স্পোর্টস ডেস্ক :
ম্যাচ জুড়েই বিবর্ণ, নিষ্প্রভ থাকল আবাহনী। বসুন্ধরা কিংস খেলল বরাবরের মতোই দাপুটে ফুটবল। দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো ও দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো পেলেন জালের দেখা। দুই গোলেই আক্রমণের সুরে বেঁধে দিলেন রাকিব হোসেন। শেষ দিকে জালের দেখা পেলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। আক্রমণভাগের ছন্দময় নৈপুণ্যে সওয়ার হয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠে গেলে অস্কার ব্রুসনের দল।
মঙ্গলবার (১৫ মে) গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারায় কিংস।
কদিন আগেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছিল কিংস। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করেছিল তারা। যদিও ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি আবাহনী তৈরি করে সপ্তম মিনিটে। ওয়াশিংতন ব্রান্দাওয়ের বাম দিক থেকে বাড়ানো ক্রস ডিফেন্ডারদের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে বক্সে ঢুকে নিয়ন্ত্রণে নেন স্টুয়ার্ট কর্নেলিয়াস। গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণকে একাও পেয়েছিলেন, কিন্তু বিস্ময়করভাবে দূরের পোস্ট দিয়ে মেরে বসেন এই ফরোয়ার্ড।
পঞ্চদশ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় কিংসের। আক্রমণের শুরু ছিল দোরিয়েলতনের ক্রস থকে। বক্সের উপর থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শেখ মোরসালিন বাড়ান রাকিবকে; এই ফরোয়ার্ডের বাম পায়ের শট ড্রপ খেয়ে ছুটছিল গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল বরাবর, কিন্তু তিনি তালগোল পাকিয়ে বল গ্লাভসে নিতে পারেননি। সেসময় মোরসালিন সামনে থাকলেও আলগা বল পাঠাতে পারেননি পোস্টে।
অষ্টাদশ মিনিটে হাফ-চান্স তৈরি করে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১২বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে মিলাদ শেখ সুলেমানির হেড যায় বাইরে। এর দুই মিনিট পর গোল হজম করে বসে দলটি। মিগেল ফিগেইরা দামাশেনোর বাড়ানো বল ধরে আক্রমণে ওঠেন রাকিব। এই ফরোয়ার্ডের পাস প্রথম স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন রবিনিয়ো। আবাহনীর ডিফেন্ডাররা তখন দোরিয়েলতনের পাহারায় ছিলেন ব্যস্ত!
দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য করতে থাকে কিংস। আবাহনী পারছিল না তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে। ৫৬তম মিনিটে রিমন হোসেনের আড়াআড়ি ক্রসে পা ছোঁয়াতে গোলমুখে ছুটে গেলেও বলের গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি দামাশেনো।
৬০তম মিনিটে জামালকে তুলে রহিম উদ্দিনকে নামান আবাহনী কোচ আন্দ্রেয়াস ক্রুসিয়ানি। কিন্তু আকাশি-নীলদের খেলায় ফিরেনি ধার।
৬৫তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত কিংস। পাপনের ভুলে বল পেয়ে যান রাকিব। ফাঁকায় থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে হতাশার ছাপ স্পষ্ট ছিল তার চোখে-মুখে। পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে বিপদের আভাস দিয়েছিল আবাহনী। তবে ওয়াশিংটনের দূরপাল্লার মাটি কামড়ানো শট সহজেই তালুবন্দি করেন কিংস গোলরক্ষক শ্রাবণ।
৭১তম মিনিটে রাকিবের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে কিংস। রাকিবের ক্রসে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন দোরিয়েলতন। আবাহনী অফ-সাইডের দাবি তুললেও শেষ পর্যন্ত তা নাকচ করে দেন রেফারি সাগর। এরপর দুই দলই বেশ কিছু আক্রমণ করলেও শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইনে পরিবর্তন আনতে পারছিল না কেউই। এরপর যোগ করা সময়ে (৯০+৬) রবসনের ফ্রি-কিক সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সহজেই বল জালে জড়ান ইব্রাহিম।
হতাশাময় মৌসুম কাটানো আবাহনী খুঁজে পায়নি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। গত স্বাধীনতা কাপে তাদের পথচলা থেমেছিল সেমি-ফাইনালে কিংসের বিপক্ষে হেরে। প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে তারা এ মুহূর্তে আছে তৃতীয় স্থানে। এবার ছিটকে গেল ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে।
মৌসুম জুড়েই লড়াই হচ্ছে কিংস ও মোহামেডানের মধ্যে। স্বাধীনতার কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল; কিংস জিতেছিল ২-১ গোলে। প্রিমিয়ার লিগ জিতে নেওয়া কিংসকেও যা একটু চাপে রেখেছিল মোহামেডান, যদিও শেষ পর্যন্ত ব্রুসনের দলকে আটকাতে পারেনি তারা। এবার ফেডারেশন কাপেও দেখা হচ্ছে দুই দলের।
মোহামেডানের সামনে সুযোগ ফেডারেশন কাপের রেকর্ড শিরোপাজয়ী আবাহনীর (১২টি) পাশে বসার। কিংস থাকবে তৃতীয় ট্রফির খোঁজে।
আগামী ২২ মের ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে শিরোপাধারী মোহামেডানের।