নিজস্ব প্রতিবেদক :
আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।একইসঙ্গে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের (৪০) বিষয়ে দুই মাসের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে শেখ হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অ্যামিক্যাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা।
‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি অডিওর বক্তব্য শেখ হাসিনার উল্লেখ করে তিনিসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন। পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু দুই আসামি হাজির হননি। এরপর অ্যামিকাস কিউরি এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১(৪) ধারা অনুসারে আদালত অবমাননা বা বিচার কাজে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়ে আবেদন করি। এরপর আদালত শোকজ দেন। কিন্তু তারা হাজির হননি । এরপর দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় আদালতের আদেশে। তারপর আদালত স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করেন। এর বাইরে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন। আজকে চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখেছে অডিও ঠিক আছে। এটা কোনো এআই দিয়ে তৈরি নয়। এ কনভারসেশেনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার মামলার বাদী, সাক্ষী ,তদন্ত সংস্থা অর্থাৎ যারাই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদেরকে হত্যা করা, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, নানানভাবে তাদের হুমকি দিয়েছেন। যেটা আইন অনুসারে অপরাধ। এটা প্রমাণিত হওয়ায় শেখ হাসিনা এবং শাকিলকে দণ্ডিত করেছেন। শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং শাকিলকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা গ্রেফতার হবেন সেদিন থেকে এটা কার্যকর হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, অ্যামিকাস কিউরি বলেছেন- এটা (যে অপরাধ হয়েছে) বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল। তাই এটা অবমাননা হয়েছে বলে পজিটিভ মতামত দিয়েছেন।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, আমি রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি। আদালত সবার বক্তব্য শুনে রায় দিয়েছেন। বিস্তারিত রায় দেখে পরবর্তীতে কী করবো সেটা পরে দেখা যাবে।