নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপিসহ তিন জন শিক্ষক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরও পরীক্ষা বর্জন এবং উসকানিমূলক কার্যকলাপের অভিযোগে এই নোটিশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে লিপির নামে শোকজ নোটিশটি পাঠানো হয়। যেটিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল হাসান।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লিপি নিজেই। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল হাসান স্বাক্ষরিত এই নোটিশটি জারি করা হয়।
শোকজপ্রাপ্ত অন্য তিন শিক্ষক নেতা হলেন: বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম এবং প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মো. মাহবুবার রহমান। এদের প্রত্যেককে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে, কেন সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ২০১৮ লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
নোটিশে লিপির উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি সংগঠন ৩ দফা দাবি আদায়ে গত ৭ থেকে ১০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রস্তাবিত দাবিসমূহের আলোকে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর জন্য গত ১০ নভেম্বর অর্থসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ আপনিসহ সহকারী শিক্ষকদের সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন এবং দাবি পূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আশ্বাস দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ফলশ্রুতিতে গৃহীত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।’
‘কিন্তু পরে আপনিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উত্থাপিত দাবি পূরণ করে সরকারকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে উস্কানিমূলক ভিডিও প্রকাশ করতে থাকেন। আপনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দকে ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওর বক্তব্যসমূহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসে।’
‘এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আপনিসহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনায় বসেন এবং জানান যে, সরকার তাদের দাবি পূরণে আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ ধরণের কর্মসূচি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করবে এবং অভিভাবক ও সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মহাপরিচালকের আশ্বাসের পরও আপনার সংগঠনের পক্ষে আপনিসহ অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন এবং তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করেন; যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’
‘সরকারি কর্মচারী হিসেবে এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ২০১৮ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বর্ণিত অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে বলা হলো।’
এর আগে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে খায়রুন নাহার লিপি শাহবাগে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
২০০০ সালের ৪ এপ্রিল সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তিনি কাজে যোগ দেন। তিনি জেলা ও বিভাগে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হন। ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের পদক লাভ করেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্য তিন আহ্বায়ককেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল কাশেম এবং প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুবার রহমান।
শিক্ষক নেতা মো. শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ও তিন দফা দাবির সমর্থনে বুধবার থেকে কর্মসূচি পালন করবেন তারা। একইসঙ্গে শিক্ষকরা উপজেলা বা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) অফিসের সামনে অবস্থান নেবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















