আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে একের পর এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ।
রোববার (৮ অক্টোবর) তালেবান মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান কর্মকর্তা বলেন, নিহতদের সংখ্যা অনেক। এখনও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। আমরা মানুষকে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
জাতিসংঘের বরাতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, শনিবার আঘাত হানা ওইসব ভূমিকম্পে ১২টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে । গ্রামগুলো ইরান সীমান্তবর্তী জিন্দা জান ও ঘোরিয়ান জেলায় অবস্থিত।
তবে বিলাল করিমি নামে আফগান সরকারের ওই কর্মকর্তা রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত, হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি… মারা গেছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ।
ওসিএইচএ বলেছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে বহু মানুষ আটকা থাকতে পারে। ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে অংশীদার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো।
এদিকে পাঝওয়ক আফগান নিউজের সূত্রে জানা গেছে, হেরাতের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রদেশে হওয়া কয়েকটি ভূমিকম্পে ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আহত হয়েছে ছয় শতাধিক।
এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জনান সাইক জানান, ভূমিকম্পে হেরাতের জিন্দা জান জেলার তিনটি গ্রামের অন্তত ১৫ জন মারা গেছে এবং ৪০ জনের মতো আহত হয়েছে। এটি নিশ্চিত করেছে আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ।
তালেবান কর্মকর্তা বলেন, নিহতদের সংখ্যা অনেক। এখনও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। আমরা মানুষকে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। ইউএসজিএস ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি মানচিত্রে আফগানিস্তান অঞ্চলে সাতটি ভূমিকম্পের কথা জানানো হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হেরাত থেকে ২১.৭ মাইল উত্তর-উত্তর-পশ্চিমে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, জিন্দাজান থেকে ২০.৫ মাইল উত্তর-উত্তর-পূর্বে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প এবং হেরাত শহর থেকে প্রায় ২৬ মাইল পশ্চিমে জিন্দাজানের ১৮ মাইল উত্তর-উত্তর-পূর্বে আরেকটি ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
হেরাত প্রদেশে ভূমিকম্পের ফুটেজে দেখা গেছে, গ্রামগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লোকজন তাদের মৃত প্রিয়জনদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনছে।
জিন্দাহ জান জেলার বাসিন্দা দাউদ হেরাত থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কয়েক ডজন গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। আমি আমার ৯ জন আত্মীয়ের লাশ হেরাতে নিয়ে গিয়েছি। বহু গ্রামের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দাউদ আরও বলেন, আমি আপনাদের বলতে পারি, আমার আত্মীয়দের গ্রামে মাত্র ৫০ জন বেঁচে আছেন। আজ সকাল পর্যন্ত সেখানে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ বসবাস করছিল। এখানে একটা বিপর্যয় ঘটছে।
এর আগে ২০২২ সালের জুনে পূর্ব আফগানিস্তানের একটি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যার ফলে পাথর এবং কাদা-ইটের ঘরগুলো সমতলে মিশে যায়। গত দুই দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ওই ভূমিকম্পে অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় দেড় হাজার মানুষ আহত হয়।
দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্পের দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালায়, যা ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের নিকটে অবস্থিত।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে বৈদেশিক সহায়তা ব্যাপকভাবে প্রত্যাহারের কারণে দেশটি ইতিমধ্যে একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের কবলে পড়ে আছে।