নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইইউ।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রত্যাশার কথা জানান ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে ৪ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আসছে নির্বাচন আন্তর্জাতিকমানের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রত্যাশা করি। সেপ্টেম্বরে আমাদের বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবে।
মাইকেল মিলার বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ইইউ-এর জন্য অগ্রাধিকার। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সহায়তা করবে ইইউ। গণতন্ত্রের সঙ্গে সবসময়ই আছে ইইউ।
এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে ইইউ। ইইউ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকমানের নির্বাচন দেখতে চায়। এজন্য নির্বাচন বিষয়ক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বাড়াতে নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া নির্বাচনে ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন ও ডিজিটাল সমস্যা নিয়েও কাজ করবে ইইউ।
নির্বাচন কমিশনকে নানা ধরনের সহায়তার বিষয়টিও তুলে ধরেন মাইকেল মিলার। তিনি জানান, ইইউ সরাসরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়া, যেমন কার্যকরী পরিকল্পনা ও বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, আমাদের বাস্তবায়নকারী অংশীদার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ—তারা এখানে থাকবেন, যাতে আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভোটার এডুকেশনও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশ এবং অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
ইইউ-এর এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা; বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে একটি অগ্রাধিকারমূলক দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে মিলার জানান, নির্বাচন প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সবার মনোযোগ রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাজ।
তিনি বলেন, আমরা এখন আলোচনা করছি বাস্তবিক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। আর এজন্যই আমরা এখানে এসেছি আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে। কারণ আমরা চাই আপনাদের নির্বাচন যেন সত্যিই গ্রহণযোগ্য হয়, আন্তর্জাতিক মানের হয়, অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।
এসময় আগামী মাসে ইইউর প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল আসবে বলে জানিয়ে মিলার বলেন, আগামী মাসে প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশে আসবে। এটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন নয়। বরং বিশেষজ্ঞদের কাজ হবে যাচাই করা, যে এখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিনা। আমরা সক্ষমতা ও বাস্তবতা যাচাই করছি।
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছি—ভোটার এডুকেশন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোকে মাঠপর্যায়ে কাজের সক্ষমতা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করা এবং ছোট ছোট নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা। পাশাপাশি ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে ইইউ-এর একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের- ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার ব্রাউন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা বিষয়ক টিম লিডার এনরিকো লোরেনজন, ইউরোপিয়ান পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির (ইপিডি) জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক পরামর্শক মাইকেল লিডাওয়ার, ইপিডির সিটিজেন ইলেকশন অবজারভার্স কম্পোনেন্ট প্রকল্প পরিচালক আনাস উইবাওয়া এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তানজা নাডার।