আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু দেশীয় সংবাদমাধ্যমেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আগ্রহ ও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা পৃথক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে শিরোনামে লিখেছে, ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বিরোধী দলীয় নেতা তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ নেতা ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন।
একইভাবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তার প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে সামনে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে তাঁর দেশে ফেরাকে নির্বাচনী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—খালেদা জিয়ার উত্তরসূরি নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন ১৭ বছর পর।
আরেক প্রতিবেদনে এএফপি জানায়, দেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ৬০ বছর বয়সী তারেক রহমান ২০০৮ সালে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ তুলে দেশ ছেড়ে লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পাকিস্তানের জিও নিউজ সংবাদ শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসিত থাকার পর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরলেন। এতে বলা হয়, তারেক রহমান ২০০৮ সালে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে যান।
পাকিস্তানের আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ডন শিরোনাম করেছে, ‘নির্বাসন শেষে ১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকারী’। আসন্ন নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইট টাইমস লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশের নেতা নির্বাচনের আগে দেশে ফিরেছেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে। খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় আসন্ন নির্বাচনে তারেক রহমানই তার দলের প্রধান মুখ ।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ভারতের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ভারতের জন্য জামায়াতে ইসলামী উদ্বেগের বিষয়।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম এনডিটিভি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর দেশে ফিরেছেন।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী ঘটনা হিসেবে দেখছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই প্রত্যাবর্তন দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছে।
তারেক রহমানের দীর্ঘ প্রবাসজীবনের সূত্রপাত ঘটে ২০০৭ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। সে বছরের জানুয়ারিতে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান তিনি। একই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশে ফেরার পথ আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে একের পর এক মামলার কারণে দীর্ঘদিন দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি তাঁর।
অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন তারেক রহমান—যা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 


















