নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার কখনোই অপ্রয়োজনীয় কোনো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমরা অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করি না। দেখবেন, প্রকল্পগুলো শেষ হলেই এর সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করছে।
শনিবার (১৩ মে) ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইইবি প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যে বিষয়টির ওপর সর্বদা জোর দেই, তা হলো- কোন পরিকল্পনা দেশের জনগণের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা বয়ে আনবে এবং সরকার তা থেকে আয় করতে সক্ষম হবে।
টক শো তে শুধু টক টক কথা হয়, মিষ্টি কথা হয় না- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিদিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক শো হচ্ছে। সেখানে টক টক কথাই হচ্ছে। টকের সঙ্গে যদি একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা হতো তাহলে আমার ভালো লাগতো। সেটা হয় না, শুধু এটা হচ্ছে না ওটা হচ্ছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, অহেতুক বড় বড় প্রকল্প আমরা নেই না। অনেকেই মেগা প্রজেক্ট নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু আজ যখন মেগা প্রজেক্ট যেগুলো শেষ হয়েছে এবং তার সুফল যখন মানুষ ভোগ করছে তখন যারা এসব কথা টক শোতে বলেছিলেন তারা এখন কি জবাব দেবেন সেটাও আমার জানতে ইচ্ছে করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টক শো করার সুযোগ আমি করে দিয়েছি। কারণ টেলিভিশন একটা ছিল, সরকারি। এখন বেসরকারি টেলিভিশন প্রায় ৪৪টা। ৩২টা চলমান। প্রতিদিন সেখানে টক শো হচ্ছে। টক টক কথাই হচ্ছে। টকের সঙ্গে যদি একটু মিষ্টি মিষ্টি হতো তাহলে আমার ভালো লাগতো। সেটা হয় না, টক শোতে তারা শুধু বলেন- এটা হচ্ছে না ওটা হচ্ছে না।
প্রকৌশলীদের দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি হিসেবে অভিহিত করে তাদের বাংলাদেশের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আপনাদের (প্রকৌশলী) কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
দেশের জনগণের উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা (প্রকৌশলী) দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাতে আমরা উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারি সেজন্য সবাই আন্তরিক থাকবেন।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা’ সরকারের লক্ষ্য এমনটা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তারা ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ বাস্তবায়ন করবে যাতে দেশের কেউ আর ভোগান্তির শিকার না হয় এবং এতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম একটি সম্মানজনক ও উন্নত জীবন পাবে। আমি আশা করি, আপনারা (প্রকৌশলীরা) বিষয়টি মনে রেখে কাজ করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে চাই। উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি আপনাদের (প্রকৌশলী) হাতে, এটা মনে রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন স্বাধীনতার দশ বছরের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতো। শূন্য হতে যাত্রা শুরু করে মাত্র তিন বছর সাত মাস তিনদিন তিনি সরকারে ছিলেন। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নত করা, একটি সংবিধান উপহার দেয়া, রাস্তাঘাট পুল ব্রিজ আবার পুনর্গঠন, পুনর্বাসন করা, দেশকে আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে জাতিকে স্বল্পোন্নতদেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
অনেক দেশ পদ্মা সেতুর মতো সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমাদের সক্ষমতা শুধু দেখাইনি। আমাদের যারা সেখানে কাজ করেছে প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবারই নিজস্ব অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন যেমন অনেক দেশ আমাদের কাছে আসছে, ব্রাজিল তাদের অ্যামাজনে ব্রিজ বানাতে চায়। আমরা বলেছি আমাদের লোকজন রেডি আছে যখনই দরকার আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই; যেখানে জনগণ হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট উৎপাদন ব্যবস্থা থাকবে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে দেশের মানুষ স্মার্ট হবে সেটাই আমরা চাই। দক্ষ জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। কোনো জায়গা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকবো না।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটা সিদ্ধান্ত আমি নিতে বলেছি, এখন আবার ওই স্যাংশন দেওয়ার একটা প্রবণতা, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি তাদের ওপর স্যাংশন, আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনবো না। আমার কি করবে, বাবা-মা, ভাই-বোন সব মেরে ফেলে দিয়েছে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। কিন্তু আমি আমার দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
কোন প্রকল্প দেশের মানুষের জন্য কতটা দরকার তা বিবেচনা করে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে প্রকল্প নেই আগে চিন্তা করি দেশের মানুষ কতটুকু উপকার পাবে। আর সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে রিটার্ন কী আসবে। কত দ্রুত আসবে।
তিনি বলেন, কত দেশ, বিশাল অংকের টাকা দিয়ে কোনো প্রকল্প দিলে আমি কিন্তু সেই প্রকল্প গ্রহণ করি না। সেটা আপনাদের আমি জানিয়ে দিচ্ছি। সেটা আমি করবোও না। আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য যেটা আমরা সেটাই করবো।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন বলেই, দেশের মানুষের জন্য তারা কিছু করতে পারেন না। মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনাকারীদের একহাত নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অহেতুক কোনো প্রকল্প নেয়নি বর্তমান সরকার।
টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ার দেন, স্যাঙ্কশন বা নিষেধাজ্ঞা দেয়া কোনো দেশের কাছ থেকে কিছুই কিনবে না বাংলাদেশ।
সামরিক শাসকদের সময় প্রকল্পের নামে টাকা লুট হতো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় সামরিক শাসকদের সময় কী ছিল, অনেক টাকা দিয়ে প্রজেক্ট বানায়ে, ওই টাকা পরের কাছে তুলে দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে কমিশন খাওয়া! আমার দেশের টাকা আমি তুলে দেব আরেকজনের হাতে? আর তার কাছ থেকে আবার কমিশন খাব? ঘুষ নেব? এ ধরনের মানসিকতা কেন থাকবে! এটাতো আত্মহননের সামিল। বরং একটা টাকা বাঁচাতে পারি কি না সেই চেষ্টাটাই করতে হবে।
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রকৌশলীসহ সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা (আওয়ামী লীগ সরকার) আসার পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করবো, আগামীতে এ উন্নয়নের ধারাটা যেন চলমান রাখতে পারি সেই বিষয়ে সবাই আন্তরিক থাকবেন। সেইভাবে আপনারা কাজ করবেন।
আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শিবলু), আইইবি ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেন, সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার।