স্পোর্টস ডেস্ক :
প্রায় চার বছর আগেই বিশ্বজয় করে ফেলেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। কিন্তু মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা এশিয়া কাপের ট্রফিটা এত দিন ধরা দেয়নি বাংলাদেশের যুবাদের হাতে। সেই অপূর্ণতাও ঘুচে গেল। দুবাইয়ে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ফাইনালে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়েই প্রথমবার মতো অপরাজিত এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি সাক্ষী হলেন জুনিয়র টাইগারদের নতুন কীর্তির। বিজয় দিবসের ঠিক একদিন পর দুবাই থেকে ভেসে এলো দেশের ক্রিকেটের গৌরবমাখা অনন্য অর্জনের খবর। এশিয়া কাপের ফাইনালে আরব আমিরাতকে বাংলাদেশ হারাল ১৯৫ রানের বড় ব্যবধানে। আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আশিকুর রহমান শিবলির সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৮৩ রান। জবাবে আরব আমিরাত অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ৮৭ রানে।
তিন পেসার মারুফ মৃধা, ইকবাল হোসেন ও রোহনাত দৌলা মিলেই ধসিয়ে দেন আমিরাতের ইনিংস। শুরুটা করেন মারুফ। এই বাঁহাতি পেসার পঞ্চম ওভারে ফিরিয়ে দেন আমিরাতের ওপেনার আর্যাংশ শর্মাকে। নিজের পরের ওভারেই মারুফ আরেক ওপেনার অক্ষত রাইয়ের উইকেট উপড়ে ফেলেন।
এরপর কাজে নামেন রোহনাত। টানা তিন ওভারে এই মিডিয়াম পেসার তুলে নেন তানিশ সুরি, ইথান ডি’সুজা ও আমিরাত অধিনায়ক আইয়ান আফজাল খানকে। ২৫টি ওয়ানডে ও ২১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা আইয়ান যখন উইকেটকিপার আশিকের ক্যাচ হলেন আমিরাতের স্কোর ৪৫/৫।
আমিরাত ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট হারায় ১৫তম ওভারে । টানা দুই বলে যাযিন রাই ও আম্মার বাদামিকে তুলে নেন ইকবাল হোসেন। পেসাররা টানা ৭ উইকেট নেওয়ার পর দৃশ্যপটে আসেন এক স্পিনার। অফ স্পিনার শেখ পারভেজ হার্দিক রাইকে বোল্ড করে আমিরাতের স্কোরটাকে ৭১/৮ বানিয়ে ফেলেন।
মারুফ মৃধা আবার আক্রমণে এসে নবম উইকেটটি তুলে নেওয়ার পর শেখ পারভেজ শেষ উইকেটটি তুলে নিতেই এশিয়া জয়ের উৎসবে মাতেন বাংলাদেশের যুবারা।
আমিরাতের ইনিংসে যা একটু প্রতিরোধ গড়েন ধ্রুব পরাশর। চারে নামা ব্যাটসম্যান করেছেন সর্বোচ্চ ২৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে আশিকুর রহমান শিবলির দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ভর করে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৮৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ছেলেরা। দুবাইয়ে আজ টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ওপেনার জিশান ইসলাম (৭) বিদায় নেন দ্রুতই। কিন্তু এরপর ১২৫ রানের জুটি গড়ে মোড় বদলে দেন শিবলি এবং চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রিজওয়ান ৭১ বলে ৬০ রান করে বিদায় নিলেও চাপে পড়েনি বাংলাদেশ। কারণ এরপর ফের আরিফুল ইসলামকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি জুটি গড়েন শিবলি। এর মাঝেই আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। এই ম্যাচের আগের চার ম্যাচে ২টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি ছিল তার। আসরে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ৩৫০-এর বেশি রানও করেছেন শিবলি।
শিবলি ধরে খেললেও অন্যপ্রান্তে আরিফুল হক রানের চাকা সচল রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ব্যাট হাতে দৃষ্টিনন্দন কিছু শট খেলে তিনি তুলে নেন ফিফটিও। ব্যক্তিগত ফিফটির পর অবশ্য টিকতে পারেননি আরিফুল। ৪০ বলে ৬ চারে সাজানো এই ইনিংসটি শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের রানরেট ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু তার বিদায়ের পর দ্রুত আরেকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৫ বলে ৫ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন আহরার আমিন। মোহাম্মদ শিহাব জেমসও (৩) পারেননি দাঁড়াতে। তবে অপরপ্রান্তে অটল থাকেন শিবলি। যদিও স্ট্রাইকরেট তুলনামূলক কম ছিল তার, তবে শেষদিকে অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি মাত্র ১১ বলে ২ ছক্কা ১ চারে ২১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে রানের গতি ঠিক রাখেন।
শেষ ওভারে অবশ্য বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটও হারিয়েছে ৩টি। আমিরাতের পেসার আয়মান আহামেদের করা ওভারের দ্বিতীয় বলেই লং অনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার রাব্বি। পঞ্চম বলে একই পথ ধরেন শিবলি। ১৪৯ বলে ১২৯ রানের ইনিংসটি খেলার পথে ১২টি চার ও ১ ছক্কা হাঁকান এই ওপেনার। ওভারের শেষ বলে অষ্টম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ। ৮ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮২ রান।
আরব আমিরাতের হয়ে আয়মান আহমেদ নেন ৫২ রানে ৪ উইকেট। ২ উইকেট নেন ওমিদ রেহমান, ১টি করে উইকেট নেন হার্দিক পাই এবং আম্মার বাদামি।
আরব আমিরাতের ক্রিকেটাররা যে এমন অসহায় আত্মসমর্পন করবে, তা হয়তো ঘূর্ণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেনি। প্রথমে আশিকুর রহমান শিবলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, এরপর মারুফ মৃধা, রোহানাত দৌলা বর্ষণ, ইকবাল হোসেন ইমন এবং শেখ পারভেজ জীবনদের নিয়ন্ত্রিন এবং বিধ্বংসী বোলিংয়ে এশিয়ার সেরার মুটুক উঠলো বাংলাদেশ দলের মাথায়।
আকবর হোসেনের নেতৃত্বে তানজিদ তামিম, তানজিম সাকিব, শরিফুল, তাওহিদ হৃদয়রা জয় করেছিলো বিশ্বকাপ। এবার মাহফুজুর রহমান রাব্বির নেতৃত্বে আশিক, জিসান, রিজওয়ান, মৃধা, আহরার এবং জীবনরা জিতলো এশিয়ার স্রেষ্ঠত্বের মুকুট।