নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার কথায় কথায় বলেন— খালেদা জিয়াকে দয়া দেখিয়ে বাসায় রেখেছি। আমরা দয়া চাইনি, জাস্টিস চেয়েছি। আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি, প্রাপ্যটা চেয়েছি।
সোমবার (১০ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটি বসবাসের উপযোগী ছিল না। তিনি ওই সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই সময় ডাক্তাররা একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। পরে করোনা শুরু হয়ে গেলে বাসায় পাঠিয়ে দেয় সরকার। অথচ বলা হয়, দয়া করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারো দয়া চাননি। তাকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বারবার তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসার কথা বলছেন। কিন্তু সরকার তাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার সচেতনভাবে গণতন্ত্রকে অসুস্থ করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে তাদের অসুস্থ বানিয়েছে। গোটা রাষ্ট্রকে অসুস্থ, বিকৃত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এই সরকার ।
তিনি বলেন, যেসব নেতারা অসুস্থ তাদের অনেকের নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ করেছে। সরকারের লক্ষ্য একটাই বিরোধীদল ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, নির্বাচনকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশে আমরা কোনো রাজা-রানির রাজত্বে বাস করি না। আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সেই গণতন্ত্রই আজ দেশে অনুপস্থিত।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এই ফ্যাসিস্ট সরকার। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি তারা।
তিনি বলেন, এ দেশে আমরা কোনো রাজা-রানির রাজত্বে বাস করি না। আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। সেই গণতন্ত্রই আজ দেশে অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, পুরোনো কক্ষ, দেয়াল দিয়ে পানি পড়ে, কক্ষে ইঁদুর দৌড়াত এমন পরিবেশে বেগম জিয়াকে রাখা হয়েছিল। তিনি নিজে আমাকে এ কথা বলেছেন। কারাগারে তাকে দেখতে গেলে সেখানকার লোকজনও এ কথা জানিয়েছিলেন। তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। চিকিৎসকরা বারবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে তার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। যখন করোনা শুরু হয়ে গেল, তখন চট করে আগেই তাকে পিজি হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর বাড়িতে পাঠানো হয়। শেখ হাসিনা আবার বলেন যে তিনি নাকি করুণা করেছেন! এটা নাকি তার দয়া ছিল। কিন্তু আমরা তো দয়া চাইনি। আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি; প্রাপ্য চেয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তরুণদের দেশকে রক্ষায় রাষ্ট্রকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বিএনপি বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছে। বিএনপি নির্বাচন চায় তবে আওয়ামী লীগ বারবার নিজেদের মতো নির্বাচন করেছে। এটা আর হতে দেওয়া যায় না। আশা করি, সরকারের এখনও শুভবুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আগামী ১২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ থেকে নতুন যাত্রার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।
‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তবে ইচ্ছা করে করছি না, বাধ্য হয়েছি। দেশটাকে বাঁচানোর জন্য সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের মাধ্যমে সংকট সমাধান হবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়াও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও নজরুল ইসলাম খানও অসুস্থ। রিজভীও খুব অসুস্থ। তারপরও কিন্তু কেউ থেমে নেই। আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমাদের লক্ষ্য, অসুস্থ রাষ্ট্রকে সুস্থ করা এবং জাতিকে এই অসুস্থতার হাত থেকে মুক্ত করা। দোয়া মাহফিলে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাইব, আল্লাহ যেন আমাদের নেতাদের রোগমুক্ত করেন। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে যেন সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। তারেক রহমানকে যেন আমাদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। আপনারা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করবেন যেন শান্তপূর্ণভাবে কর্মসূচিগুলো পালন করতে পারি। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে যেন এ দেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করতে পারি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।