নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। তবে যারা দেশের সম্পদের ক্ষতি করে, জনগণ তাদের বয়কট করবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট না দেয় তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদেরকে স্যালুট দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেবো। কিন্তু ব্যর্থতার দায় নিয়ে আপনাদের নেতাকর্মীদের হতাশায় নিমজ্জিত করবেন না।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে এক সেমিনারে যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, একটু আগেই আমি শুনলাম, বিএনপি বলছে আগামী ১৫ দিন তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। এ হুমকিও দিচ্ছে, ঢাকা শহরে তারা অবস্থান নেবে এবং রাজধানীকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
বিএনপির উদ্দেশে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপনারা আবারও ব্যর্থ হবেন। আবারও চরম হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। আপনাদের বিনীতভাবে বলছি ভুল পথ থেকে সরে আসেন। আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ, অবরোধ, অবস্থান করে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবেন না।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে পারেননি, আগামী এক-দেড় মাসেও পারবেন না। আপনারা ব্যর্থ হবেন। ব্যর্থতার গ্লানি নেওয়ার চেয়ে আমার মনে হয় আপনাদের উচিত হবে নির্বাচনে আসা এবং জনগণের রায় মাথা পেতে মেনে নেওয়া।
আন্দোলনের নামে আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দেয়া হলে তা মোকাবেলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত সক্ষম বিরোধী দল থাকুক। এটা যেকোনো দেশের সরকারের জবাবদিহিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন এত উন্নয়ন করেছি, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রেফারেন্স কান্ট্রি, উন্নয়নের রোল মডেল। ক্লিনটন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি) থেকে শুরু করে যত প্রেসিডেন্ট আছেন, সবাই বাংলাদেশকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন, সব ফোরামে বাংলাদেশ প্রশংসিত। আমরা চাই, সারা জাতিই চায়, এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে, সেটিকে আরও গতিময় করতে চাই। এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। দেশে একটি শান্তিময় পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বর্তমানে সরকারের আমলে কৃষি উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নে আগামীতেও কৃষি অনেক গুরুত্ব রাখবে।
তিনি বলেন, গ্রামে রাস্তার পাশের জমি কিনে মানুষ ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। এর ফলে জমি কমছে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আর নতুন চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদেরকে নতুন নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এ দেশের দিন বদলের মূলনায়ক কৃষক। বাংলাদেশের কৃষি আমাদের রক্ষাকবচ। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষি ভূমিকা পালন করছে। কৃষি সাফল্য না দেখালে আজকে মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বাড়তো।
বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে সংকট দেখা দিয়েছে। এটা কীভাবে উত্তরণ করা যায়, আমরা সেদিকে জোর দিতে চাই। আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইডিইবি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. শাহজাহান কবীর।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কৃষিবিদ তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. ইকরাম-উল-হক, ফাও’র কৃষি বিশেষজ্ঞ মঈন উস সালাম, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মু. রাশেদ ইফতেখার, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
সেমিনার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান।