Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আপত্তি সত্ত্বেও পুলিশে গোপালগঞ্জ দ্বন্দ্বের কারণে ফের আইজিপি করা হয় আমাকে : সাবেক আইজিপি মামুন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৮৯ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও আইজিপি হিসেবে দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের। নিজের সম্মতিতে এ দেড় বছরের চুক্তিতে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়ানোর সময় অনাগ্রহী ছিলেন তিনি। এমনকি জ্যেষ্ঠতার বিবেচনায় অন্য কাউকে আইজিপির পদে বসানোর কথা জানান। আপত্তি সত্ত্বেও পুলিশে গোপালগঞ্জ দ্বন্দ্বের কারণে দ্বিতীয়বার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এমনকি শেষবার যখন আইজিপি হিসেবে ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে ‘না’ করেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার জেরায় এমন দাবি করেছেন আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে জেরা করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত তাকে জেরা করা হয়। এরপর বিরতি দেন ট্রাইব্যুনাল।

জেরার সময় মামুনের উদ্দেশ্যে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, তদবির করে আপনি আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন নিয়েছেন। জবাবে সত্য নয় বলে জানান এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া মামুন।

পাল্টা প্রশ্নে মেয়াদ বাড়ানোর সময় তিনি কোনো আপত্তি জানিয়েছিলেন কিনা; এমন কথা জানতে চান শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। তখন অবসরের পরও দুবার আইজিপি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন চৌধুরী মামুন।

সাক্ষীর জেরায় মামুন বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী রাতের বেলায় ব্যালট বক্সে প্রায় ৫০%-এর মতো ভোট রাখার পরামর্শ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন বলেন শুনেছি। মাঠ পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে রাতে ব্যালট বক্সে ভোট দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়। রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ও উদ্যোগে জেলা প্রশাসন, ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, এসপি ও থানার ওসিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে পুলিশের বিপিএম ও পিপিএম পদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয় পুলিশ অফিসারদেরকে বিবেচনা করা হতো। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে পেশাদারিত্ব দেখানো হয়নি। তবে আমিও ওই নির্বাচনের আগে-পরে ৩টি বিপিএম ও পিপিএম পদক পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এই পদকগুলো কেন দেয়া হয়েছিল, তা আমি এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।’

পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘২০১৮ সালের পর পুলিশ বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। কতিপয় পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী পুলিশ অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি পান। তারা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রতি রাতে মিটিং করতেন। আমি সেসব মিটিয়ে উপস্থিত থাকতাম না। আমি মিটিংয়ে অংশ নেওয়া অফিসারদের নিষেধ করতাম, যেন পরবর্তীতে এসব মিটিংয়ে তারা আর না যান। কিন্তু তারা আমার কথা শুনতেন না।’

তিনি বলেন, ‘সততা ও দক্ষতার কারণে আইজিপি হিসেবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করেন। পুলিশ বাহিনীর সুনাম ও অফিসারদের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব আড়ালে রাখার স্বার্থে আমাকে পরবর্তীতে দুইবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম দফায় আমি রাজি থাকলেও দ্বিতীয়বার আমি বলেছিলাম, আমার পরের ব্যাচ থেকে আইজিপি নিয়োগ দিতে। আমি রাজি ছিলাম না। আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে মৌখিকভাবে এই অনাগ্রহের কথা জানাই। কিন্তু গ্রুপিং আড়ালে রাখতে আমাকে দ্বিতীয় বারেও এক্সটেনশন (বর্ধিত) দেয়া হয়।’

এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি শেষে মামুনকে আংশিক জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর স্টেট ডিফেন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি জেরার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

২০০ মিটার কাঁচা রাস্তায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানে চলাচলে দুর্ভোগ

আপত্তি সত্ত্বেও পুলিশে গোপালগঞ্জ দ্বন্দ্বের কারণে ফের আইজিপি করা হয় আমাকে : সাবেক আইজিপি মামুন

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও আইজিপি হিসেবে দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের। নিজের সম্মতিতে এ দেড় বছরের চুক্তিতে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়ানোর সময় অনাগ্রহী ছিলেন তিনি। এমনকি জ্যেষ্ঠতার বিবেচনায় অন্য কাউকে আইজিপির পদে বসানোর কথা জানান। আপত্তি সত্ত্বেও পুলিশে গোপালগঞ্জ দ্বন্দ্বের কারণে দ্বিতীয়বার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এমনকি শেষবার যখন আইজিপি হিসেবে ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে ‘না’ করেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার জেরায় এমন দাবি করেছেন আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে জেরা করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত তাকে জেরা করা হয়। এরপর বিরতি দেন ট্রাইব্যুনাল।

জেরার সময় মামুনের উদ্দেশ্যে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, তদবির করে আপনি আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন নিয়েছেন। জবাবে সত্য নয় বলে জানান এ মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া মামুন।

পাল্টা প্রশ্নে মেয়াদ বাড়ানোর সময় তিনি কোনো আপত্তি জানিয়েছিলেন কিনা; এমন কথা জানতে চান শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। তখন অবসরের পরও দুবার আইজিপি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন চৌধুরী মামুন।

সাক্ষীর জেরায় মামুন বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী রাতের বেলায় ব্যালট বক্সে প্রায় ৫০%-এর মতো ভোট রাখার পরামর্শ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন বলেন শুনেছি। মাঠ পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে রাতে ব্যালট বক্সে ভোট দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়। রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ও উদ্যোগে জেলা প্রশাসন, ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, এসপি ও থানার ওসিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে পুলিশের বিপিএম ও পিপিএম পদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয় পুলিশ অফিসারদেরকে বিবেচনা করা হতো। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে পেশাদারিত্ব দেখানো হয়নি। তবে আমিও ওই নির্বাচনের আগে-পরে ৩টি বিপিএম ও পিপিএম পদক পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এই পদকগুলো কেন দেয়া হয়েছিল, তা আমি এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।’

পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘২০১৮ সালের পর পুলিশ বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। কতিপয় পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী পুলিশ অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি পান। তারা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রতি রাতে মিটিং করতেন। আমি সেসব মিটিয়ে উপস্থিত থাকতাম না। আমি মিটিংয়ে অংশ নেওয়া অফিসারদের নিষেধ করতাম, যেন পরবর্তীতে এসব মিটিংয়ে তারা আর না যান। কিন্তু তারা আমার কথা শুনতেন না।’

তিনি বলেন, ‘সততা ও দক্ষতার কারণে আইজিপি হিসেবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করেন। পুলিশ বাহিনীর সুনাম ও অফিসারদের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব আড়ালে রাখার স্বার্থে আমাকে পরবর্তীতে দুইবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম দফায় আমি রাজি থাকলেও দ্বিতীয়বার আমি বলেছিলাম, আমার পরের ব্যাচ থেকে আইজিপি নিয়োগ দিতে। আমি রাজি ছিলাম না। আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে মৌখিকভাবে এই অনাগ্রহের কথা জানাই। কিন্তু গ্রুপিং আড়ালে রাখতে আমাকে দ্বিতীয় বারেও এক্সটেনশন (বর্ধিত) দেয়া হয়।’

এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি শেষে মামুনকে আংশিক জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর স্টেট ডিফেন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি জেরার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।