Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক কোচ হতে চান মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় দাঁড়িয়ে দুজন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসরে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নেই মুশফিকুর রহিম। এ অবস্থায় ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলা ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবতে হচ্ছে তাদের। তবে মাঠে ব্যাট-বলের লড়াই ছাড়লেও ক্রিকেট ছাড়বেন না মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানালেন, দেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার কোচিংকে পরবর্তী ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী। দুই কিংবদন্তির এই লক্ষ্য পূরণে বিসিবির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানালেন বুলবুল।

রোববার (১ জুন) গণমাধ্যমে বুলবুল বলেন, এখানে বলা উচিত কিনা জানি না। আমি বিসিবিতে জয়েন করার আগেই আমার সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ যোগাযোগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক কোচ হতে চায়। এই ট্রেনিং এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো আমরা ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে রান করব ইনশাল্লাহ। যা তাদের মতো আগ্রহীদের জন্য সহায়ক হবে।

এমনিতে ক্রিকেটারদের কোচিংয়ে আসা নতুন নয় বাংলাদেশে। এর আগেও অনেক সাবেক ক্রিকেটার কোচিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। খালেদ মাহমুদ সুজন ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সফল কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। হান্নান সরকার ডিপিএলে আবাহনীর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। মোহাম্মদ আশরাফুল রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচ হিসেবে জিতেছেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ শিরোপা। এই ধারাবাহিকতায় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর কোচিংয়ে আসা শুধু ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় নয়, বরং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্যও বড় সম্ভাবনার বার্তা।

এর আগে আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে বুলবুল। সভা শেষে বিসিবি সভাপতি জানান, ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণ এবং ঘরোয়া পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দেশীয় কোচ তৈরির প্রক্রিয়া বিসিবির অন্যতম অগ্রাধিকার।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা চাইছি, দেশের প্রতিটি স্তর থেকেই প্রতিভাবান খেলোয়াড় এবং কোচ উঠে আসুক। সরকারের সহযোগিতায় ফ্যাসিলিটি ডেভেলপমেন্ট ও কোচিং ট্রেইনিং প্রোগ্রাম চালু করা হবে, যাতে খেলোয়াড়েরা খেলা ছাড়ার পরও অবদান রাখতে পারেন।’

বুলবুল আরও বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও উপদেষ্টা মহোদয়কে। সম্মানিত উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের ডেকেছেন এখানে। তার যে উদার চিন্তাভাবনা আমাকে অভিভূত করেছে কয়েকটি কারণে। আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং তার মতের সঙ্গে আমরা ১০০ শতাংশ একমত। ফ্যাসিলিটি ডেভলপমেন্টের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোকে নিয়ে যে ইভেন্টগুলো চালু করতে বলেছেন তিনি। এটা আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা একটা চার্টার তৈরি করেছি সেটার সঙ্গে ১০০ ভাগ মিলে গিয়েছে।’

বিসিবির নতুন সভাপতি জানালেন, সবার আগে ক্রিকেট প্রাধান্য পাবে। বলেন, ‘ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমরা চাইছি গ্রামের একটা ছেলে যেন ভালো খেলে উপজেলায় আসতে পারে। উপজেলা থেকে জেলায়, জেলা থেকে বিভাগে এবং বিভাগীয় পর্যায় থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ে আসতে পারে। সেই রাস্তাটা পরিষ্কার করছি। আমরা স্কুল ক্রিকেটকে নতুন করে সাজাব, তখন অটোমেটিক জাতীয় দলের পারফরম্যান্সও ভালো হবে।’

সব কিছু ছাপিয়ে বুলবুলের পরিচয় এখন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে কাছে পেয়ে সাংবাদিকরা অনেক প্রশ্নই করেছেন। বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর বুলবুল বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ।’ এই প্রক্রিয়া বা ধারণার ব্যাখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার তিনটি কাজ। শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশে শতভাগ রিচ করব, আমাদের ট্রাস্ট থাকবে, আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে। এই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে।’

‘আমরা স্পিরিট অব ক্রিকেট আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স। শুধু ক্রিকেটার নয়, যারা কর্মকর্তা আছে, তাদের কাজও যেন হাই পারফর্মিং হয়। আর তিন নম্বর হচ্ছে, সারা দেশব্যাপী কানেক্ট করব। ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা হয়নি। আমরা যেভাবে হোক, বুরোক্রেটিক হয়ে হোক, এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এর আগেও আমরা শুধুমাত্র ক্রিকেট নিয়ে দেশের সব জায়গায় আঞ্চলিক সংস্থার মতো করে ছড়িয়ে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। আইসিসির কাছে এটা আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি ছিল। এখন এটা আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। অবশ্যই ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও এর সঙ্গে আছে।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার রূপরেখা ও কার্যকরিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করি যে, ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল বানানো হয়। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। এটা হচ্ছে আল্টিমেট। তবে তৃণমূল ক্রিকেটে যেন গ্রামের একটা ছেলে ক্রিকেট খেলতে পারে। এরপর সে উপজেলা, জেলায় খেলতে পারে। পরে ক্রমান্বয়ে যেন জাতীয় দলে আসতে পারে। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করব। আমরা রিজিওনগুলোকে কিন্তু বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেবো না। তাদেরকে পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, সুবিধাদি, কোচ, আম্পায়ারদের সংখ্যা মিলিয়ে অর্জন করে নিতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে তারা যেভাবে কাজ করবে, সেভাবে তাদের ফান্ডিং দেওয়া হবে। এই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম আক্ষেপ। নানা কারণে আলোর মুখ দেখে না। আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হলে বিসিবি কর্তাদের ক্ষমতাও খানিকটা খর্ব হওয়ার শঙ্কা থাকে। বুলবুল সেই বাধা অতিক্রম করতে চান, ‘যেহেতু এটা আমাদের একটা আবশ্যিক চাহিদা। এটা পূরণের জন্য যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নেবো। এটা সকলের সমর্থন নিয়েই করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা যদি আসে, প্রথমে আমরা হয়তো শুধু ক্রিকেটটা নিয়ে পৌঁছাব। এরপর রিজিওনাল সেন্টারটা করব। এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কানেক্ট এন্ড গ্রো-এর যে প্রোগ্রাম আছে, আমরা ক্রিকেট নিয়ে তৃণমূলে পৌঁছাব।’

ক্রিকেট বোর্ডে আকরাম খান, নান্নু, সুমনদের মতো সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা রয়েছেন। তাদের মেধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করতে চান নতুন সভাপতি, ‘নান্নু ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আকরাম ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। লিপু ভাই, হাবিবুল বাশার… তারা তো একেকজন কিংবদন্তি। তারা সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ। তারা মাঠের চরিত্র, উইকেটের চরিত্র, ড্রেসিং রুমের চরিত্র- সব জানেন। এই ধরনের সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের আমাদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। তবে এটা ঠিক যে একজন খেলোয়াড় সরাসরি ভালো এডমিনিস্ট্রেটর হয় না বা ভালো কোচ হয় না। সেই ব্যবস্থাগুলো করব।’

বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত। সেই হিসেবে আর মাত্র তিনেকের বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে নতু সভাপতির মন্তব্য, ‘আমরা যে কাজগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু এখনও ৪৮ ঘণ্টা হয়নি। আমরা একটু জেনে এটা নিয়ে বলতে পারব।’

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

আন্তর্জাতিক কোচ হতে চান মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক

প্রকাশের সময় : ০৭:০৯:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় দাঁড়িয়ে দুজন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসরে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নেই মুশফিকুর রহিম। এ অবস্থায় ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলা ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবতে হচ্ছে তাদের। তবে মাঠে ব্যাট-বলের লড়াই ছাড়লেও ক্রিকেট ছাড়বেন না মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানালেন, দেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার কোচিংকে পরবর্তী ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী। দুই কিংবদন্তির এই লক্ষ্য পূরণে বিসিবির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানালেন বুলবুল।

রোববার (১ জুন) গণমাধ্যমে বুলবুল বলেন, এখানে বলা উচিত কিনা জানি না। আমি বিসিবিতে জয়েন করার আগেই আমার সঙ্গে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ যোগাযোগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক কোচ হতে চায়। এই ট্রেনিং এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো আমরা ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে রান করব ইনশাল্লাহ। যা তাদের মতো আগ্রহীদের জন্য সহায়ক হবে।

এমনিতে ক্রিকেটারদের কোচিংয়ে আসা নতুন নয় বাংলাদেশে। এর আগেও অনেক সাবেক ক্রিকেটার কোচিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। খালেদ মাহমুদ সুজন ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সফল কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। হান্নান সরকার ডিপিএলে আবাহনীর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। মোহাম্মদ আশরাফুল রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচ হিসেবে জিতেছেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ শিরোপা। এই ধারাবাহিকতায় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর কোচিংয়ে আসা শুধু ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় নয়, বরং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্যও বড় সম্ভাবনার বার্তা।

এর আগে আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে বুলবুল। সভা শেষে বিসিবি সভাপতি জানান, ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণ এবং ঘরোয়া পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দেশীয় কোচ তৈরির প্রক্রিয়া বিসিবির অন্যতম অগ্রাধিকার।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা চাইছি, দেশের প্রতিটি স্তর থেকেই প্রতিভাবান খেলোয়াড় এবং কোচ উঠে আসুক। সরকারের সহযোগিতায় ফ্যাসিলিটি ডেভেলপমেন্ট ও কোচিং ট্রেইনিং প্রোগ্রাম চালু করা হবে, যাতে খেলোয়াড়েরা খেলা ছাড়ার পরও অবদান রাখতে পারেন।’

বুলবুল আরও বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও উপদেষ্টা মহোদয়কে। সম্মানিত উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের ডেকেছেন এখানে। তার যে উদার চিন্তাভাবনা আমাকে অভিভূত করেছে কয়েকটি কারণে। আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং তার মতের সঙ্গে আমরা ১০০ শতাংশ একমত। ফ্যাসিলিটি ডেভলপমেন্টের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোকে নিয়ে যে ইভেন্টগুলো চালু করতে বলেছেন তিনি। এটা আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা একটা চার্টার তৈরি করেছি সেটার সঙ্গে ১০০ ভাগ মিলে গিয়েছে।’

বিসিবির নতুন সভাপতি জানালেন, সবার আগে ক্রিকেট প্রাধান্য পাবে। বলেন, ‘ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমরা চাইছি গ্রামের একটা ছেলে যেন ভালো খেলে উপজেলায় আসতে পারে। উপজেলা থেকে জেলায়, জেলা থেকে বিভাগে এবং বিভাগীয় পর্যায় থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ে আসতে পারে। সেই রাস্তাটা পরিষ্কার করছি। আমরা স্কুল ক্রিকেটকে নতুন করে সাজাব, তখন অটোমেটিক জাতীয় দলের পারফরম্যান্সও ভালো হবে।’

সব কিছু ছাপিয়ে বুলবুলের পরিচয় এখন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে কাছে পেয়ে সাংবাদিকরা অনেক প্রশ্নই করেছেন। বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর বুলবুল বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ।’ এই প্রক্রিয়া বা ধারণার ব্যাখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার তিনটি কাজ। শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশে শতভাগ রিচ করব, আমাদের ট্রাস্ট থাকবে, আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে। এই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে।’

‘আমরা স্পিরিট অব ক্রিকেট আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স। শুধু ক্রিকেটার নয়, যারা কর্মকর্তা আছে, তাদের কাজও যেন হাই পারফর্মিং হয়। আর তিন নম্বর হচ্ছে, সারা দেশব্যাপী কানেক্ট করব। ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা হয়নি। আমরা যেভাবে হোক, বুরোক্রেটিক হয়ে হোক, এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এর আগেও আমরা শুধুমাত্র ক্রিকেট নিয়ে দেশের সব জায়গায় আঞ্চলিক সংস্থার মতো করে ছড়িয়ে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। আইসিসির কাছে এটা আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি ছিল। এখন এটা আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। অবশ্যই ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও এর সঙ্গে আছে।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার রূপরেখা ও কার্যকরিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করি যে, ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল বানানো হয়। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। এটা হচ্ছে আল্টিমেট। তবে তৃণমূল ক্রিকেটে যেন গ্রামের একটা ছেলে ক্রিকেট খেলতে পারে। এরপর সে উপজেলা, জেলায় খেলতে পারে। পরে ক্রমান্বয়ে যেন জাতীয় দলে আসতে পারে। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করব। আমরা রিজিওনগুলোকে কিন্তু বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেবো না। তাদেরকে পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, সুবিধাদি, কোচ, আম্পায়ারদের সংখ্যা মিলিয়ে অর্জন করে নিতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে তারা যেভাবে কাজ করবে, সেভাবে তাদের ফান্ডিং দেওয়া হবে। এই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি।’

আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম আক্ষেপ। নানা কারণে আলোর মুখ দেখে না। আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হলে বিসিবি কর্তাদের ক্ষমতাও খানিকটা খর্ব হওয়ার শঙ্কা থাকে। বুলবুল সেই বাধা অতিক্রম করতে চান, ‘যেহেতু এটা আমাদের একটা আবশ্যিক চাহিদা। এটা পূরণের জন্য যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নেবো। এটা সকলের সমর্থন নিয়েই করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা যদি আসে, প্রথমে আমরা হয়তো শুধু ক্রিকেটটা নিয়ে পৌঁছাব। এরপর রিজিওনাল সেন্টারটা করব। এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কানেক্ট এন্ড গ্রো-এর যে প্রোগ্রাম আছে, আমরা ক্রিকেট নিয়ে তৃণমূলে পৌঁছাব।’

ক্রিকেট বোর্ডে আকরাম খান, নান্নু, সুমনদের মতো সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা রয়েছেন। তাদের মেধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করতে চান নতুন সভাপতি, ‘নান্নু ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আকরাম ভাই, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। লিপু ভাই, হাবিবুল বাশার… তারা তো একেকজন কিংবদন্তি। তারা সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ। তারা মাঠের চরিত্র, উইকেটের চরিত্র, ড্রেসিং রুমের চরিত্র- সব জানেন। এই ধরনের সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের আমাদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। তবে এটা ঠিক যে একজন খেলোয়াড় সরাসরি ভালো এডমিনিস্ট্রেটর হয় না বা ভালো কোচ হয় না। সেই ব্যবস্থাগুলো করব।’

বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত। সেই হিসেবে আর মাত্র তিনেকের বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে নতু সভাপতির মন্তব্য, ‘আমরা যে কাজগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু এখনও ৪৮ ঘণ্টা হয়নি। আমরা একটু জেনে এটা নিয়ে বলতে পারব।’