নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের একার পক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য বিষয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইস্কাটনের বিআইআইএসএস মিলনায়তনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এ সংলাপের আয়োজন করে।
উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক এনগেজ করতে হবে। লিডারশিপ এবং এনগেজমেন্ট বাড়াতে হবে। দায়িত্ব এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় ঐক্যমত্য এবং সচেতনতা না থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান সম্ভব। সামনের বছর রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সমস্যাটা অনেক জটিল তাই এটা দ্রুতই সমাধান হবে না। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানটা টেকসই হতে হবে। মায়ানমারে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা থাকতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব ইস্যু সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় সমস্যা। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যোগ করতে হবে। অবশ্য নেগেশিয়েট করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে মায়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে।
আরাকান আর্মির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে জানিয়ে মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, মিয়ানমারে তাদের বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না তবে কেউ গায়ে পড়লে যাতে তার জবাব দিতে পারি তার প্রস্তুতি রাখতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আরাকান আর্মির সাথে রাষ্ট্র হিসেবে সরকার সম্পর্কে রাখতে পারে না। আরাকান আর্মির সাথেও ইনফরমালি সম্পর্ক রাখতে হবে। রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে ওঠা দরকার ছিল। সেটা না থাকায় অপরাধী নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা নেতৃত্বও গড়ে তুলতে হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্যমত্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য না থাকায় রোহিঙ্গা সমস্যা বেড়েছে। রাজনীতিবিদরা যদি জাতীয় এক্য গড়ে তুলতে পারে দেশের যে কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তৌহিদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বিগত সরকারের চুক্তি অকার্যকর ছিল। একটা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভুলে যেতে দেয়া যাবে না যে, রোহিঙ্গা এখনও আছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যেন মিয়ানমারের জন্য লাভজনক হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হবে আর তারা তা না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যেন মিয়ানমারের জন্য লাভজনক হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মিয়ানমার তাদেরকে খুশি মনে মেনে নেয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যাতে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে এ ইস্যুতে আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়রা যাতে অবহেলিত না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।