নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই দুঃসময়ে যারা বাংলাদেশের পাশে ছিলেন তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কখনো আমাদের দুঃসময়ের বন্ধুদের ভুলি না। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের পাশে ছিলেন, তাদের অবদান কখনো আমরা ভুলতে পারি না।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেলে টোকিও’র জাপানের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেলে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশই বোধ হয় একমাত্র দেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের পাশে ছিলেন, যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, আমি সরকারে আসার পর থেকে তাদের খোঁজ করেছি, খুঁজে বের করেছি এবং আমাদের সাধ্যমতো সবাইকে আমরা সম্মান করার চেষ্টা করেছি, সম্মান দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময় (১৯৭১) যারা আমাদের পাশে ছিলেন, তাদের কখনো আমরা ভুলতে পারি না; তাদের অবদান আমরা ভুলতে পারি না।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি, আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি অনেক রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু আমাদের পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ৪ জাপানি নাগরিকের অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে আরও চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানিয়েছে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা আমাদের অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় ইতোপূর্বে সম্মাননা পাওয়া ৮ জন জাপানি নাগরিকের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ওই সংকটময় মুহূর্তে, জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিলেন এবং মানবতার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। এজন্য তারা (জাপানিরা) অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু পিছিয়ে পড়েননি। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদের আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের বাচ্চাদের কথা, যারা আমাদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় এবং দান করেছিল।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। আমরা শুধুমাত্র আমাদের বন্ধুদের সম্মান করি না, জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করি।
জাপানের সঙ্গে গত ৫০ বছর ধরে চলে আসা বন্ধুত্ব আগামী প্রজন্ম আরও এগিয়ে নেবে বলে প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, জাপানের জনগণ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে চলে আসা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব আগামী বছরগুলিতেও দুই দেশের নতুন প্রজন্ম সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বাস জাপান অতিতের মতো আমাদের পাশে থাকবে। অতীতের মতো আমাদের প্রয়োজনে জাপান সরকার সব সময় আমাদের পাশে থাকবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে জাপান সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জাপান অতীতের মতো আমাদের পাশে থাকবে। আমি এও আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতে আমাদের প্রয়োজনে তাদের সরকারের পাশাপাশি সবসময় আমাদের পাশে থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের ৮ জন সম্মানিত ব্যক্তির একটি পরিমিত তালিকা ছিল যাদেরকে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আমরা টোকিওতে রয়েছি বাংলাদেশের আরও চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানাতে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নৈতিক ও বৈষয়িক সহায়তার আয়োজন করেছেন এবং সহায়তা নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে জাপানের জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আমাদের ন্যায়বিচার, সম্মান, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের আকাঙ্ক্ষা শুনেছেন। আপনাদের কণ্ঠস্বর আমাদের কণ্ঠে শক্তি যোগ করেছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বড় হয়েছে। আপনারা আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সমাবেশ করেছেন এবং একসঙ্গে একটি নির্মম শক্তির বিরুদ্ধে একটি মানব দুর্গ গড়ে তুলেছেন। উদীয়মান সূর্যের দেশে, আমরা মর্যাদা ও মানবতার সঙ্গে একটি জাতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।
তিনি উল্লেখ করেন, জাপানের জনগণ নৃশংসতার প্রতিবাদ করেছে এবং বাংলাদেশের অসহায় মানুষের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি ছিল দুঃখের সময় যা নিছক কথায় প্রকাশ করা যায় না।
সেই সংকটময় মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরে মানবতার স্বার্থে এগিয়ে গেছে। তারা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু পিছিয়ে যায়নি।’
তিনি বলেন, তাদের নিঃস্বার্থ আচরণ হুমকির মুখে আমাদের আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের শিশুদের দাতব্য কার্যক্রম যারা আমাদের লোকেদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় এবং দান করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাপান সফর একটি অটল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আমি আমার বাবার উত্তরাধিকারী হিসাবে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে জাপান সফর করা আমার জন্য সম্মানের। আমি আজ খুশি যে আমার মেয়াদে, আমাদের সময়-পরীক্ষিত বন্ধুত্ব একটি ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ গভীরতা এবং মাত্রায় বিকশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সমতা, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপান একই মহৎ ধারণা ও নীতির।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















