরু করেছে। রেলে আগুন দিচ্ছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে।

বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। এই যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। দেশে তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মন মত প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল আবার তারা তাদের সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে (মাঠে) নেমেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিসপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারল। আবার তারা অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যায় তাদের।

শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক দিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিশপ্লেট খুলে ফেললো, রেলের বগি পড়ে সেখানে একজন মারা গেলো। বাসে আগুন দিচ্ছে, ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মারা গেলো। ঠিক এভাবে আবার তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। রেলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা…একটা মা তার শিশুকে বুকে নিয়ে বসে আছে, সে মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো। কোনও মানুষের ভেতরে মানুষত্ব্য থাকলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে না।

ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন, এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তি মত ভোট দিক।

তিনি বলেন, সকলে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকলে দেশে উন্নতি হয়।

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, তিনি (শেখ হাসিনা) সেটা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি।

বিএনপির নেতা কে, বরাবরের মতো সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুজনই সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপর তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বোন, ভাই এসে যখন অনুরোধ করেছিল, তখন সাজা স্থগিত রেখে বাসায় থাকতে দিয়েছি। যেই তারেক জিয়া আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, বোমা মেরে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, তারপরও তার জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা করেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না। তারা সন্ত্রাসী দল। আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের। এদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারেক রহমান বিদেশ থেকে হুকুম দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, যারা আগুন দিচ্ছেন, মানুষ হত্যা করছেন, পাপের ভাগিদার তারাই হবেন। ও (তারেক) তো ওখানে জুয়া খেলে ভালোই আছে। ও হুকুম দেয়, আর এখানে বিএনপি কর্মীরা নাচেন। সাহস থাকলে দেশে আসার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশের মানুষ এসব হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারেক জিয়া…যারা আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, ট্রেনে হামলা করেছে। তারপরও তার (খালেদা জিয়া) জন্য মানবতা দেখিয়েছি। তার ছেলে (তারেক রহমান) ক্ষমতায় থাকাকালে হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় আর কোনোদিন রাজনীতি না করার মুচলেকা ও নাকে খত দিয়ে বিদেশে গিয়েছে। এখন বিদেশ থেকে হুকুম চালু করেছে পুড়িয়ে মানুষ মারার।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যারা পুড়িয়ে মানুষ মারছেন, পাপের ভাগীদার আপনারাই হবেন। তারেক জিয়ার কিছুই হবে না। ও তো ওখানে বসে বসে জুয়া খেলে ভালোই আছে। এখানে আপনাদের হুকুম দিচ্ছে, আপনারা নাচেন। কার জন্য নাচেন? ও তো এখানে আসবে না। ও তো দেশেই আসে না। মা মরে মরে, তাকেও দেখতে দেশে আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক না। এ দেশের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।

নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক। পছন্দমতো ভোট দিক। আমরা কয়েকজনকে প্রার্থী করেছি, তারপরও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সবাই জনগণের কাছে যাবেন, ভোট চাইবেন; যাকে ভোট দেবে, সেই বিজয়ী হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার, তার সবটুকু প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রটাকে সুরক্ষিত করতে চাই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বিধিব্যবস্থা থাকলে দেশের উন্নতি হয়।

এ সময় বিভিন্ন খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি জায়গা আমরা উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এদেশ কোনদিনেই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন; এই ইলেকশনটা আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক। শান্তিমতো ভোট দিক। আমরা কয়েকজনকে প্রার্থী করেছি তারপরও আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সকলে জনগণের কাছে যাবেন। ভোট চাইবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক এবং জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটি তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক।

গণতন্ত্রটাকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, বিধি ব্যবস্থা থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। তার প্রমাণ বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। যখন আমি ২০০১ সালে আমাদের ৫ বছর শেষ করে জুলাই মাসে শেষ করি। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এরপর বাংলাদেশে কোনোদিন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি।’

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এরপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাই এটা ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

এরইমধ্যে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব সেই ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই আমাদের এই বাংলাদেশে প্রতিটি জনগণকে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করব। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজব্যবস্থা স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো; এটিই আমাদের লক্ষ্য বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগ, উপজেলা/থানা/পৌর আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নির্বাচনি এলাকাসমূহের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।