Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনে নিহতদের মূল্যায়ন না করলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না : তারেক রহমান

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি : 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের যথাযথ মূল্যায়ন না করতে পারলে ইতিহাস কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুলকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মহাজাগরণ আমাদের সামনে আরেক স্বাধীনতা আর বিজয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। স্বৈরাচার পতনের এই মহাসমরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, জনতা, গৃহিণী, শ্রমিক সবার অবদানকে আমরা যদি মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই কিংবা গত সতের বছর ধরে অবিরাম আন্দোলনে গুম, খুন, মামলা, হামলা আর নির্যাতনে পিষ্ট লাখ লাখ রাজনৈতিক কর্মীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নে অসমর্থ হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। অবশ্যই এই বিষয়গুলো আমাদেরকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গণতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। এই সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি, যেখানে কারো কোনো ভয় নেই। সকলে আমরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলতে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে অন্যের কথা শোনার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র কদিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারত না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। বহন করতে সক্ষম হবেন না এমন দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে নেয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না, সেটা আমরা সবাই জানি। আর সঙ্গত কারণে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন সেদিনও ছিল আজও আছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরই নিতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোডম্যাপ তাদেরই নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পরিবর্তন সাধন যেমন তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তেমনি এমন দায়িত্বও তাদের কাঁধে নেয়া সঙ্গত হবে না যেটা তারা বহন করতে সক্ষম হবেন না।

তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার দৃশ্যমান প্রয়োগ। সরকার পরিচালনা একটি অতি সংবেদনশীল এবং জটিল কাজ, এখানে সামান্য বিচ্যুতি যেমন বিরাট একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে, তেমনি সামান্য অসতর্কতাও অতি আবশ্যক বিশ্বাসকে করতে পারে দুর্বল। আর আমাদের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ঐক্যতে ধরাতে পারে ফাটল। এর যেকোনো একটিই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। মনে রাখা দরকার, দেড় যুগ ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারের দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রেতাত্মা এত সহজে তার বিষ-নিঃশ্বাস থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেবে না।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে আমরা মাঝে মাঝেই বর্তমান সরকারকে অসহায় ও বিপর্যস্ত হতে দেখছি। এর অবসান না হলে এদের বেড়াজালে আবদ্ধ সরকার ছোট ছোট বিপর্যয়কে এক সময় মহাবিপদ হিসেবে নিজেদের সামনে দেখতে পাবে। তখন প্রতিকারের পথ হয়ে পড়বে অতি সংকীর্ণ।

তারেক রহমান বলেন, মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বস্তি, জনমনে নিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাত্যহিক নাগরিক সুবিধা দিতে একটি নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, শপথ নেই। গত ১৭ বছর ও বিশেষ করে জুলাই ও আগস্টের যে মানুষগুলো আত্মাহুতি দিয়েছেন, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন, যারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষের আত্মত্যাগ সেদিনই সফল হবে যেদিন মানুষ তার রাজনৈতিকভাবে অধিকার ফিরিয়ে পাবে এবং সেইসাথে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেদিনই তাদের ত্যাগ সফল হবে।

তিনি বলেন, আজ আমাদেরকে সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, সেই শপথ নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যা প্রত্যাশা করে সেটি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে। জীবনে নিরাপত্তা ও কৃষকের নিরাপত্তা, আমাদেরকে সেগুলো ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আবার বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। বিজয় অর্জন করেছি। এখন আমাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যৎকে তুলে ধরতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কাজ আমাদেরকে হাতে নিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগণের দাবি ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। গত ১৬ বছরে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে।

তিনি বলেন, আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে সবাই নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

তারেক রহমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আসুন আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।

তারেক রহমান বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য দেন। ১৬ বছর পর আয়োজিত বিএনপির এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, মুন্সি কামাল আজাদ পাননু প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আন্দোলনে নিহতদের মূল্যায়ন না করলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না : তারেক রহমান

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৪:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি : 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের যথাযথ মূল্যায়ন না করতে পারলে ইতিহাস কখনো আমাদের ক্ষমা করবে না।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুলকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মহাজাগরণ আমাদের সামনে আরেক স্বাধীনতা আর বিজয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। স্বৈরাচার পতনের এই মহাসমরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, জনতা, গৃহিণী, শ্রমিক সবার অবদানকে আমরা যদি মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই কিংবা গত সতের বছর ধরে অবিরাম আন্দোলনে গুম, খুন, মামলা, হামলা আর নির্যাতনে পিষ্ট লাখ লাখ রাজনৈতিক কর্মীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নে অসমর্থ হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। অবশ্যই এই বিষয়গুলো আমাদেরকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গণতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। এই সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি, যেখানে কারো কোনো ভয় নেই। সকলে আমরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলতে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে অন্যের কথা শোনার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র কদিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারত না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীনভাবে বলতে পারতাম না। ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। বহন করতে সক্ষম হবেন না এমন দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে নেয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না, সেটা আমরা সবাই জানি। আর সঙ্গত কারণে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন সেদিনও ছিল আজও আছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরই নিতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোডম্যাপ তাদেরই নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পরিবর্তন সাধন যেমন তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তেমনি এমন দায়িত্বও তাদের কাঁধে নেয়া সঙ্গত হবে না যেটা তারা বহন করতে সক্ষম হবেন না।

তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার দৃশ্যমান প্রয়োগ। সরকার পরিচালনা একটি অতি সংবেদনশীল এবং জটিল কাজ, এখানে সামান্য বিচ্যুতি যেমন বিরাট একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে, তেমনি সামান্য অসতর্কতাও অতি আবশ্যক বিশ্বাসকে করতে পারে দুর্বল। আর আমাদের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ঐক্যতে ধরাতে পারে ফাটল। এর যেকোনো একটিই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। মনে রাখা দরকার, দেড় যুগ ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারের দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রেতাত্মা এত সহজে তার বিষ-নিঃশ্বাস থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেবে না।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে আমরা মাঝে মাঝেই বর্তমান সরকারকে অসহায় ও বিপর্যস্ত হতে দেখছি। এর অবসান না হলে এদের বেড়াজালে আবদ্ধ সরকার ছোট ছোট বিপর্যয়কে এক সময় মহাবিপদ হিসেবে নিজেদের সামনে দেখতে পাবে। তখন প্রতিকারের পথ হয়ে পড়বে অতি সংকীর্ণ।

তারেক রহমান বলেন, মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বস্তি, জনমনে নিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাত্যহিক নাগরিক সুবিধা দিতে একটি নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, শপথ নেই। গত ১৭ বছর ও বিশেষ করে জুলাই ও আগস্টের যে মানুষগুলো আত্মাহুতি দিয়েছেন, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন, যারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষের আত্মত্যাগ সেদিনই সফল হবে যেদিন মানুষ তার রাজনৈতিকভাবে অধিকার ফিরিয়ে পাবে এবং সেইসাথে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেদিনই তাদের ত্যাগ সফল হবে।

তিনি বলেন, আজ আমাদেরকে সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, সেই শপথ নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যা প্রত্যাশা করে সেটি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে। জীবনে নিরাপত্তা ও কৃষকের নিরাপত্তা, আমাদেরকে সেগুলো ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আবার বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। বিজয় অর্জন করেছি। এখন আমাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যৎকে তুলে ধরতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপত্তা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কাজ আমাদেরকে হাতে নিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগণের দাবি ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। গত ১৬ বছরে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে।

তিনি বলেন, আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে সবাই নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

তারেক রহমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আসুন আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।

তারেক রহমান বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য দেন। ১৬ বছর পর আয়োজিত বিএনপির এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, মুন্সি কামাল আজাদ পাননু প্রমুখ।